Gujarat police in tripura election

ত্রিপুরায় ভোট করাতে আসাম, গুজরাটের পুলিশ

জাতীয়

ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী কমিয়ে পাঠানো হচ্ছে গুজরাট, আসামের রাজ্য পুলিশকে। কেন, এই প্রশ্ন উঠেছে। ত্রিপুরায় নির্বাচন ১৬ ফেব্রুয়ারি। তার আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগও তৈরি হচ্ছে। 
রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছিল নির্বাচন কমিশন। দেখা যাচ্ছে, তাদের বদলে বিজেপি-শাসিত রাজ্য থেকে রাজ্য পুলিশ নিয়ে আসা হচ্ছে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে সরিয়ে আসাম পুলিশ, গুজরাট পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। ঘটনাটি অস্বাভাবিক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দেশজুড়ে সাধারণ নির্বাচন হলে অনেক সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা যথেষ্ট হয় না। তখন কোনও কোনও রাজ্য থেকে রাজ্য পুলিশ চেয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এবারে ১৬ ফেব্রুয়ারি শুধুই ত্রিপুরায় নির্বাচন। মেঘালয়, নাগাল্যান্ডে ভোটগ্রহণ ২৭ ফেব্রুয়ারি। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বদলে রাজ্য পুলিশ পাঠানো হচ্ছে কেন, এই প্রশ্ন উঠেছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ত্রিপুরায় বিজেপি’র দায়িত্বে। তিনি ত্রিপুরাতেই ঘাঁটি গেড়ে বসে আছেন। এই অবস্থায় আসাম পুলিশকে ত্রিপুরায় পাঠানোর পিছনে বড় কোনও পরিকল্পনা কাজ করছে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। একই ভাবে পশ্চিমের রাজ্য গুজরাট থেকে পুলিশ মোতায়েন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যেই আনা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 
সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও শুক্রবার আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রশ্ন তুলেছেন। ইয়েচুরি সতর্ক করেছেন, নির্বাচনের আগের তিন দিন ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি করা হতে পারে। রাজ্যে বিজেপি’র বিরুদ্ধে জনগণের যে মনোভাব তৈরি হয়েছে তা থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই। 
এদিন ভারতের নির্বাচন কমিশনকে সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েও এই প্রশ্নে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ত্রিপুরায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে বলে কমিশন আশ্বস্ত করেছিল। ১৯ জানুয়ারি কমিশনের সঙ্গে বৈঠকেই এই আশ্বাস পুনরায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি ঘটনা উদ্বেগ তৈরি করছে। অস্বাভাবিক ভাবে আসাম, গুজরাট থেকে রাজ্য পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। উত্তর পূর্বের ছোট রাজ্য ত্রিপুরায় গুজরাটের পুলিশ পাঠানো রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার ঘটনা বলেই চিহ্নিত হবে। সিপিআই (এম) দাবি করেছে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই নির্বাচন করতে হবে। 
আরেকটি বিষয়ের প্রতিও এদিন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। রাজ্যের নির্বাচনকর্মীরা পোস্টাল ব্যালটের জন্য ব্যালট পেতে হয়রান হচ্ছে। অধিকাংশ মহকুমায় নির্বাচনী দপ্তরে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোনও কোনও জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ব্যালট পাননি নির্বাচনকর্মীরা। তাঁরা ফিরে যেতেও বাধ্য হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘ অপেক্ষার পরে যখন নির্বাচনকর্মীরা ভোট দেবার কাউন্টারে পৌঁছেছেন তখন বলা হয়েছে তাঁদের ব্যালট আসেনি। কোনও কোনও কেন্দ্রে ব্যালটের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নির্বাচনী কেন্দ্রের মাইক্রো অবজার্ভারদের ভোট দিতে হলে তখনই নিজেদের মহকুমায় ফিরে যেতে বলা হয়েছে। সিপিআই(এম)’র ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি আশঙ্কা করেছেন, বিপুল পরিমাণ নির্বাচনকর্মীদের ভোটাধিকারে বঞ্চিত করে ভেতর থেকে একটি প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। 
এদিন নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে সিপিআই(এম) দিল্লি রাজ্য কমিটি ত্রিপুরায় অবাধ ও ভয়মুক্ত পরিবেশে নির্বাচনের দাবিতে ধরনা সংগঠিত করেন। ধরনায় সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত বলেন, ত্রিপুরায় বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সংবিধান, সংসদীয় ব্যবস্থা, গণতন্ত্র থাকবে কিনা। গত পাঁচ বছরে বিজেপি শাসনে ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্রের ওপরে আক্রমণ হয়েছে। পাঁচ বছরে সব নির্বাচনেই ব্যাপক রিগিং হয়েছে। বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের ওপরে আক্রমণ হয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে দেওয়া হয়নি। গত পাঁচ বছরে বামপন্থী দলগুলির ৬৬৭টি অফিস, গণ সংগঠনগুলির ২০৪টি অফিসে ভাঙচুর করা হয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছে। সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকদের ৩৩৬৩টি বাড়ি ও ৬৫৯ দোকান হয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বা লুট করা হয়েছে। 
কারাত বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করানোর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। গ্রাম, শহর এবং দুর্গম এলাকায় যে ভোটাররা আছেন তাঁদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন। 
ধরনায় প্রবীণ নেতা হান্নান মোল্লা, ডিওয়াইএফআই সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, সিপিআই(এম) দিল্লি রাজ্য কমিটির সম্পাদক কে এম তিওয়ারি, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আশা শর্মা, সুবীর ব্যানার্জি ভাষণ দেন।

Comments :0

Login to leave a comment