অনিন্দিতা দত্ত, শিলিগুড়ি
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা, অপদার্থতা, দুর্নীতির কারনে বানভাসি মানুষ। মালদা ও মুর্শিদাবাদে বিস্তীর্ন এলাকা নদীভাঙনের মুখে। দুই সরকার চুপ। ভূতনীর চরে মানুষের বাড়ি ঘরে জল ঢুকে পড়েছে। জমি, গ্রাম রাস্তাঘাট, খেত, মন্দির-মসজিদ সব গঙ্গা ভাঙনের মুখে। কেন্দ্র রাজ্যকে টাকা দিচ্ছে না, আর রাজ্য সরকারের বরাদ্দ টাকা ভাঙন রোধের পরিবর্তে লুট হয়ে যাচ্ছে। গঙ্গা নদী বাঁচাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শুক্রবার শিলিগুড়িতে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সভায় যোগ দিতে এসে এদিন দার্জিলিঙ জেলা সিপিআই(এম)’র জেলা পার্টি অফিস অনিল বিশ্বাস ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি বলেন, "গরিব মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই তীব্র করার পাশাপাশি নদী বাঁচানোর আন্দোলনও চালিয়ে যেতে হবে। নদীকে রক্ষা করতে না পারলে আমাদের নদী মাতৃক দেশ, নদী ভিত্তিক সভ্যতাকে টিকিয়ে দেওয়া যাবে না।"
রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, "নদীপাড় রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব কেন্দ্রের সরকারের। ব্যারেজ তৈরীর সময় প্রতিশ্রুতি ছিলো ব্যারেজের উত্তর ও দক্ষিনে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত রক্ষনাবেক্ষন করা, বাঁধ তৈরী, নদীর ক্ষয়রোধ করা হবে। ফারাক্কা ব্যারেজ হলে এই সমস্ত ক্ষতির সম্ভাবনার কথা আগেই বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন। উত্তর ভারতে ভূমি ক্ষয় হচ্ছে। নদীর গভীরতা কমে নাব্যতা নষ্ট হচ্ছে। ১৯৮৯সালে পার্লামেন্টে আইন হয়েছিলো প্রথম জাতীয় জলপথ গঙ্গা নদীর নাব্যতা দুই মিটার রাখা হবে। কিন্তু সেই আইন বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ। সমস্ত টাকা পয়সা খরচ করে বেনারস সাজানো হয়ে ট্যুরিষ্ট স্পট করা হচ্ছে। ঘাট হচ্ছে। কিন্তু নদীর সর্বনাশ হচ্ছে। সেই কারনে গঙ্গা নদী বাঁচানোর ডাক দিয়েছি আমরা। শুধুমাত্র গঙ্গা নদী নয়, জলঙ্গী, ভৈরবী বা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদী হতে পারে। অবৈধভাবে নদীর বালি চুরি ও পাচার হচ্ছে, ভূটানেও অবৈধ পাথর তোলায় নদীতে হড়পা বান আসছে। উত্তরাখন্ড, পাঞ্জাব, জম্বু কাশ্মীরে, উত্তর পূর্ব ভারতে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। প্রকৃতির বিনাশ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ফারাক্কায় বিশাল সমাবেশ হয়েছে। তৃণমূলের মন্ত্রীরা যেখানেই যাবে বিক্ষোভ হবে। সাহস থাকলে ভূতনীর চরে, মানিকচকে, বন্যাক্লিষ্ট এলাকায় যাক। দৌড় করিয়ে ছেড়ে দেবে।"
সেলিম বলেছেন, "সঙ্কটের মধ্যে আছে গরীব মানুষ। উৎসবের মুখে হাজার হাজার মানুষ ঘর ছাড়া। মাথার উপর ছাদ নেই। পুর্নবাসনের কোন উদ্যোগ নেই সরকারের। বামফ্রন্টের সময়ে জমি বসতি গড়ে দেওয়া হতো। সেই সময়কার পুর্নবাসনের প্রকল্পগুলির অস্তিত্ব নেই। রাজ্য ও কেন্দ্র হাত গুটিয়ে নিয়েছে। মোদী সরকারে উত্তর দক্ষিনে ৪০কিমির পরিবর্তে ৮ ও ১২ কিমি করে দিয়েছে। সেই সুযোগে তৃণমূল সরকার সব টাকা লুট করছে। রাজ্যের সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে বালির বাঁধ করছে। সব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিলো ১০০দিনের কাজ চালু করার। কিন্তু দুই সরকার মিলে রাজ্যে ১০০দিনের কাজ বন্ধ করেছে। রাজ্যে কাজ নেই। পরিযায়ী হয়ে পশ্চিমবাংলার মানুষ অন্য রাজ্যে গিয়ে জাতপাত, ভাষা, ধর্মের নামে অত্যাচারিত হচ্ছেন। তাদের বিতাড়িত করা হচ্ছে। আমরা আন্দোলনে আছি। শান্তি ও সম্প্রীতি নিয়ে মানুষ যাতে উৎসবে অংশগ্রহন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে সরকার ও পুলিশী আগাম ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি বামপন্থীরাও সচেতন থাকবেন।"
শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের সরকারী জমি বেদখল প্রসঙ্গে বলেছেন, "বেদখল নয়, দখল করে নিচ্ছে। এই সরকার তাদের জমিকে নামে বেনামে দখল হতে দিচ্ছে। বাঁধ, চর, চা বাগান, রেল, ডিফেন্স, পুরসভা, পঞ্চায়েত, গোচরভূমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি অবাধে লুট হচ্ছে। পুকুর, নদী লুট হচ্ছে। পুলিশ, তৃণমূল, উত্তরবঙ্গে তৃণমূল থেকে চলে যাওয়া বিজেপি নেতা, বিজেপি থেকে ফিরে আসা তৃণমূল নেতা, পৌর ও পঞ্চায়েত প্রশাসনের একযোগে যোগসাজসে হচ্ছে। আমরা বলছি, দেশ ও জাতির সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ লুট হচ্ছে। রিয়াল এস্টেট হিসেবে জমিকে দেখছে। তাইজন্য অবাধে জমি লুট হচ্ছে। মমতা ব্যনার্জি ল্যান্ডব্যাঙ্কের কথা বলেছেন। কিন্তু ল্যান্ড ব্যাঙ্কে কত নতুন জমি জমা, বিক্রি হয়েছে, লোপাট, জবরদখল হয়েছে তার কোন তথ্য হিসেব নেই। বড় বড় পূঁজিপতিদের হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে চা বাগান, জঙ্গলের জমি।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এখন উৎসবে ক্লাবগুলোকে খুশি করতে কোটি কোটি টাকা বিলি করছে। কর্মচারী, কন্ট্রাক্টরদের বকেয়া পরিশোধ করছে না। ধার শোধ না করে, ধার চাপিয়ে যাচ্ছে। গোটা রাজ্যে সমস্ত পুরসভার বিদ্যুতের বিল বাকি। কোনও ঠিকাদারের বকেয়া টাকা না মেটানোয় রাস্তাঘাটের এই বেহাল অবস্থা। যতোই আমার পাড়া, আমার সমস্যা অনুষ্ঠান করলেও সমাধান নেই। তৃণমূল কোন সমাধান নয়। পথশ্রী নামে সাইনবোর্ড দিলেও রাস্তা তো হতশ্রী হয়ে রয়েছে। আসলেই পাড়ায় পাড়ায় সমস্যা আছে। আর এই সমস্যা নিরসনের জন্যই তো পঞ্চায়েতী ও পুর ব্যবস্থা তৈরী হয়েছিলো। গ্রাম সংসদ, ওয়ার্ড কমিটি, মেয়র ইন কাউন্সিল, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের থাকার কথা ছিলো। তাদের বাদ দিয়ে এখন চিফ সেক্রেটারিকে দিয়ে পাড়ার সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। সরকারের নীতিতেই গলদ রয়েছে। পাড়ায় কিভাবে সমাধান মিলবে। নিয়োগের অভাবে স্কুলে শিক্ষক নেই, ঠিকাদার টাকা না পাওয়ায় রাস্তাঘাটের মেরামত করছে না এইসমস্ত সমস্যা তো পাড়ার নয়, এগুলোতো উত্তরকন্যার সমস্যা। সেখানে সমাধান করতে হবে। সরকারের প্রতি অনাস্থা, রাগ, ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।"
Comments :0