জানা অজানা
নতুনপাতা
কৃষ্ণনগর এবং চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস
তপন কুমার বৈরাগ্য
২৪ অক্টোবর ২০২৫, বর্ষ ৩
পশ্চিমবঙ্গের একটা প্রাচীন পুজো জগদ্ধাত্রী পুজো।বড় বড় মূর্তি এবং আলোর রোশনাইয়ের জন্য এই দুটো জায়গায় জগদ্ধাত্রী পুজো সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।
জাতিধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই পুজোর আনন্দ উপভোগ করেন।কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়।কৃষ্ণনগর এবং চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী
প্রতিমা আসলে দেবী দুর্গারই একটা রৃপ।এই দুটো জায়গার জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রাচীনত্ব ও জাঁকজমক এক বিশিষ্টতার সাক্ষর বহন করে চলেছে।চন্দননগরও ভারতের একটা
প্রাচীন শহর।১৬৭৩খ্রিস্টাব্দে ফরাসিরা এখানে উপনিবেশ স্থাপন করেন।১৬৮৮খ্রিস্টাব্দে ফরাসিদের স্থায়ী উপনিবেশ এখানে গড়ে ওঠে।চন্দননগরের আগের নাম ছিল ফরাসডাঙ্গা।
১৭৭২খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো প্রচলন করেন। এই পুজো প্রচলনের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক কাহিনী আছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় প্রতিবছর তার রাজপ্রাসাদে
দুর্গাপুজো করতেন।১৭৭২ খ্রিস্টাব্দের আশ্বিনমাসের প্রথমে তিনি নবাব আলিবর্দি খাঁর দ্বারা বন্দি হন।কারণ তিনি আলিবর্দি খাঁকে রাজস্ব না দেওয়ার জন্য।পরে তাকে যখন একমাস
পর মুক্তি দেওয়া হয় তখন দুর্গাপুজো শেষ হয়ে গেছে।সেই বছর দুর্গা পুজো না করতে পারায় তার মন ব্যথায় ভরে ওঠে। তিনি রাজপ্রাসাদে ফিরে দুর্গার প্রতীকি রূপে জগদ্ধাত্রী পুজোর
প্রচলন করেন।জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ।সিংহটা হাতির উপর দাঁড়িয়ে।এই হাতিটাকে বলা করীন্দ্রাসুর।হাতিটা অহংকারের প্রতীক।সিংহটা সাহস এবং শক্তির প্রতীক। দেবী ত্রিনয়না,
চতুর্ভুজা,সিংহবাহিনী।হাতে শঙ্খ,চক্র,ধনুক,বাণ।দেবীর গলায় নাগযজ্ঞোপবীত।কৃষ্ণনগর এবং চন্দননগরে সপ্তমী,অষ্টমী এবং নবমী এই তিনদিন পুজো হয়।পুজোর ক'দিন বহু দর্শনার্থীর
সমাবেশ ঘটে। কথিত আছে ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ছিলেন চন্দননগরের ফরাসি সরকারের একজন দেওয়ান।তিনি ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের এক অন্তরঙ্গ বন্ধু।ইন্দ্রনারায়ণ কৃষ্ণচন্দ্রের দ্বারা অনুপ্রাণিত
হয়ে ১৭৭৮খ্রিস্টাব্দে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন। আবার কারো মতে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো প্রথম শুরু হয় ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে।এখানে ৩০০বছরের প্রাচীন পুজোও অনুষ্ঠিত হয়।
দুটো স্থানেই পুজো উপলক্ষে সাজ সাজ রব।প্রত্যেক বাড়িতেই আত্মীয় স্বজনেরা এসে উপস্থিত হন।খাওয় দাওয়ারও বেশ তোড়জোড় থাকে।দুটো জায়গায় আলোর রোশনাই যেমন দেখার
বিষয় তেমনি থাকে নানারকম থীম নিয়ে প্যান্ডেল। এই দুটো জায়গার জগদ্ধাত্রী পুজো আজ ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।দুটো জায়গায় দেবী প্রতিমা নিরঞ্জনও দেখার মতন।পুজোর ক'দিন ব্যাবসায়ী মহলেও খুশির আমেজ।তারা দর্শনার্থীদের জন্য নানান খাবার থেকে শুরু করে নানান জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন।
 
                                         
                                    
                                
Comments :0