PROBANDHA | TAPAN KUMAR BAIRAGYA | JIBANANANDER MAA | MUKTADHARA | 2025 MARCH12

প্রবন্ধ | তপন কুমার বৈরাগ্য | জীবনানন্দ দাশের মা | মুক্তধারা | ২০২৫ মার্চ ১২

সাহিত্যের পাতা

PROBANDHA  TAPAN KUMAR BAIRAGYA  JIBANANANDER MAA  MUKTADHARA  2025 MARCH12

প্রবন্ধ | মুক্তধারা

জীবনানন্দ দাশের মা
তপন কুমার বৈরাগ্য

কবি জীবনানন্দ দাশ একজায়গায় বলেছেন --কবিতার প্রথম পাঠ
আমি মায়ের কাছে নিয়েছি।কুসুমকুমারী দেবী ছিলেন আধুনিক
যুগের শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশের মা।কুসুমকুমারী দেবীর
লেখনীতে ফুটে উঠেছে ধর্ম,নীতিবোধ,দেশাত্মবোধ।অধিকাংশ কবিতা
তাঁর শিশুদের জন্য লেখা।তাঁর লেখা একটায় কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের নাম
'মুকুল'।
এই একটা কাব্যগ্রন্থ লিখেই তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে আজো আসীন আছেন।
এ ছাড়া তিনি পৌরাণিক আখ্যায়িকা নামক একটি গদ্যগ্রন্থও লেখেন।
তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতার নাম 'আদর্শ ছেলে'। এই কবিতায় তিনি
লিখেছেন--আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে,কথায় না বড়ো হয়ে
কাজে বড়ো হবে।একটা কবিতায় তাঁকে মহিলা কবির শ্রেষ্ঠ আসনে
বসিয়েছে।'মুকলের' অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলো--'মনষ্যত্ব',
'বসন্তে','মায়ের প্রতি','সাধনপথে', 'দাদার চিঠি','খোকার বিড়াল ছানা',
'বন্দনা','উদ্বোধন','অপরূপের রূপ',ইত্যাদি।
কুসুমকুমারী দাশ ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২১সেপ্টেম্বর বরিশালের গৈলা গ্রামে
জন্মগ্রহণ করেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন।তাঁর বেশ
কিছু কবিতা 'প্রবাসী' ও 'মুকুল' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় শিশুশিক্ষার জন্য যে চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার
বই লেখেন তাতে কুসুমকুমারী দেবীর অনেক ছোট ছোট ছড়া স্থান
পেয়েছে।চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়ার পর বাবা মায়ের সাথে কলকাতায় চলে আসেন।এখানে প্রবেশিকা পরীক্ষা দেবার আগে ১৮৯৪খ্রিস্টাব্দে বরিশালের ব্রজমোহন ইনিস্টিটিউশনের প্রধানশিক্ষক মহাশয় সদানন্দ দাশের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।বিয়ের পর সদানন্দ দাশ তাঁকে লেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সব সময় উৎসাহ দিতেন।
১৮৯৯ খ্রিস্টব্দের ১৮ই ফেব্রুয়ারি বড় পুত্র জীবনানন্দ দাশের জন্ম হয়।
এরপর মেজোপুত্র অশোকানন্দ দাশের জন্ম হয়।তারপর কন্যা সুচরিতা
দাশের জন্ম হয়। জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রথম কবিতা 'বর্ষ আবাহন'
মায়ের জন্য 'ব্রহ্মবাদী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মা তাঁকে সেদিন প্রাণভরে
আশীর্বাদ করেছিলেন।জীবনানন্দের ১৯২৭খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'ঝরাপালক'
১৯৩৬খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'ধূসর পান্ডুলিপি',১৯৪২খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'বনলতা
সেন,' ১৯৪৪খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় 'মহাপৃথিবী',এবং 'সাতটা তারার তিমির'
কাব্যগ্রন্থগুলো ।প্রতিটা কাব্যগ্রন্থ মায়ের হাতে তুলে দিয়ে মায়ের প্রাণভরা
আশীর্বাদ পেয়েছিলেন।কুসুমকুমারী দেবী শুধু দেখে যেতে পারেন নি' রূপসী বাংলা 'এবং 'বেলা অবেলা' কাব্যগ্রন্থ দুটি।কারণ জীবনানন্দ দাশ ১৯৫৪
খ্রিস্টাব্দের ২২শে অক্টোবর কলকাতায় ট্রামের ধাক্কায় আহত হন এবং
পরে তাঁর মৃত্যু হয়।জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর ওই কাব্যগ্রন্থদুটি প্রকাশিত
হয়।
জীবনানন্দের মা ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর কলকাতার রাসবিহারী
এভিনিউয়েরর বাড়িতে ৭৩বছর বয়েসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুর আগে তিনি বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন।এই সময় মায়ের সবরকম
দেখাশুনা করতো জীবনানন্দ। মা অসুস্থ অবস্থায়  বলতেন--তুই আমার
কাছে সেই ছোট্ট ছেলেটায় রয়ে গেলি।আমি মরে গেলে তুই থাকবি কি করে
বাবা?জীবনানন্দ চোখে জল এনে বলতেন--ও কথা তুমি কক্ষনো বলবে
না মা।মা মারা যাবার পর জীবনানন্দ খুবই মানসিক ব্যথা পেয়েছিলেন।
মায়ের কাছে সকল সন্তানই আদরের হয়।তবুও জীবনানন্দ মায়ের চোখে
ছিলো বড় আদরের।মায়ের মৃত্যুর ছয় বছর পর জীবনানন্দ মাত্র ৫৫বছর
বয়েসে মারা যান। 

 

Comments :0

Login to leave a comment