চন্দন দাস: বারাসত
দিল্লির আজকের ফলাফল বুঝিয়েছে সঙ্ঘ পরিবার কী করতে পারে। শনিবার বারাসতে সিপিআই(এম) উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সম্মেলন মঞ্চের বাইরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দিল্লিতে কী হয়েছে তাতে বাংলার কী হবে। বাংলাকে সামলাতে হবে।’’
তিনি বলেন, বিজেপি ওখানে যে রাজনীতি করেছে এক-দেড় মাস ধরে, তার আগে ‘ইন্ডিয়া এগেনস্ট কোরাপশন’ মঞ্চ করা হয়েছিল। তাদের একটা বড় অংশ তো ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, বিশ্বের সর্বত্র যেখানে দক্ষিণপন্থার উত্থান হয়, মানুষের রাগ ক্ষোভ দুঃখ থাকলে তারা আরেকটা নকল বিরোধী সাজায়। যাতে বামপন্থা উঠে না আসে।
সেলিম বলেন, ‘‘এখানে পশ্চিমবঙ্গে একটা বি-টিম আছে। তৃণমূল আলাদা কিছু করছে নাকি! যা যা বিজেপি বলছে তাই করছে। যতদিন ওদের কথা শুনে চলবে, সেটিই ওদের কবচ, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলবেন এখন ওদের বিরক্ত করো না। না’হলে বামপন্থীরা চলে আসবে। দিল্লিতে বামপন্থীদের সরকারে আসার ভয় ছিল না। ওরা যখন মনে মনে করেছে এবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সরিয়ে আমরা চলে আসতে পারব। এগুলো হচ্ছে ‘স্টেজ ম্যানেজড’।’’
সম্মেলনে আরএসএস প্রঙ্গে বলেন, ‘‘ব্রিটিশ আমলে, তারপরও কিছুদিন আমরা দেখেছিলাম সেতু, রেলব্রিজ বানাতে আর্চের মতো কাঠামো বানানো হতো। ইটের উপর ইট গেঁথে বানানো হতো সেই কাঠামো। সঙ্ঘ নানাভাবে এমন এক কাঠামো বানাতে চাইছে। মানুষকে তাঁদের সেই হিন্দুত্ববাদী কাঠামোর একেকটি ইট বানাতে চাইছে তারা। কখনো রাম মন্দিরের নামে, কখনো বাংলাদেশের ঘটনার নামে মানুষের মননে তার একেকটি ইট গেঁথে দিতে চাইছে। একেই বলে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট’। আমাদের সেই চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বলা হচ্ছে যতটা হিন্দুত্বর বিরুদ্ধে বলছেন, ততটা কী মুসলমান মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলছেন? সোশাল মিডিয়া, মিডিয়ার মাধ্যমে এসব কথা বলা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে শাহবানু মামলার সময় আমরাই বিরোধিতা করেছিলাম। ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ তখন সাধারণ সম্পাদক। জমিয়ত, সাহাবুদ্দিন সব হই হই করে নেমে পড়েছিল শরিয়তের নামে। আমরা বলেছিলাম শরিয়ত শরিয়ত কোরো না। আমাদের পার্টি বলেছিল, এটা আদালতের রায়। তাকে মানতেই হবে। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে আমরা লড়েছি।’’
সেলিম বলেন, ‘‘এখন বাংলাদেশের ঘটনাবলীর সময় আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার হলো যে, সিপিআই (এম) কিছু বলছে না। ওরা মুসলিম তোষণ করে। আমরা বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়, দাঙ্গার সময়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়েছি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণেরও প্রতিবাদ করেছি। সেখানে বামপন্থীরাও আক্রান্ত। ওখানে মৌলবাদীরা বলছে হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে স্বাধীনতা দিবস। এখানে মোহন ভাগবত বলছেন, রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন স্বাধীনতা দিবস। আমরা হাসিনা সরকারের সব কাজের সমর্থন করি না। কিন্তু দুই দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির দর্শনে কী মিল! যে ইহুদিদের উপর নাৎসিরা অত্যাচার চালিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে কমিউনিস্টরা লড়াই করেছিল। আবার সেই ইহুদি ধর্মের নামে ইজরায়েল যখন জায়নবাদী রাষ্ট্র হিসাবে প্যালেস্তাইনের উপর আক্রমণ চালায় তখন আমরা তার প্রতিবাদ করি। নাৎসিবাদের অনুসরণকারী আরএসএস, কিন্তু তারা জায়নবাদী ইজরায়েলের সমর্থক। আমরা, আমাদের পার্টি সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে। তা সে যেখানেই হোক। ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতা এক নয়। ইহুদিদের ধর্ম আর জায়নবাদ এক নয়। হিন্দু আর হিন্দুত্ববাদও এক নয়। যে কোন ধরণের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমরা।’’
Comments :0