ভারতের প্রথম একশো ধনীর সম্পদ কত? ‘অক্সফ্যাম’ তার সমীক্ষা রিপোর্টে বলছে এই সম্পদ পৌঁছে ৫২.১২ লক্ষ কোটি টাকায়। এই টাকায় দেড় বছরের বাজেট বরাদ্দ সামলানো যায়। সমীক্ষার দাবি, ধনীদের বাড়তি সম্পদে কর চাইছেন ৮০ শতাংশ ভারতীয়।
ভারতে গরিবের সংখ্যাও, ঠিক উলটোপিঠে, সবচেয়ে বেশি গোটা বিশ্বে। মোটের অঙ্কে ২২ কোটি ৮৯ লক্ষ দরিদ্র রয়েছেন সরকারি হিসেবেই।
২০২১ সালে ‘ফাইট ইনইকোয়ালিটি অ্যালায়েন্স ইন্ডিয়া (Fight Inequality Alliance India)’র একটি সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে অক্সফাম বলেছে যে ভারতের ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ কোভিড অতিমারী চলাকালীন রেকর্ড মুনাফা অর্জনকারী ধনী এবং কর্পোরেটের উপর সম্পদ কর আরোপকে সমর্থন করে।
মহামারীর সময়েই গোটা বিশ্বে এবং ভারতে বৈষম্য সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘অক্সফ্যাম’। তখনই বলা হয়েছিল ভাইরাস কেবল করোনার নয়, আরও মারাত্মক অসমতার ভাইরাস।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘৯০ শতাংশেরও বেশি ভারতীয় অংশগ্রহণকারীরা বৈষম্য মোকাবেলায় বাজেট ব্যবস্থা যেমন সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যের অধিকার এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক হিংসা প্রতিরোধে বাজেটের সম্প্রসারণের দাবি করেছেন’’।
অক্সফাম বলেছে যে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে এবং শিক্ষার জন্য বাজেটে বরাদ্দ জিডিপির ৬ শতাংশের যে আন্তর্জাতিক মাপকাঠি, তা পূরণ করতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে মতামতও পাঠিয়েছে অক্সফাম। কিন্তু কেন্দ্র তাতে কর্ণপাত করে কিনা সেই বিষয়ে যথারীতি সন্দিহান সংস্থাটি।
এই প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে কম লাভবান হচ্ছেন মহিলা এবং মেয়েরা। বলা হচ্ছে, ‘‘ওঁরা কোটি কোটি ঘন্টা ব্যয় করেন গৃহকর্মে, সন্তানদের দেখাশোনায়, এবং বয়স্কদের সেবাযত্নে। এই বিনা পারিশ্রমিকের কাজ হচ্ছে সেই ‘লুকোনো ইঞ্জিন’, যা সচল রাখে আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, এবং সমাজকে।’’
ভারতে সংস্থার প্রধান অমিতাভ বেহার বলেন, ‘‘অর্থনীতির চালিকাশক্তি হলেন সেইসব মহিলা, যাঁদের শিক্ষালাভের সুযোগ ঘটেনি, যাঁরা শ্রমের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রোজগার করেন না, যাঁদের সমাজ পরিচালনা নিয়ে কোনও মতামত নেই, অতএব তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে একেবারে তলানিতে বন্দি হয়ে আছেন।’’
অক্সফ্যামের বক্তব্য, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির কাছ থেকে অতিরিক্ত রকমের কম ট্যাক্স আদায় করছে বিভিন্ন দেশের সরকার। এই কর আদায় হলে সেবা প্রদানের ভার বহন করতে হতো না মহিলাদের, এবং মোকাবিলা করা যেত দারিদ্র এবং অসাম্যের। এছাড়াও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম সরকারি আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ জন পরিষেবা এবং পরিকাঠামো, যা মহিলা এবং মেয়েদের কর্মভার কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অসমতার বিপদ রয়েছে বিশ্বেও। রিপোর্টে তার উল্লেখ করা হয়েছে। এই নব্য উদারনীতিবাদী বিশ্বায়নের কারণে বিশ্বের ধনীতম দেশগুলোতে বসবাসরত এক-পঞ্চমাংশ জনগণ ও দরিদ্রতম দেশগুলোতে বসবাসরত এক-পঞ্চমাংশ জনগণের মধ্যে আয়ের বৈষম্য ব্যাপক হারে বেড়েছে, ১৯৮০ সালে যেটা ছিল ৪৪:১, ১৯৯৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪:১।
আর আজ এই নীতির কারণে দুনিয়ার ৩৫৮ জন শীর্ষ ধনী ব্যক্তির হাতে ৪৫ শতাংশ গরিব মানুষের সম্পদ জড়ো হয়েছে। আরও মারাত্মক ব্যাপার হলো, বিশ্বের শীর্ষ তিন ধনী ব্যক্তির হাতে সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলোর সম্মিলিত সম্পদের সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে, অর্থাৎ ৬০০ মিলিয়ন মানুষের সম্পদ আছে তাদের হাতে। আজ বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে ৪০ শতাংশ সম্পদ, আর ১০ শতাংশের হাতে আছে ৮৫ শতাংশ সম্পদ। আর নিচের কোটির ৫০ শতাংশের হাতে বিশ্বের মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ রয়েছে।
Comments :0