খোদ রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক পঞ্চায়েত নির্বাচনে একের পর এক হিংসা, হামলার ঘটনাকে ‘ছোট ঘটনা’ বলেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যে পুলিশের ডিজি’র এমন দাবির কয়েক ঘণ্টা পরেই দেগঙ্গায় বোমার আঘাতে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গোটা ঘটনায় মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত তীব্র উত্তেজনা, রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। শাসক তৃণমূলের তরফে গোটা ঘটনার দায় সিপিআই(এম) ও আইএসএফ’র ঘাড়ে চাপানো চলছে। 
এই ঘটনার পরে তৃণমূলের তরফেই এখন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের হিংসা, সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগ তোলা শুরু হয়েছে। এমনকি রাজ্যপালও এই ঘটনায় মৃতের কাকা তৃণমূল কর্মীকে ফোন করেছেন। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস, হিংসার ঘটনা যে অব্যাহত তা স্পষ্ট। এই ঘটনা নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের গোটা পর্বে এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হলো।
দেগঙ্গায় মঙ্গলবার রাতে স্কুল ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। এলাকায় পুলিশ পিকেট আছে। গ্রাম থমথমে। তৃণমূল এই মৃত্যুর দায়ভার চাপিয়েছে সিপিআই(এম)-আইএসএফ’র ওপরে চাপালেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দেগঙ্গার সোয়াইশেতপুর অঞ্চলে গাঙহাটি গ্রামে নির্দল প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়েছেন। ওই নির্দল প্রার্থীকে এলাকার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা সমর্থন করছেন। এই আসনে আইএসএফ প্রার্থী আছেন। আছেন তৃণমূলেরও প্রার্থী। নির্দল প্রার্থীকে নিয়েই আতঙ্কিত তৃণমূল।
গত কয়েকদিন ধরেই নির্দল প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে শাসক তৃণমূলের বাহিনীর গন্ডগোল চলছে। মঙ্গলবার রাতে তৃণমূল মিছিল করে ওই গ্রামে, বোমাবাজিও করে। এক দুটো বোমা ফেলার পর নির্দল প্রার্থীর সমর্থক-কর্মীরা তৃণমূলী বাহিনীকে তাড়া করে। তৃণমূলের ওই মিছিলেই ছিলেন ১৭বছর বয়সি ইমরান হাসান। তাঁর বাবা, কাকা সবাই তৃণমূল কর্মী। নির্দল সমর্থকদের পালটা তাড়া খেয়ে মিছিলে থাকা তৃণমূলী বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার সময় বোমা ভর্তি একটি ব্যাগের ওপর পড়ে যান একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র। তাঁর বাবা এমদাদুলও ছিলেন। গুরুতর আহত ইমরানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আরও দুজন আহত হয়েছেন। গ্রামে পুলিশি টহলদারি রয়েছে। 
বারাসত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের বুধবার সকালে বারাসত জেলা আদালতে পাঠানো হলে বিচারক ১৪ দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন। মৃত ইমরান হোসেনের বাবা এমদাদুল হককে এদিন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ফোন করে খোঁজখবর নেন। প্রয়োজনে তিনি আসতে পারেন গ্রামে সে কথাও জানান। সিপিআই(এম)’র তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। বরং নির্বাচনী পর্বে শাসক তৃণমূলই বহিরাগত দুষ্কৃতী নিয়ে এসে এলাকায় অশান্তির পরিবেশ তৈরি করছে। তবে যাই ঘটুক, একজন স্কুলছাত্রের মৃত্যু দুঃখজনক ঘটনা।
দেগঙ্গায় খুনের ঘটনায় বামপন্থীদের ওপরে শাসকদলের দোষারোপ সম্পর্কে এদিন মালদহে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, এসব পুলিশের সাজানো। তৃণমূল খুন করছে, পুলিশ সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে মামলা সাজাচ্ছে। তৃণমূল তৃণমূলীদের খুন করলেও বাম, কংগ্রেস, আইএসএফ’র কর্মীদের নামে মামলা করা হচ্ছে। তৃণমূলের ক্ষমতা কমে গেছে, তাই এখন পুলিশকে দিয়ে ওরা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে বামফ্রন্ট প্রার্থী, এজেন্ট কর্মীদের হেনস্তা করছে, হুমকি দিচ্ছে।
Deganga
তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে দেগঙ্গায় নিহত যুবক
 
                                    
                                
                                    ×
                                    ![]() 
                                
                                                         
                                         
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
Comments :0