আদানিকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড়, সংসদে বিরোধীরা এককাট্টা, কিন্তু তৃণমূল তাতে নেই। গত বছর ভোট না থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল ৫২৮ কোটি টাকা পেলো কোথা থেকে? এরমধ্যে প্রায় পাঁচশো কোটি টাকা তৃণমূলকে আদানিরা দিয়েছে ইলেক্টোরাল বন্ডে। কেন্দ্রের সরকারের মতো এরাজ্যেও সরকারি জমি পাইয়ে দিয়ে কাটমানি তুলছে তৃণমূল। দেউচার জমি দখলের জন্য ঘুষের টাকা, মমতা ব্যানার্জি নিজেই এখন সিন্ডিকেটের লোক। ইলেক্টোরাল বন্ডের নামে ঘুষের টাকা পেয়ে গেছেন বলে মমতা ব্যানার্জি বলছেন যে দেউচায় অর্ধেক কাজ হয়ে গেছে। তৃণমূলের আদানি যোগ সম্পর্কে শনিবার ঝাড়গ্রামে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
এদিন মহম্মদ সেলিম বলেছেন, নিজেরাই বিজেপি’র পায়ে আশ্রয় নিয়ে এখন সিপিআই(এম)’র সঙ্গে বিজেপি’র যোগ নিয়ে ভিত্তিহীন কথা বলছে তৃণমূল। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির মন্তব্যের প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে এদিন সেলিম বলেন, সিপিআই(এম) আর বিজেপি এক হয়ে গেছে, এটা কেবল অভিষেক ব্যানার্জিরাই বলতে পারে, আর কেউ বলবে না। এছাড়া তৃণমূলের আর কী বলার আছে? পিসি-ভাইপো মিলে নিজেদের জেলযাত্রা বাঁচাতে, সিবিআই-ইডির চার্জশিট থেকে নিজেদের নাম বাদ রাখতে বিজেপি’র পায়ে পড়েছেন।
তিনি একথাও বলেছেন, এর আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিল পাসের সময়েও বিজেপি’র বিরোধিতায় তাদের দেখা মেলেনি। সিপিআই(এম)’র নেতৃত্বে বামপন্থীদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষরা সবাই বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইতে একজোট হচ্ছে। আর তৃণমূল কোথায়? আগে ত্রিপুরায় মমতা ব্যানার্জি ছুটতেন বামফ্রন্ট সরকারকে ফেলতে। এখন বিজেপি’র সরকার রয়েছে, তাই যাওয়ার দরকার নেই। মেঘালয়ে ভাইপোকে নিয়ে কেন গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী? বিজেপি’কে বাঁচাতে। আর এরাজ্যে সাজানো লড়াই দেখাচ্ছে বিজেপি’র সঙ্গে।
এদিন ঝাড়গ্রামে সিপিআই(এম)’র একটি সাংগঠনিক সভায় যোগ দেন মহম্মদ সেলিম। তারপরে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র এবং জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকারকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে অংশ নেন। সেলিম বলেছেন, বাজেটে গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পে কেন্দ্র বরাদ্দ কমাচ্ছে, আর এরাজ্যের শাসক দল চুরি করছে। তাই যাদের কাজ পাওয়ার কথা তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না, যারা কাজ করেছেন তাঁরা মজুরি পাচ্ছেন না, সব চুরি হয়ে গেছে।
মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, এরাজ্যেও একদিকে মানুষকে ভাগ করা, অন্যদিকে সম্পদ লুট করা চলছে। দেউচায় আদিবাসীদের জমি আদানিদের দিতে চায়, তাজপুরের মৎস্যবন্দরের জমি এক টাকার বিনিময়ে আদানিকে দিয়েছে। এই সব কর্পোরেট কোম্পানি সরকারের থেকে নেওয়া জমি বন্ধক দেখিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলেছে। মোদী সরকার বিবিসি ডকুমেন্টারি দেখাতে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, আদানিদের নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে দিচ্ছে না, লাদাখে সমাজকর্মীকে আটক করছে, এখানে তৃণমূল সরকার একমাত্র বিরোধী বিধায়ককে জেলে পুরে রেখেছে। দুই সরকার মিলে কন্ঠরোধ করে লুট চালাচ্ছে।
এরাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয় নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার কি এতদিন ঘুমিয়ে ছিল? প্রকল্পের টাকা নয়ছয় নিয়ে এতদিন চুপ ছিল কেন? আমরা গ্রাম জাগাও বলে মানুষকে রাস্তায় নামানোর পরে ওদের ঘুম ভেঙেছে! একদিকে, রাজ্যে নারী ও শিশু কল্যাণের টাকা ফেরত চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে বলতে হবে, ধর্ষণের শিকারদের পুনর্বাসনের জন্য যে ‘নির্ভয়া ফান্ড’ হয়েছিল, তার টাকা কোথায় গেল? পিএম কেয়ারের টাকা কোথায় গেল? এসবিআই এবং এলআইসি’কে আদানির কোম্পানিতে টাকা ঢালতে কে বলেছিল? এখনও কেন ঢালা হচ্ছে?
দেশে এবং রাজ্যে এই লুটের রাজ খতমের ডাক দিয়ে সেলিম বলেছেন, দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীরাজকে খতম করার জন্য আমরা লড়াই করছি, মানুষের সাড়া পাচ্ছি, বাম ঐক্যকে মজবুত করে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে পঞ্চায়েতকে মুক্ত করতে চাইছি। সেলিম বলেন, অভিষেক ব্যানার্জি গ্রাম দেখতে বেরিয়েছে, এটা কোনও খবর? মিডিয়ার আদিখ্যেতার সীমা থাকা উচিত। কাজ নেই, মানুষ ভুগছে, শিক্ষা স্বাস্থ্য বিপর্যস্ত, তা নিয়ে খবর নেই, অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা নিয়ে মিডিয়া ঘুরছে।
সেলিম বলেন, মানুষ চাইছে লুটেরাদের তাড়িয়ে পঞ্চায়েত উদ্ধার করতে। বামপন্থীরা তাতেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর যে বৈঠক হয়েছে তাতে ঠিক হয়েছে, ওরা মামলা চালাবে, পঞ্চায়েত নির্বাচনই এখন করবে না। মমতা ব্যানার্জির হয়ে এই শুভেন্দু অধিকারী লাল ঝান্ডা নিকেষ করতে মাওবাদীদের ডেকে এনেছিলেন, দানাপানি জুগিয়েছিলেন। আমাদের কমরেডদের রক্তের দাগ মাওবাদীদের হাতে, তৃণমূলের হাতে, তেমনই শুভেন্দু অধিকারীর হাতে। আজকে তিনি গেরুয়া ঝান্ডা ধরেছেন। মেদিনীপুরে শিক্ষকদের চাকরি চুরি তৃণমূলের হয়ে কে করেছে?
Comments :0