MD SALIM RALLY IN KANCHRAPARA

নকল বিরোধিতায় বিভ্রান্ত না হয়ে জীবন যন্ত্রণার ইস্যুতে সরব হতে হবে; কাঁচরাপাড়ায় মহম্মদ সেলিম

রাজ্য জেলা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP কাচড়াপাড়ার জনসভায় মহম্মদ সেলিম

আম্বানি-আদানির এক হাত মোদী, অন্য হাত ধরেছেন মমতা ব্যানার্জি। এই দুটো দলই কর্পোরেটদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। এই দুটো দলের মধ্যে নকল বিরোধিতা সাজিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত না হয়ে আসল ইস্যুতে, মানুষের জীবন যন্ত্রণার প্রশ্নে আরও সোচ্চার হতে বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 


কাচড়াপাড়ার কলেজ মোড়ে প্রবাহ সংলগ্ন ময়দানে প্রয়াত পার্টি নেতা সুবোধ রায়, কমরেড অমূল্য উকিল, কমরেড জগদীশ দাস, কমরেড বাবলু রক্ষিত, কমরেড বৃন্দাবন দাস, কমরেড সুশীল ঘোষাল চৌধুরির স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই স্মরণসভাতেই মহম্মদ সেলিম বলেন, তৃণমূল আসলে একটা টেম্পোরারি পার্টি, কেউ স্থায়ী নয়। মুকুল রায়, অর্জুন সিংদের দেখুন। কখন কোন দলে এরা থাকবে কেউ জানে না।

তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে নকল বিরোধী সাজানোকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন এরাজ্যে বিজেপি-কে বাড়তে সাহায্য করেছে মমতা ব্যানার্জি। বামফ্রন্টের সরকার থাকাকালীন এই রাজ্যে বিজেপি মাথা তুলতে পারেনি। এখন এত বিজেপি এল কোথা থেকে? রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কে? এই শুভেন্দু অধিকারী তো তৃণমূলে থাকাকালীন মানুষের প্রাণ কেড়েছিলেন, যাবতীয় দুর্নীতিতে হাত পাকিয়েছিলেন। মমতা ব্যানার্জির জন্য টাকা জোগাড় করতেন। কংগ্রেস ভাঙিয়ে তৃণমূলে নেতা নিয়ে এসেছিলেন। একটা কোম্পানির শোরুমের আরেকটা কোম্পানির মাল বিক্রি হচ্ছে। আরএসএস-তৃণমূলের শোরুমে বিজেপি’র প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে। 


এই স্মরণসভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য গার্গী চ্যাটার্জি, সত্যসেবী কর, দেবাশিস রক্ষিত প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টিনেতা কল্যাণ মুখার্জি।


মহম্মদ সেলিম বলেন, দেশ ও রাজ্যে দুটো সরকারই দেশবিরোধী ও জনবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে। মোদী সরকারের শাসনে দেশের কর্পোরেটদের সম্পদ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সম্পদ বেঁচে দিচ্ছে। এই সরকার মানুষের স্বার্থে কোনও কাজ করছে না। শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যকে ভাঙতে চাইছে এই বিভাজনের শক্তি। বিজেপি’র চালিকাশক্তি আরএসএস। মমতা ব্যানার্জি তো  আরএসএস’র ঘোষিত দুর্গা। বেকারি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। দুটো দলই নাগপুরের কথায় চলে। দুই সরকার নীরব কর্মসংস্থানের প্রশ্ন। এরাজ্যে গত এক দশকে একটি কারখানাও হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কাঁচড়াপাড়ার রেল কারখানার ঘোষণা, কী হয়েছে? যুবসমাজ কাজ চায়। রুটি রুজির লড়াই থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে জাতপাতের রাজনীতি সামনে আনা হচ্ছে। বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। রাজ্যে মমতা ব্যানার্জিও একই পথে চলছে। 


এদিনই রাজ্যের টেট পরীক্ষা ছিল। এর আগে তিনটি টেটেই দুর্নীতি। সেই বেনজির নিয়োগ নিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, চিট ফান্ড, নারদ ঘুষকাণ্ডের দুর্নীতির মত নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত ম্যানেজ করে বাঁচার চেষ্টা করছে তৃণমূল। তৃণমূল চাকরি বিক্রির কারখানা করেছে। অযোগ্যরা টাকা দিয়ে চাকরি কিনেছে। যোগ্য প্রার্থীরা চাকরির দাবি নিয়ে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। একটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর শেষ আমরা দেখবো। এই ভয়াবহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বামপন্থীরা মানুষকে নিয়ে রাস্তায়, আন্দোলনে।


তিনি বলেন বামপন্থীরা মানুষের দাবি আদায়ের লড়াইয়ের জন্যই মানুষকে সমবেত করছে জেলায় জেলায়। সাড়াও মিলছে। ওদিকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল ও বিজেপি বোমা,বন্দুক, ত্রিশুল জড়ো করছে। মুখ্যমন্ত্রী এই রাজ্যে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধারের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হয়ে গেলেও এখনও বোমা ও বন্দুকের রমরমা দেখা যাচ্ছে। প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ শিশু থেকে কিশোরের। দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এই বাংলা। বোমা ও বারুদের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই রাজ্য। মহিলারাও এই রাজ্যে নিরাপদে ঘুরতে পারে না। দুষ্কৃতীদের যত্রতত্র রেখে দেওয়া বোমায় নিরীহ শিশুর প্রাণ যাচ্ছে। অপরাধীরা তৃণমূলের ছত্রছায়ায় লালিতপালিত হয়। তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে এই রাজ্যের পুলিশ।


সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমিত দে বলেন, পৌরসভার পৌরপ্রধানকে সিবিআই’র হেপাজতে থাকতে হয়েছে। তাদের সম্পত্তির বহর বেড়েছে। কাচড়াপাড়ার মানুষ আয়ারাম গয়ারামের খেলা দেখেছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। তৃণমূল লুটের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। 

সিপিআই(এম) উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন শোষণ, বঞ্চনা, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই প্রয়াত কমরেডরা লড়াই আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করছে। এরা মানুষের ঐক্যকে ভাঙতে চাইছে। এই রাজ্যে তৃণমূলের শাসনে এই রাজ্যে লুট হচ্ছে। এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার সময় এখন, সেই কাজই চলছে।


এদিন সাহিত্যিক সমরেশ বসুর জন্মদিন ছিল। নৈহাটিতে তাঁর বাড়িতে গিয়ে সাহিত্যিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মহম্মদ সেলিম।

 

Comments :0

Login to leave a comment