গল্প
দেশ
মৃদুল পাল
মুক্তধারা
আমার ঠাকুরদা সেদিন শেষ বারের মতন পৈত্রিক ভিটার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।ডালে ঝুলতে থাকা গাছ পাকা আম থেকে যেমন রস গড়িয়ে পড়ে,ঠিক তেমনিই আমার ঠাকুরদার দুই চোখ থেকে রস গড়িয়ে পড়ছে।করুন রস।তখন হিন্দুদের মধ্যে দেশ ছাড়ার হিড়িক উঠেছে।পাকিস্তানি বেয়নেটের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত মায়ের জীর্ণ শরীরে মলম লাগানোর পরিবর্তে আমার ঠাকুরদা,বাবা,কাকা,পিসি,ঠাম্মারা দেশত্যাগ করাটাকে সঠিক মনে করলেন।তারা এক পা এক পা করে একটি নতুন দেশের দিকে এগিয়ে আসলেন।আর ফেলে রেখে গেলেন একটি কুঁড়ে ঘর,শেওলা উঠোন,একটি পুকুর,কয়েকটি তাল গাছ।আমার ঠাম্মা পোঁটলায় ভরে জামা-কাপড় নিয়ে আসলেন।আর মাতৃভাষাকে খাটের তলায় রেখে এলেন।বাবা বৈয়াম ভর্তি করে শুকনো চিড়ে মুড়ি নিয়ে আসলেন,পথে পেটের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য।আর নিজেদের জাতীয় পরিচয় আষাঢ়ের একটি বিকেলের কাছে গচ্ছিত রেখে চলে গেলেন।ঠাম্মা শাড়ির আঁচলের গিট্ঠিতে নারায়নের ছোট্ট একটি কাগজের ফটো পেঁচিয়ে সবার শেষে দাঁড়ালেন,ঠাকুরদা সবার আগে,বাকিরা মাঝখানে।বাংলাদেশ থেকে ঐসময় বাংগালি মুখগুলো এক এক করে মুছে গিয়েছিলো।
Comments :0