ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে মহায়ুতি? কিংবা ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের কাছে পরাস্ত হবে এনডিএ? এই সব প্রশ্নেরই উত্তর পাওয়া যাবে শনিবার, ভোটের ফল বেরলেই। তবে ফল প্রকাশের আগে অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষা অবশ্য দু’রাজ্যেই এগিয়ে রেখেছে বিজেপি জোটকে। মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি বিজেপি জোট ঝাড়খণ্ডও বিরোধীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেবে— এমন ইঙ্গিত দিয়েছে সমীক্ষাগুলি। তবে কোনও কোনও সমীক্ষা দু’রাজ্যে ত্রিশঙ্কু হওয়ারও পূর্বাভাস দিয়েছে। দু’-একটি সমীক্ষা আবার ঝাড়খণ্ডে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি মহারাষ্ট্রে বিরোধী জোট মহাবিকাশ আঘাড়ির জয়েরও কথা বলেছে। তবে এসবই নমুনা ভোটারের মতামতের ভিত্তিতে বিশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি পূর্বাভাস, সব সময় মিলবেই এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। বিশেষত গত লোকসভা নির্বাচন এবং হরিয়ানা বিধানসভা ভোটের বুথ ফেরত সমীক্ষা বাস্তবের ফলের সঙ্গে মেলেনি। অবশ্য এবারের লড়াই ছিল সরাসরি বিভাজনের রাজনীতির সঙ্গে গণতন্ত্র রক্ষার এবং শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হয়, সেটাই দেখার।
দু’রাজ্যেই ভোট গণনা শুরু হবে সকাল ৮টায়। প্রথমে পোস্টাল ব্যালট গণনার পর খোলা হবে ভোটযন্ত্র। মনে করা হচ্ছে, সকাল ৯টা থেকে ফলাফলের একটা আগাম ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। তবে তাতেও কতটা ভরসা করা যায়, সে নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। সম্প্রতি হরিয়ানা ভোটের ফল ঘোষণার প্রথম দিকে বেশ খানিকটা এগিয়েই ছিল ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। দুপুরের পর ছবি বদলাতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা দখল করে বিজেপি জোট।
মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে চূড়ান্ত আশাবাদী বিজেপি জোট মহায়ুতি। বিশেষ করে অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষা তাদের দিকে পাল্লা ভারীর ইঙ্গিত দেওয়ার পর ‘বুকের ছাতি’ আরও বেড়ে গিয়েছে মহায়ুতি নেতাদের বলে জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জোট ফের ক্ষমতায় এলে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের খবর, এবার আর একনাথ শিণ্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী পদ নাও দিতে পারে বিজেপি। সেই সময় বিরোধী জোট ভেঙে সরকার গড়ার বাধ্যবাধকতা থেকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল শিণ্ডেকে। পরে এনসিপি ভাঙার ‘পুরস্কার’ হিসাবে উপ মুখ্যমন্ত্রী পদ দেওয়া হয় অজিত পাওয়ারকে। এবার সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদ নিজেদের কবজায় রাখবে বিজেপি। ওই পদে ফের বসতে পারেন বর্তমান উপ মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। এমনিতেও তিন জোট শরিক মধ্যে বেশি আসনে (১৪৯) লড়াই করেছে বিজেপি। আবার এই ঘটনা ঘটলে শিণ্ডের শিবসেনা কিংবা অজিত পাওয়ারের এনসিপি কতটা মুখ বুজে সহ্য করবে, সেবিষয়ে সন্দেহ আছে রাজনৈতিক মহলে। আবার ত্রিশঙ্কু হলে ছোট দলগুলির গুরুত্ব বেড়ে যাবে, তখন আবার বিধায়ক কেনাবেচার খেলা শুরু হবে। এই প্রশ্নে বিজেপি যে দক্ষ, তার প্রমাণ শিবসেনা এবং এনসিপি ভাঙিয়ে সরকার গঠন করে আগেই প্রমাণ দিয়েছে।
তবে বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাসে মোটেই ভেঙে পড়েননি মহাবিকাশ আঘাড়ির নেতৃবৃন্দ। তাঁরাও আত্মবিশ্বাসী, মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় এবার আসতে চলেছে শিবসেনা (ইউবিটি), এনসিপি (এসপি) এবং কংগ্রেস জোট। এদিন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এদিন জানিয়ে দিলেন যে, তাঁরা আশাবাদী, কারণ প্রচারে মহারাষ্ট্রবাসীর মনোভাবে অন্তত সেকথা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে। আবার মহারাষ্ট্রের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বালাসাহেব থোরাট শুক্রবার জানিয়ে দিলেন, এবার রাজ্যে মসৃণভাবে ক্ষমতায় আসতে চলেছে মহাবিকাশ আঘাড়ি। সরকার গড়তে অন্যের ওপর ভরসাও করতে হবে না। এদিন তিনি মুম্বাইয়ে শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব থ্যাকারে এবং এনসিপি (এসপি) প্রধান শারদ পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করেন। জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রের ভোট পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নজরদারি রাখতে কংগ্রেস এদিন থেকেই অশোক গেহলট, ভূপেশ বাঘেল এবং জি পরমেশ্বরকে পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করেছে। বিরোধী জোট নেতৃত্বের ধারণা, মহায়ুতি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। আর তখনই শুরু হবে বিরোধী বিধায়কদের কেনার জন্য মরিয়া চেষ্টা। এমনও জানা গিয়েছে, মহাবিকাশ আঘাড়ির জয়ী বিধায়কদের ফল বেরনোর সঙ্গে সঙ্গে অজানা ঠিকানায় নিয়ে যাওয়া হবে বিজেপি’র হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।
আবার মহারাষ্ট্রের মতোই ঝাড়খণ্ডে উগ্র হিন্দু্ত্বের প্রচার চালিয়ে ক্ষমতা দখলের রাস্তা বেছে নিয়েছিল বিজেপি। একারণেই পুরো প্রচারপর্বে অনুপ্রবেশ, ‘লাভ জিহাদ’র মতো তীব্র সাম্প্রদায়িক জিগির তুলেছিলেন বিজেপি নেতারা। অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষা আবার বিজেপি জোট ক্ষমতায় ফিরছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। বিজেপি নেতারা এর পর আরও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তবে শাসক ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ বুথ ফেরত সমীক্ষাকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, হেমন্ত সোরেন সরকার রাজ্যবাসীর কল্যাণে এবং রাজ্যের উন্নয়নে যে ভূমিকা নিয়েছে পাঁচ বছর, তাতেই মানুষের সমর্থন পাওয়া যাবে। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটানোর জন্য আদিবাসী ‘সহানুভূতি’র ফয়দাও পেতে পারে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ বলে মনে করা হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডেও জেতার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন খাড়গে। এরই সঙ্গে মহারাষ্ট্রের মতোই ঝাড়খণ্ডে তারিক আনোয়ার, মাল্লু ভাট্টি বিক্রামার্কা এবং কৃষ্ণা আলুবারিকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে কংগ্রেস। আবার ত্রিশঙ্কু হলে বিজেপি বিধায়ক কিনতে নেমে পড়তে পারে আশঙ্কা থেকেই আগাম সতর্ক ‘ইন্ডিয়া’ নেতৃবৃন্দ বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, শনিবারই ১৩ রাজ্যের ৪৬ বিধানসভা এবং দুটি লোকসভা আসনে উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে ৬টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফল বেরবে শনিবারই। গত ১৩ নভেম্বর ওই ৬ কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়েছিল। এরই সঙ্গে গত ২০ তারিখ হয়ে যাওয়া উত্তর প্রদেশের ৯টি আসনের উপনির্বাচনের দিকেও তাকিয়ে থাকবে দেশবাসী। সরকার বদল না ঘটলেও বিজেপি-কে লোকসভার মতো বিরোধীরা ধাক্কা দিতে পারে কি না, সেটাই দেখার। এরই সঙ্গে রয়েছে কেরালায় রাহুল গান্ধী ছেড়ে যাওয়া লোকসভা আসন ওয়েনাডে এবার কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। জিতলে এবারই প্রথম সংসদীয় রাজনীতিতে পা দেবেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
Comments :0