তীব্র দহন গোটা দেশের বিভিন্ন অংশ। এপ্রিল থেকে শুরু হয় তীব্র গরমের দাপট। প্রতিদিন বাড়ছে তাপমাত্র। গরম আরো বাড়বে বলে পূর্বাভাস আবহাওয়া দপ্তরের। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ বিহার, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, সহ দেশের একাধিক রাজ্য তীব্র দাবদাহে পুড়তে শুরু করেছে। দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য এবং শহরে গরম আরও প্রকট হবে বলে আবহাওয়া দপ্তরের তরফে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প প্রবেশ করছে না। সেজন্য বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হচ্ছে না। ফলে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা এখনই নেই। মে মাস পর্যন্ত এই তীব্র দাবদাহ অব্যাহত থাকবে এমনটাই ইঙ্গিত আবহাওয়া দপ্তরের।
দত্তপুকুরের নিলগঞ্জ রোডের ধারে কাজের ফাঁকে গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ।
পুরুলিয়ায় তীব্র গরমে জল কষ্টে মানুষকে নদীর বালি খুঁড়ে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। প্রত্যেকদিন তাপমাত্রা একটু একটু করে বেড়েই চলেছে। আকাশে নেই একফোঁটা মেঘ। সকাল দশটার পর থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা। বইছে গরম হাওয়া। সন্ধ্যার পর প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বেরোচ্ছেন। কল্যাণ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিষয়বস্তু আধিকারিক সুদীপ্ত ঠাকুর জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কবার্তা। আগামী কুড়ি তারিখের পর সামান্য কালবৈশাখীর সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। গরম যত তীব্র হচ্ছে ততো শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র তীব্র জল কষ্ট দেখা দিচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের জলাশয় গুলিতে জল না থাকার কারণে সামান্য জল সংগ্রহ করতে মানুষকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। কোথাও আবার গরম পড়ত না পড়তেই নল বাহিত পানীয় জলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে গেছে। নদীর বালি খুড়ে খুড়ে সামান্য জল সংগ্রহ করছেন মানুষ। এই তীব্র রোদের তেজে মানুষকে তপ্ত বালির উপর বসে সেই বালি খুঁড়ে ছাকনি দিয়েছে ছেঁকে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি আর ভয়ঙ্কর হচ্ছে। সবাই বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন। তাপমাত্রার পারদ এবার কোথায় গিয়ে যে পৌঁছবে তা বুঝে উঠতে পারছেন না কেউ।
তীব্র গরমে গলা ভেজানোর কলসি কিনে জলহীন দারকেশ্বর নদী পথেই মানুষ বাড়ি ফিরছেন। মধুসূদন চ্যাটার্জি।
তীব্র দহনে জ্বলছে বাঁকুড়াও। এদিন বাঁকুড়ায় তাপমাত্রা ছিল এবছরের রেকর্ড। সকাল ১০ টাতেই ৪১ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে যায়। দুপুরে তা ৪২ডিগ্রি ছাপিয়ে যায়। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে আগামী পাঁচদিন এই তাপমাত্রা আরও বাড়য়ে। গত বিশ বছরে এপ্রিলের মাঝামাঝা সময়ে এই তাপমাত্রায় পৌছায়নি বাঁকুড়ায়।
সকাল ৯ টাতেই বাঁকুড়ার পথ প্রান্তর প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। গরম পড়তে শুরু করেছে মঙ্গলবার থেকেই। বৃহস্পতিবারই মানুষজন ৪১ ডিগ্রিতেই হ্যাঁসপ্যাস করতে থাকে। এদিনের অবস্থা আরও খারাপ উঠেছে। শরীরে ঘাম হচ্ছে অত্যধিক। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হননি রাস্তায়। জেলার নানা প্রান্তে জলাশয় গুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। বাঁকুড়ার অন্যতম বড় দারকেশ্বর নদীতে এক ফোঁটাও জল নেই। একই অবস্থা গন্ধেশ্বরীরও। জল কষ্টের সংকট এখনও দেখা না দিলেও জেলার বহু জায়গায় টিউবওয়েল খারাপ হতে শুরু করেছে। মানুষজন গরমে গাজন তলায় থাকতে না পেরে কলসি, কুঁজো কিনে নদী মাঝ দিয়েই ঘর ফিরেছেন। বিকালেও গরমেরও তেজ রয়েছে।
শুক্রবার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্ভাবাস আগামী পাঁচ দিন একই রকম রকম তাপপ্রবাহ চলবে। তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে টানা মঙ্গলবার পর্যন্ত। যদিও তা বাড়রতে পারে আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তামমাত্রা বাড়তে পারে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলায়। তাপপ্রবাহ চলতে পারে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান এবং কলকাতায়। হাওয়া অসিস জানাচ্ছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকায় আপাতত বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস ৪১ ডিগ্রিতে পৌঁছতে পারে কলকাতাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা । বেলা বাড়লে লু বইবে। গরম বাড়বে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও।
Comments :0