STORY | SOURISH MISHRA | AMER MUKUL | MUKTADHARA | 2025 MARCH 10

গল্প | সৌরীশ মিশ্র | আমের মুকুল | মুক্তধারা | ২০২৫ মার্চ ১০

সাহিত্যের পাতা

STORY  SOURISH MISHRA  AMER MUKUL  MUKTADHARA  2025 MARCH 10

গল্প | মুক্তধারা

আমের মুকুল

সৌরীশ মিশ্র


"বাবু, এইবার আপনার আমগাছগুলোয় দারুণ ফলন হবে।" একটা বিস্কুট চা-এ ডুবিয়ে মুখে পুড়ে কথাখানা সুদেববাবুকে বলল মুজীবর। মুজীবরের কথা শুনে সুদেববাবু তো বটেই ওনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুদেববাবুর বছর নয়ের নাতি অর্ঘ্য-ও তাকালো মাথা উঁচিয়ে আমগাছগুলোর দিকে।
"যে ভাবে ভরে গেছে গাছ চারটেই মুকুলে-মুকুলে, আশা তো করছি আমিও সেইরকমই, মুজীবর।" বললেন সুদেববাবু।
সুদেবববাবুর খুব বাগানের সখ। বিশেষ করে, ফলের বাগানের দিকেই তাঁর ঝোঁক বেশি। নানান রকম ফলের গাছ আছে তাঁর এই বাগানে। সারাটা বছর ধরেই এই মুজীবরকে দিয়েই বাগানের যত্ন করান তিনি। সপ্তাহে দু'বার আসে সে। বৃহস্পতিবার আর রবিবার। আজ রবিবার। সকাল থেকেই বাগানে কাজ করছে মুজীবর। কিছুক্ষণ আগে অর্ঘ্যর মা চা-বিস্কুট পাঠিয়ে দিয়েছেন মুজীবরের জন্য। এখন সেই চা-বিস্কুট খেতে খেতেই বাগানের ঘাসে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে সে। একটুবাদেই কাজে নামবে সে ফের। সকাল থেকেই তার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছেন সুদেববাবুও। হোমওয়ার্ক সব কমপ্লিট করে এই মিনিট পাঁচেক হোলো বাগানে এসেছে অর্ঘ্য। ঠাকুরদার পাশটাতে দাঁড়িয়ে বাগানের গাছ নিয়ে নানান প্রশ্ন করে চলেছে সে। সুদেববাবুও সাধ্য মতোন সেসব প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন।
মুজীবরচাচা আর ঠাকুরদার মধ্যে এই একটু আগে হওয়া বাগানের আমগাছগুলো নিয়ে কথাগুলো শুনেই অর্ঘ্যের মনটা বেশ খুশি-খুশি হয়ে আছে এখন। সে তাই শুধিয়েই ফেলল সুদেবাবুকে, "ঠাকুরদা, এবার আমগাছগুলোয় আবার প্রচুর ফল হবে?"
"তাই তো মনে হয়, দাদুভাই।"
"এর আগের বছরের আগের বছর, যত ফল হোলো, সেই রকম অনেক?"
"মনে হয় তো।"
"তাহলে প্রচুর আম হলে আমরা সেই বছরের মতোন পাড়ায় ব্যাগ ভরে-ভরে আম বাড়ি-বাড়ি সব দেবো তো?"
"হ্যাঁ, দেবো তো বটেই। সবাইকে দিয়েই তো খেতে হয় দাদুভাই। পাড়ায় সবাই খাবে, আনন্দ পাবে, তবেই না!"
ঠাকুরদার কথাগুলো শুনেই "কি মজা, কি মজা!" বলতে বলতে ঠাকুরদার দু'হাত ধরে নাচতে থাকে অর্ঘ্য।
সুদেববাবু নাতির কাণ্ড দেখে হেসে ফেললেন। আর, সাথে, মনে মনে ভালোও লাগল তাঁর এই দেখে যে আজকের এই স্বার্থপর দুনিয়ায়, যেখানে সবাই শুধুই নিজের, নিজের পরিবারের কথাটুকুর কথাই ভাবে, সেখানে তাঁর নাতি,  এবার পাড়ার সবাইকে বেশি-বেশি করে আম দেওয়া হবে শুনে এতো আনন্দিত হয়েছে। তিনি মনে মনে প্রার্থনা করেন, তাঁর নাতির মনটা যেন ঠিক এই রকমই থাকে সারাটা জীবন। আর, এই কথা ভাবতে ভাবতেই তাঁর নাতির মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে দিলেন সুদেববাবু।


Comments :0

Login to leave a comment