Salim in Murshidabad

গুজরাট মডেলে এরাজ্যে দাগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী, ডোমকলে বিরাট সমাবেশে সেলিম

জেলা

গুজরাট মডেলের কৌশলেই এরাজ্যে তৃণমূলের দাগী অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মঙ্গলবার ডোমকলে বিরাট জনসমাবেশে এই মন্তব্য করে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা হলেই অনুব্রত বলে দেবে আসল চোর কালীঘাটে আর নবান্নের চোদ্দতলায়। তাই তাকে বাঁচানোর জন্য মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে পুলিশ রাতারাতি মামলা করেছে। গুজরাট মডেলে এখানেও কুখ্যাত অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে। গুজরাটে আরএসএস-বিজেপি যে কায়দায় নিজেদের লোকজনকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, অমিত শাহের থেকে শিখে দুবরাজপুরে একই কায়দা প্রয়োগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আগে আদবানির শিষ্যা ছিলেন, এখন অমিত শাহের শিষ্যা হয়েছেন। অপরাধীদের সোনার বকলেস পরিয়ে রাখতে চাইছেন। কিন্তু বাংলার মানুষ এককাট্টা হয়ে সব অপরাধের হিসাব বুঝে নেবেন।
গত নভেম্বর মাসজুড়ে পদযাত্রা হয়েছে ডোমকলে। জুগিন্দা থেকে কুপিলা, ডোমকলের মানুষ অতিষ্ঠ পুলিশের অত্যাচারে। থানায় অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে না। থানায় গেলে জুটছে হয়রানি। বাইক ধরা নিয়ে গ্রামের রাস্তায় প্রতিদিন হেনস্তা করা হচ্ছে গ্রামের মানুষকে। হেনস্তার প্রতিবাদে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার দাবিতে ডোমকল থানায় এদিন ডেপুটেশন দেয় সিপিআই(এম)। তার আগে ডোমকল জনকল্যাণ ময়দান থেকে শুরু হয় মিছিল। ডোমকল বাজার, পুরানো বিডিও অফিস পরিক্রমা করে মিছিল রবীন্দ্র মোড়ে শেষ হয় এবং সেখানে সভা হয়। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বসেই নেতৃবৃন্দের ভাষণ শোনেন। আশেপাশের বাড়ির ছাদ থেকে নির্মীয়মাণ বাড়ির বারান্দা, চারদিকেই ছিল মানুষের ভিড়।
সমাবেশে এদিন সেলিম বলেন, বিজেপি আর তৃণমূল যতই সেটিং করুক, বাংলার মানুষ সব কিছু দেখছেন। আর কোনও দালালের দালালি চলবে না। বাংলার মানুষ সব হিসাব বুঝে নেবেন। আমাদের রাজ্যের মানুষের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা তৃণমূল ঠিক করবে না, গুজরাটের বিজেপি নেতারাও ঠিক করবে না। তৃণমূলের চোরেদের পুলিশ ধরলে ভালো, মানুষ ধরলে কিন্তু জামাই আদর করবে না।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, পার্টির জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা, রাজ্য কমিটির সদস্য ধ্রুবজ্যোতি সাহা, শেখ হাসিনা, পার্টিনেতা সচ্চিদানন্দ কাণ্ডারি, ইকবাল হক প্রমুখ। সভায় সিপিআই(এম)’র ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পৌরসভা সর্বত্র লুট চলছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ডোমকলের যা উন্নতি হয়েছিল সেটাই শেষ, তারপরে কিছুই করেনি তৃণমূল। তৃণমূল শুধু লুট আর প্রতারণা করেছে। গডাঙা কমিটির সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, পুলিশকে তৃণমূলের কর্মী হয়ে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। 
সমাবেশে সেলিম বলেন, গ্রামের মানুষের ঐক্য দুর্বল হয়েছে তাই তৃণমূলের চুরি, লুট বেড়েছে। পুলিশ চোরেদের পাহারা দিচ্ছে। এনআরসি, সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের নামে মাদকের মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। সব মামলার হিসাব চাইবেন মানুষ। তিনি বলেন, রাজ্যজুড়ে মানুষ রাস্তায় নামছেন। বামপন্থীদের আন্দোলনে ঘুম উড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তাই দিল্লি থেকে অমিত শাহকে পাঠানো হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি এবং অমিত শাহের মধ্যে কী আলোচনা হলো সেটা বাইরে আনা হচ্ছে না। গোপন আলোচনা নিয়ে সবাইকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে কেন? শাহ এবং মমতার সভায় রাজ্য ভাঙার কথা হচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্তদের বাঁচানোর কথা হচ্ছে। দুয়ারে সরকার’র নাম করে মানুষের তথ্য একত্রিত করেছে রাজ্য সরকার। সেই তথ্য এনপিআর’র কাজে লাগানোর জন্য দু’জনের গোপনে কথা হয়েছে।
মহম্মদ সেলিম বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধানকে শেষ করে দেশকে বিরোধীশূন্য করতে চাইছে আরএসএস। মমতাও একই পথে হাঁটছেন। রাজ্যের সংস্কৃতি, সম্প্রীতি নষ্ট করতে আরএসএস’র কাছ থেকে ঠিকা নিয়েছে তৃণমূল। তিনি বলেন, গ্রামে গ্রামে ক্ষোভ বাড়ছে আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে। এতদিন তৃণমূল নেতারা আবাসের তালিকায় বহুতলের মালিক ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনের নাম তোলাচ্ছিল। এখন চুপি চুপি নাম কেটে দিতে চাইছে। এসব চলবে না। বিডিও’দের উদ্দেশে সেলিম বলেন, আবাস যোজনার তালিকা টাঙাতে হবে। মানুষকে তালিকা দেখাতে হবে। কার নাম আছে, কার টাকা কে পেল, কে নাম তুলতে কতো টাকা নিয়েছে, সব তথ্য গ্রামসভায় জানাতে হবে। গ্রামে গ্রামে নিয়ম মেনে গ্রামসভা করতে হবে। সিপিআই(এম) গ্রামে মজবুত হলে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হবে তৃণমূলের নেতা, পঞ্চায়েতের সদস্য ও প্রধানরা। পঞ্চায়েত থেকে নবান্ন, লুটের সব টাকা আদায় করতে হবে।
সেলিম বলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নের টাকা নিয়েও নয়ছয় হচ্ছে। দশ বছর ধরে সব টাকা মেরেছে তৃণমূল। সংখ্যালঘু উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ থেকে হাসপাতাল, পলিটেকনিক কলেজ কিছুই হয়নি। নির্মাণ শ্রমিকদের সেসের দুশো কোটি টাকা লুট করেছে তৃণমূল নেতারা। বিড়ির সেসের টাকা শ্রমিকদের কল্যাণে কাজে লাগানো হচ্ছে না। কেন্দ্রে বিজেপি বসে আছে বলেই তৃণমূল এতো চুরি, বাটপারি করতে পারছে। চিট ফান্ডের মামলাই সিবিআই জামিনের বিরোধিতা করেনি। সোনা পাচার নিয়ে স্বস্তি পেতে মমতা ব্যানার্জি মোদীর শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু ধর্ম, জাত, ভাষার নামে বিভাজনের কারসাজি আর সফল হবে না, মানুষ সব দেখছেন এবং লুটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন।
এদিন সমাবেশের আগে বহরমপুরে সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেন, আবাস যোজনা স্বজনপোষণের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পঞ্চায়েত নিজেদের কাজ করছে না। ঢাকঢাক গুড়গুড় করে গ্রামসভা সেরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। আশা কর্মী, আইসিডিএস কর্মীদের জেনেশুনে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের এই কাজ করার জন্য কর্মী রয়েছে। দুর্নীতি আড়াল করতে সেই কর্মীদের পঞ্চায়েতের কাজে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
সাংবাদিকদের কাছে সেলিম বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গাফিলতির কারণেই আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহাল দশা। বামপন্থীদের দাবিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আহিরণ শাখা চালু হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র আর্থিক বরাদ্দ কমালেও তৃণমূলের বিধায়ক, সাংসদরা চুপ! তাঁরা এখন ওই জমি দখলের ছক কষছেন। 
এদিন জ্যোতি বসু সমাজ গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মহম্মদ সেলিমের হাতে দশ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন বলরামপুর হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রঞ্জিত কুমার দত্ত।
 

Comments :0

Login to leave a comment