সোমবার রাজ্যে আরও ৬ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে ৫ জন মৃত্যু বিসি রায় শিশু হাসপাতালেই। একটি শিশু মারা গিয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত ১০ দিনেই অন্তত ৩০টি শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। চলতি মরশুমে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ধরলে বিভিন্ন বেসরকারি তথ্য বলছে, রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে শ্বাসকষ্টে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা একশো ছুঁয়েছে। তবে তা মানতে চায় না সরকার। এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ১৯টি শিশু মারা গেছে। তারমধ্যে অ্যাডিনো ভাইরাসে মারা গেছে ৬ জন, ১৩ জনের শরীরে কোমর্বিডিটিজ ছিল।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার পরিবারের শিশুও অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, করোনা শুরুর সময়ে একইভাবে তথ্য গোপনের খেলায় নেমেছিল নবান্ন, ক্রমাগত চলেছিল মিথ্যা প্রচার। পরে মুখ লুকাতে বাধ্য হয় মমতা ব্যানার্জির সরকার।
এদিন ভোরে ৮ মাসের শিশু আরিয়ান খানের মৃত্যু হয়েছে কলকাতার বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। আনন্দপুরের বাসিন্দা শিশুটির গত বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। এরপরেই মৃত্যুর খবর এসেছে অরূপ বিশ্বাস নামে একটি শিশুর। বয়স ১ মাস, গোবরডাঙা এলাকার বাসিন্দা এই পরিবার। এছাড়া বনগাঁর বাসিন্দা দেব বাড়ুই নামে আরও একটি শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। অন্যদিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৮ মাস বয়সের পিয়ালি মালাকার নামে এক শিশুর। বাড়ি হুগলীর হরিপালে। জানা গিয়েছে, হুগলী ইমামবাড়া হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে রেফার করা হয়েছিল। গত ৭ দিন ধরে তার চিকিৎসা চলছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বিভিন্ন হাসপাতালে একের পর এক শিশু মৃত্যুর খবর সামনে আসছে। তবে হাসপাতালগুলির তরফে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে খবর চেপে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে কলকাতা সহ জেলাগুলিতে।
জানুয়ারি থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে শিশু মৃত্যু। ওই সময় থেকেই থাবা বসিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস। যত দিন গিয়েছে তত চাপ বেড়েছে শিশু হাসপাতালগুলি সহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলির ওপর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করে বলেছিলেন, সমস্ত হাসপাতালগুলিকে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করে প্রস্তুত থাকতে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার কিছুই দেখা যায়নি। বেশিরভাগ সময়ে একই বেডে চিকিৎসা চলছে ২-৩টি শিশুর। সংক্রমিত ফুসফুস থেকে রেহাই দিতে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হয়। তাও অপর্যাপ্ত বিভিন্ন হাসপাতালে।
রবিবার এতগুলি শিশু মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে সাফাই দিয়ে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য জুড়ে যথেষ্টই পরিকাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। এসএনসিইউ বেড রয়েছে ২৫০০-এর বেশি। পিআইসিইউ রয়েছে ৬৫৪টি। এছাড়া রাজ্যে এনআইসিইউ বেড ১২০টি আছে। সম্প্রতি অতিরিক্ত ৭৫টি পিআইসিইউ বেড বিসি রায় হাসপাতালে কার্যকর আছে। ওই হাসপাতালে পরিস্থিতি সামাল দিতে সিনিয়র চিকিৎসকদের নিয়োজিত করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সব ব্যবস্থাই যদি কাজ করছে তাহলে হাসপাতালে বেড মিলছে না কেন, কেন অমিল হচ্ছে ভেন্টিলেটর। চিকিৎসকরা বলছেন, সব পরিকাঠামোই যদি ঠিক থাকত তাহলে এত রেফার কেস বাড়ছে কেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিনও বলেছেন রেফার বন্ধ করতে হবে। তাহলে গ্রামীণ এলাকায় একটি শিশু চিকিৎসা পাবে কী করে? আর বেহাল পরিকাঠামোর ফলে মৃত্যু ঘটলে কম ওজন এবং কোমর্বিডিটিজ তত্ত্ব সামনে আনা হচ্ছে।
Child death
রাজ্যে আরও ৬ শিশুর মৃত্যু, তথ্য গোপনের চেষ্টা মুখ্যমন্ত্রীর
×
Comments :0