farmers protest

সরকারকে কিনতে হব আলু, রাজ্যজুড়ে অবরোধ কৃষকদের

রাজ্য

farmers protest


দেনার দায়ে আলুচাষিরা আর আত্মঘাতী হতে চান না। রাজ্য সরকারকে কৃষকদের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ হাজার টাকা কুইন্টাল দরে আলু কিনতে হবে। শনিবার রাজ্যের আলু চাষের প্রায় আশিটি এলাকায় রাজ্য ও জাতীয় সড়কে আলু ফেলে অবরোধ করেন আলুচাষিরা। 

পুলিশ, প্রশাসন আগে ভাগে বিরাট বাহিনী মোতায়েন করে। কৃষকদের রাস্তায় উঠতে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু দলে দলে আলু চাষী লাল ঝান্ডা নিয়ে ২নম্বর জাতীয় সড়কে নেমে পড়েন। বিশাল সংখ্যক কৃষককে পুলিশের আটকাবার ক্ষমতা ছিল না। 

রাস্তা অবরোধ হয়, প্রতিবাদী কৃষকরা মমতার কুশপুতুল দাহ করেছেন, রাস্তায় টায়ার পুড়িয়েছেন। বস্তা বস্তা আলু রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। 

বর্ধমানের খন্ডঘোষ, রায়না, মেমারী, জামালপুর, বর্ধমান সদর-১, ২ ছাড়াও গলসী, ভাতাড়, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট থেকে দলে দলে কৃষক এই কর্মসূচিতে যোগদান করেন।

এদিন মঙ্গলকোটের বন কাপাসি অঞ্চলে এক বিরাট মিছিল এলাকা পরিক্রমা করে। পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষক নেতা শাহজাহান চৌধুরী ও দুর্যোধন সর প্রমুখ নেতৃত্ব দেন।

এদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের দুইটি স্থানে আলু চাষীদের তুমুল বিক্ষোভ সহ আলু ঢেলে সড়ক অবরোধ করে  বিক্ষোভ অবস্থান চলে দীর্ঘক্ষণ। শ্লোগাল ওঠে 'মাথা খারাপ সরকার, কৃষক মারা সরকার আর নেই দরকার'। 

চন্দ্রকোনা রোডে জাতীয় সড়ক অবরোধ চলাকালীন পুলিশ প্রসাশন গড়বেতার বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের নির্দেশে কৃষকদের হুমকি দিয়ে অবরোধ তুলে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালায়। কৃষকদের তুমুল বিক্ষোভ পুলিশ প্রসাশন পিছু হটতে বাধ্য হয়। 

কৃষক সভার জেলা সম্পাদক মেঘনাদ ভূঁইয়া বলেন তৃণমূল সরকারের রাজত্বে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সরকারি হিসাবে ১২৯ জন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ঋণের জালে জড়িয়ে। গত একমাসে জেলার চন্দ্রকোনা থানার দুটি মৌজায় দুজন কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ঋণের বোঝায়। তিনি বলেন আত্মহত্যা নয়, সমস্ত কৃষক একত্রিত হোন। কৃষক ও কৃষিকে বাঁচানোর লড়াইতে। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই কর্পোরেট ও ফড়েদের স্বার্থ রক্ষার দালাল। তাই আত্মহত্যা নয় কৃষকের ফসলের লাভ জনক দাম আদায়ের লড়াইতে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

আলুর সঙ্গে পিয়াজ চাষিদের ক্ষতিপুরণের দাবি ওঠে। এদিন বোলপুরে কাশিপুর বাইপাস মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। এছাড়াও এদিন জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে জেলার মল্লারপুর এর বাহিনা মোড়, নলহাটির চামটি বাগান, সিউড়ি-১ ব্লকের কডিধ্যা, সাঁইথিয়া, আমোদপুর, লোহাপুর, পাইকর, মুরারই-১ ব্লকের বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা।

 বিক্ষোভ সভা গুলিতে বক্তব্য রাখেন কৃষকসভার জেলা সম্পাদক অরুপ বাগ, ভরত পাল, খেত মজুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক জুড়ান বাগদি, কামাল আলি খান, সঞ্জীব বর্মণ, সৌভাগ্য মাল, অরুপ চট্টোরাজ, ঘনশ্যাম ঘোষ, পল্টু বাগদি, সপ্তম বাগদি ও মঙ্গল মুর্ম্মু, খায়রুল হাসান , নুরুল ইসলাম, আতিউর রহমান প্রমুখ। 

এদিন বিকালে হাওড়া জেলা কৃষক সভা ও সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন হাওড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে আমতার শেহগোড়ী মোড়ে বিক্ষোভ অবস্থান ও অবরোধ হয়। বিকাল সাড়ে তিনটে থেকে অবস্থান বিক্ষোভ চলে প্রায় ১ঘন্টা। এরপর প্রায় আধঘন্টা রাস্তায় আলু ফেলে পথ অবরোধে সামিল হয় কৃষক ও খেতমজুররা। বিক্ষোভ অবস্থানে বক্তব্য রাখেন পরেশ পাল, অশোক দলুই, সন্তোষ অধিকারী, ষষ্ঠী মাজি, ভাস্কর রায়, আনন্দ মাজি, অজিত রায়, মিলন ব্যানার্জী। সভা পরিচালনা করেন কার্তিক দলুই।

বিক্ষোভ অবস্থানে বক্তারা বলেন, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ইত্যাদি কৃষি উৎপাদনের প্রত্যেকটি উপকরণের দাম বেড়েই চলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারি ভর্তুকি ছাঁটাই, ব্যাঙ্ক ও সমবায় থেকে ঋণের সুযোগ কমে যাওয়া, বেসরকারী ঋণে চড়া সুদ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিপূরণ না পাওয়া, ফসলের লাভজনক দাম না পাওয়া ইত্যাদি। ফলে ধারাবাহিক লোকসানে কৃষক সমাজ জর্জরিত।


এদিন হুগলী জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও পথ অবরোধ করেন আলুচাষিরা।  হুগলী জেলা কৃষক সভার উদ্যোগে জেলা হুগলী জেলার ১৭ টি ব্লক এলাকায় ১৭ টি স্থানে  এই কর্মসূচি হয়। এই জেলার আলুর বড় আড়ত সিঙ্গুরের রতনপুর আলুর মোড়। এখানে রাস্তায় আলু ফেলে পথ অবরোধ ও বিক্ষোভ দেখানো হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষক সভার সভাপতি  ভক্তরাম পান, সৌমিত্র চ্যাটার্জী, আব্দুল হাই , অভিজিৎ সাঁতরা, দেবাশিষ চ্যাটার্জী, সুকুমার সামন্ত, পাঁচকড়ি দাস সহ অন্যান্যরা। অবরোধ শেষে বুড়োশান্তি পর্যন্ত মিছিল হয়। এছাড়া অবস্থান বিক্ষোভ ও পথ অবরোধ হয় হরিপালের বাসুদেবপুর মোড় , গোঘাটের কামারপুকুর চটি , তারকেশ্বরের  চাঁপাডাঙ্গা মোড়, পোলবার আলিনগর মোড়, ধনিয়াখালি মদন মোহন তলা, মগরার নাকসা মোড় , আরামবাগের কাবলে , জাঙ্গিপাড়ার বিবেক কোল্ড স্টোরেজের সামনে , চণ্ডীতলা ১ ব্লকের শিয়াখালা চৌমাথা। কৃষক সভা উদ্যোগ ও ক্ষেতমজুর, মহিলা, যুব সহ অন্যান্য গণসংগঠনের সহযোগিতায় শিয়াখালা চৌমাথায় আলু চাষীদের অবস্থান বিক্ষোভ সভা হয়। বক্তব্য রাখেন সোমনাথ ঘোষ ও  স্বপন বটব্যাল। সভাপতিত্ব করেন অশোক নিয়োগী। রাস্তায় আলু ফেলে ও মোদী - মমতার কুশপতুল দাহ করে ৩০ মিনিট অবরোধ করা হয়।

চণ্ডীতলা ২ ব্লক দত্তপুর বদরতলা , খানাকুল ১ ব্লকের রামনগর মোড় , খানাকুল ২ ব্লক হায়াৎপুর পঞ্চায়েতের সামনে ও জয়রামপুর মোড় , বলাগড়ের কড়লা মোড় , পাণ্ডুয়ার তেলিপাড়া মোড় , পুরশুড়ার সোদপুরে আলুর বস্তা ফেলে সড়ক অবরোধ  করা হয়। দাদপুর থানা কৃষক সভার উদ্যোগে মহেশ্বরপুরে পথ অবরোধ কর্মসূচি চলে দীর্ঘক্ষণ ধরে। বক্তব্য রাখেন মহম্মদ মাহফুজ, সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ, নিমাই রায় ও আরতি সরেন। সভাপতিত্ব করেন নাসিরুদ্দিন হালদার। এদিন উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বিক্ষোভে শামিল হন কৃষকেরা।

Comments :0

Login to leave a comment