KOLKATA CORPORTAION HAWKER

হকার উচ্ছেদ আড়ালে সেই ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব কলকাতার মেয়রের

কলকাতা

বহিরাগত তত্ত্ব নাকচ করছে হকার আন্দোলন।

মনোজ আচার্য

কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বেআইনি নির্মান নিয়ে নিশ্চুপ, কিন্তু  গরিব হকারদের রুজিরুটি কাড়ার প্রশ্নে এত তৎপর কেন তৃণমূল প্রশাসন? উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পরিবারগুলিতে যে আর্থিক অনটন নেমে এসেছে তার জন্য সরকার ও কলকাতা কর্পোরেশনের ভাবনা কী? 
হকার উচ্ছেদ ঘিরে বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের তোলা এই প্রশ্নগুলিকে ঘিরে শুক্রবার উত্তাল হয়ে ওঠে কলকাতা কর্পোরেশনের মাসিক অধিবেশন। এদিন কলকাতার মেয়রও ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব হাজির করে উচ্ছেদের পক্ষে যুক্তি সাজিয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। 
এদিন বিরোধী কাউন্সিলররা বলেন, এভাবে গরিব মানুষের রুজিরুটি কেড়ে নেওয়া যায় না। এটা বেআইনি। বিরোধীদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম দাবি করেন কলকাতায় নাকি কোথাও হকার উচ্ছেদ হয়নি। মুখ্যদমন্ত্রীও নাকি হকার উচ্ছেদ চান না। মেয়র আরও বলেন, বহু বহিরাগত, ভিন রাজ্যেির মানুষ, সরকারি জায়গা দখল করে রয়েছে। সেসব সরানো হচ্ছে।
মেয়রের এই মন্তব্যর পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অধিবেশন কক্ষ। বিরোধীদের অভিযোগ, মেয়রের কথার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। উল্লেখ্য, লোকসভা ভোট মিটতেই বেআইনি দখলদার মুক্ত করার নামে মুখ্যরমন্ত্রীর নির্দেশে মহানগর সহ রাজ্যে র বিভিন্ন প্রান্তে বুলডোজার দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের আর্থিক সংস্থানকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে র বিভিন্ন প্রান্তে জীবিকা হারানো হকাররা তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেছেন। 
বৃহস্পতিবার কলকাতা কর্পোরেশনের পাশেই কয়েক হাজার হকার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এরপরেও মেয়রের উচ্ছেদ হয়নি দাবি এদিন ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। 
কলকাতা কর্পোরেশনের সামনে হকার বিক্ষোভে হকার যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক এবং সিআইটিইউ নেতা অসিতাঙ্গ গাঙ্গুলি উচ্ছেদকে বেআইনি বলেন। তিনি বলেন যে লোকসভা নির্বাচনে শহর এলাকায় ফল ভালো হয়নি তৃণমূলের, সেই খামতি মেরামত করতে হকার উচ্ছেদের রাস্তা নেওয়া হয়েছে। হকারদের মধ্যে বহিরাগত বলে বিভাজন করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু হকাররা এই বিভাজন মেনে নেবেন না। এদিন রাজ্যের পৌরমন্ত্রী এবং কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঠিক মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই এই বিভাজনের চেষ্টা করেছেন।
কর্পোরেশনে বামপন্থীরা সহ বিরোধী কাউন্সিলররা অভিযোগ করেন, এই উচ্ছেদ নিয়েও বিভাজনের রাজনীতি করা হয়েছে। হকারদের মধ্যেজ বিভাজন তৈরি করে তৃণমূল রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। 
প্রসঙ্গত, হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে দিকে দিকে বিক্ষোভের জেরে একমাসের সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। মুখ্যকমন্ত্রীর নির্দেশে একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে সমীক্ষার জন্য। কিন্তু, এই সমীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় হকার আইনে যে টাউন ভেন্ডিং কমিটি  গঠনের নিদান রয়েছে, তা না করে মমতা ব্যা নার্জির সরকার ২০১৮ সালে নিজেদের মর্জিমাফিক একটি কমিটি তৈরি করেন। হকার আন্দোলন জানিয়েছে, ২০১৪’র কেন্দ্রীয় আইনকে মানতেই নারাজ রাজ্যের তৃণমূল সরকার। রাজ্যেরর মর্জিমাফিক সেই ভেন্ডিং কমিটিতে হকার কিংবা হকার সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের না রেখে তৃণমূলের নেতা, বিধায়ক থেকে শাসকদল ঘনিষ্ঠদের রাখা হয়েছে। 
নতুন কমিটি না আগের কমিটি কাজ করবে কোনটি? এদিন তৃণমূলের পৌর প্রতিনিধি বিশ্বরুপ দে-ই এই প্রশ্ন তোলেন। মেয়র জানিয়েছেন, দু’টি কমিটিই একযোগে কাজ করবে। আইন অনুযায়ী তা করা যায় কিনা এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি মেয়র। 
এদিন বিরোধীরা বলেছেন, বেআইনি নির্মাণ কাণ্ডে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের বিরুদ্ধে বেআইনি নির্মাণে মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সেই বিষয়ে ব্যুবস্থা নিতে সক্রিয় হতে দেখা যায় না কর্পোরেশনকে। অথচ প্রান্তিক মানুষের  জীবীকার সংস্থানকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্বিচারে। মেয়র যদিও এদিন বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কড়া অবস্থানের আশ্বাস দিয়েছেন। বাস্তবে কাজে নেমে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের।

Comments :0

Login to leave a comment