নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় গুজরাটে সরকারি মদতে যে নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তথা ভয়াবহ মুসলিম গণহত্যা কাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল তার অভিযুক্তরা যেভাবে একে একে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল অনেকটা তেমনভাবেই নির্ভীক-নিরপেক্ষ সাংবাদিক এবং প্রতিবাদী সমাজকর্মী গৌরী লঙ্কেশের খুনিরাও ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত অপরাধের মামলার বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ আদালত সর্বশেষ আরও দুই গুরুতর অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দিয়ে দিয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে আসার পরদিনই সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি রীতিমতো মঞ্চ বেঁধে জয়ধ্বনি দিয়ে বীরের সংবর্ধনা দিয়েছে অভিযুক্ত খুনিদের। গেরুয়া শাল এবং ফুলের মালাও পরানো হয়েছে গৌরী লঙ্কেশের খুনিদের। আর এই কাজের জন্য শ্রীরাম সেনা সহ উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির কর্মকর্তার রীতিমতো গর্ববোধ করছেন।
কুসংস্কারমুক্ত যুক্তিবাদী আন্দোলনের নেতা মহারাষ্ট্রের নরেন্দ্র দাভোলকর, গোবিন্দ পানসারে এবং কর্নাটকের এম এম কালবুর্গির মতো গৌরী লঙ্কেশও খুন হয়েছিলেন উগ্র হিন্দুবাদী খুনে বাহিনীর হাতে। এই সব অন্ধবিশ্বাসী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির প্রধান লক্ষ্য সমাজের স্পষ্ট বক্তা বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিবাদী মানুষ। যারা সমাজকে অন্ধ কুসংস্কার থেকে বের করে যুক্তি ও ন্যায়ের আলো দেখাতে বদ্ধপরিকর তাদের তালিকা তৈরি করে খুন করাই এদের প্রধান কাজ। ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কারের বদ্ধজলায় মানুষকে যত বেশি আটকে রাখা যাবে তত বেশি লাভ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির। তাই এমন উগ্র ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে মদত দেয় ও উৎসাহ জোগায় রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদীরা।
গৌরী লঙ্কেশ ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ও নির্ভীক সাংবাদিক। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে তাঁর শক্তিশালী কলম সর্বদা গর্জে উঠত। তাই তাকে নিকেশ করার ছক কষে ফেলে শ্রীরাম সেনা সহ কয়েকটি গেরুয়া সংগঠন। ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুতে নিজের বাড়ির দরজায় সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়। মোটরবাইকে এসে দু’জনে তাঁকে খুন করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় গোটা দেশ তোলপাড় হয়। কর্নাটকে এবং মহারাষ্ট্রে তখন বিজেপি সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে তদন্তের জন্য সিট গঠন হয়। ১৭ জনকে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে একে একে সব অভিযুক্তরাই জামিনে মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ১২ জন ছাড়া পেয়ে গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে মূল মাস্টারমাইন্ড, যে গুলি চালিয়ে খুন করেছে, যে গুলি চালনার প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং যে এই পরিকল্পনা রূপায়ণের কর্মী সংগ্রহ করেছে সকলে। গুরুতর অভিযোগ আছে তৎকালীন বিজেপি সরকার তদন্তে সহযোগিতা করেনি। ফলে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা যেমন সম্ভব হয়নি তেমনি সিটও কাজ করেছে সরকারি মনোভাব অনুযায়ী। তাই খুনিরা সকলেই একে একে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় খুনিদের সাজা বা ন্যায়বিচার নিয়ে গুরুতর প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
Gouri Lankesh Hindutwa
হিন্দুত্ববাদী খুনিরা সংর্বধিত
×
Comments :0