Maynaguri

বন্যা কবলিত ময়নাগুড়িতে বিপাকে বন্যপ্রাণ, উদ্ধার বাইসন সহ একাধিক সাপ

জেলা

গত ৫ অক্টোবর ভারী বৃষ্টি, বন্যা ও ধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গ। বহু মানুষের মৃত্যু হয়। অনেক গবাদি পশুও মারা যায়। শুধু মানুষ নয়, বিপন্ন বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণীরাও। জঙ্গল এলাকার বিভিন্ন নদীতে প্রবল জলচ্ছ্বাসে বহু প্রাণী জলবন্দি হয়ে পড়ে, কেউ বা জলের তীব্র স্রোতে ভেসে যায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জঙ্গল থেকে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসে। সোমবার দুটি গন্ডারকে কোচবিহারের পাতলাখাওয়া বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়। তারপর তাদের জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ছেড়েও দেওয়া হয় বলে বন দপ্তর সূত্রে খবর। সোমবার দুপুরে পরিত্যক্ত কুয়োয় থেকে একাটি বাইসন উদ্ধার করে বন দপ্তর। পরিত্যক্ত চাপরামারি রেল স্টেশন লাগোয়া ব্রিটিশ আমলের এক কুয়োয় পড়ে যায় একটি বাইসনটি। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় চালসা রেঞ্জের বনকর্মীরা। শুরু হয় দীর্ঘ সময় ধরে চলা উদ্ধার অভিযান।
বনদপ্তরের কর্মীরা আর্থ মুভার এনে প্রথমে কুয়োর রিংগুলি খুলে ফেলে। এরপর কুয়োর চারপাশের মাটি সাবধানে খোঁড়া হয়, যাতে বাইসনটি নিজেই বেরিয়ে আসতে পারে। শেষ পর্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিচালিত সেই অভিযানে সাফল্য আসে—বাইসনটি কুয়ো থেকে উঠে নিরাপদে ফের জঙ্গলে ফিরে যায়।
একটি অবলা বন্যপ্রাণকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরে বনাধিকারিক ও কর্মীদের মুখে ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি। এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন চালসা রেঞ্জের এসিস্ট্যান্ট কনজারভেটর অফ ফরেস্ট (এএসএফ) নিতু জর্জ, রেঞ্জার প্রকাশ থাপা এবং নাগরাকাটা বিটের বিট অফিসার মহম্মদ ইমরান আসলাম। এএসএফ নিতু জর্জ জানান, “সাব-এডাল্ট মাদি বাইসনটি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। এমনভাবে গর্ত খোঁড়া হয়েছিল যাতে তার কোনো আঘাত না লাগে।” বনদপ্তরের দ্রুত ও সুচিন্তিত পদক্ষেপে এক প্রাণের রক্ষা সম্ভব হলো।
ওইদিন ময়নাগুড়ি ব্লকের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচটি অজগর, দুটি গোখরো এবং একটি ভাইপার সাপ উদ্ধার করেন বনদপ্তরের রামসাই রেঞ্জের কর্মীরা ও ময়নাগুড়ির পরিবেশপ্রেমী সংগঠন পিপিএস (প্রকৃতি প্রেমী সংঘ)’র সদস্যরা। কোথাও বাঁশঝাড়ের মধ্যে, কোথাও আবার বাড়ির রান্নাঘর থেকে সাপগুলো উদ্ধার করা হয়। এমনকি এক ব্যক্তিকে সাপ ছোবলও মারে, বর্তমানে তিনি ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উদ্ধারকৃত সব সাপকেই পরে গরুমারা জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।


পিপিএসের কর্ণধার নন্দু রায় জানান, “বন্যার ফলে সাপেদের স্বাভাবিক বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই তারা নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসছে। আজ রামসাই রেঞ্জের বনকর্মীদের সঙ্গে মিলে আমরা আটটি সাপ উদ্ধার করেছি এবং নিরাপদে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছি। বনদপ্তরের সঙ্গে আমরা নজর রাখছি যাতে মানুষের ক্ষতি না হয় এবং বন্যপ্রাণীরও নিরাপত্তা বজায় থাকে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পর থেকে ময়নাগুড়ি, রামশাই ও সংলগ্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে। বনদপ্তর এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে মানুষকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment