রাজ্যে এখন কাজের হাহাকার। প্রায় ১ কোটিরও বেশি মানুষ পরিবার-পরিজন ছেড়ে পরিবার প্রতিপালনের জন্য অন্য রাজ্যে কাজ করতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এখন এই রাজ্যের বাইরে বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে নিরাপত্তা পাওয়াটাই এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে মূল চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেরালা ছাড়া প্রায় সমস্ত রাজ্যের বাংলায় কথা বলেন এমন পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশী এবং নামে যদি মুসলমান বলে বোঝা যায় তাহলে তাদের দ্বিগুণ উৎসাহে বাংলাদেশী দাগিয়ে অত্যাচার করে রাজ্য ছাড়া করা হচ্ছে। কোথাও আরএসএস পরিচালিত উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কোথাও বিজেপি শাসিত রাজ্যের পুলিশকে এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যেও পরিযায়ী শ্রমিকদের শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলে এই আক্রমণকে প্রতিরোধ করতে হবে। শনিবার কাটোয়া শহরে পরিযায়ী শ্রমিক ও তাদের পরিবার-পরিজনদের এক সভায় বলছিলেন সিআইটিইউ অনুমোদিত ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক আসাদুল্লাহ গায়েন।
তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালের কেন্দ্রীয় আইন কার্যকরীভাবে লাগু করতে হবে। রাজ্য সরকারকে শ্রমিকদের পরিচয় পত্র দিতে হবে। শ্রমিকদের জন্য এক দেশ এক শ্রমিক পরিচয় চাই, যেখানে কাজ সেখানেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে কাজ সেখানেই রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে বিশেষ কামরার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিযায়ী শ্রমিকরা রাষ্ট্র নির্মাণের কাজে যুক্ত তাদের যথাযথ নিরাপত্তা এবং সম্মানের দায়িত্ব সরকারের।
তিনি আরও দাবি করেন, দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখভালের জন্য রাজ্য সরকারকে বিশেষ অফিসার নিয়োগ করতে হবে, যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের কোন সমস্যায় রাজ্য সরকারের সহযোগিতা পেতে পারেন। কিন্তু রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থে তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করছেন না। তারা বিজেপি সরকারের তৈরি বিভাজনের রাজনীতিকে ভোট রাজনীতিতে ব্যবহার করতে  ব্যস্ত।
সভায় সংগঠনের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক মহবুব আলম বলেন, প্রতিমাসে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের কাছে পাঠানো দশহাজার কোটি টাকা গ্রাম বাংলার অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে। অথচ রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। যখন তখন তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জেলে ভরছে। এই অসম্মান-অবমাননার বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের এলাকাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মজবুত সংগঠন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সভা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলার জন্য ১১ জনের একটি কমিটি নির্বাচিত হয়, কমিটির আহ্বায়ক হন কালীচরণ দে ও নিতাই দেবনাথ। সভা পরিচালনা করেন কালিচরণ দে ও জয়দীপ চ্যাটার্জীকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমন্ডলী।
                                        
                                    
                                
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0