Aliah University

আলিয়ার সমস্যা নিয়ে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিকদের সামনে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের

রাজ্য

পরিকাঠামো গত উন্নয়ন, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ সহ একাধিক দাবিতে সোমবার সকালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা। সোমবাত আলিয়ায় মাদ্রাসা এডুকেশন বোর্ডের একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তর এবং মাদ্রাসা এডুকেশন বোর্ডের আধিকারিকরা আসেন। তাদের সামনেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্র ছাত্রীরা। তাদের দাবি আলিয়ায় যেই সব বিভাগ গুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে তা অবিলম্বে চালু করতে হবে। তার সাথে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে সরকারকে। 


উল্লেখ্য আলিয়ায় উপাচার্জ নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা চলছে। রাজ্য সরকার নিজেদের পছন্দ মতো আবু তাহের কামরুদ্দিনকে উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করে। কিন্তু একজন উপাচার্য হওয়ার জন্য যা যা যোগ্যতার প্রয়োজন তার কোনটাই কামরুদ্দিনের ছিল না। এছাড়া সার্চ কমিটি গঠন না করেই উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। এদিন পড়ুয়াদের বিক্ষোভ চলাকালিন তাদের সাথে আলাদা ভাবে কথা বলেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের একজন আধিকারিক। পড়ুয়ারা তাদের দাবি ওই আধিকারিকের সামনে তুলে ধরেন। তারা জানান যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ বন্ধ, নিউ টাউন ক্যাম্পাস এবং পার্ক সাকার্স ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় তাদের বিভিন্ন প্রশাসনিক বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে।


আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবি রাজ্য সরকার পরিকল্পিত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে চাইছে। দু’বছর ধরে পিএইচডি বন্ধ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। নেট, জেআরএফ-র মেয়াদ শেষ হতে চলেছে কয়েক জনের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন পিএইচডি নোটিফিকেশন প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। চার বছর ন্যাকের প্রতিনিধিরা আসেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে। 
শুধু গবেষণার সমস্যা নয়। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানের বহু বিষয় পড়ানো হয় না। যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা, দর্শন। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়  ২০০৮ থেকে পথ চলা শুরু আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। ২০১১’তে তৃণমূল সরকারে আসীন হওয়ার পর থেকে সমস্যা দেখা দিতে থাকে আলিয়ায়।  
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে ২৯৭ জনের শিক্ষক পদ তৈরি হয়। এ পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৭২ জনের। এখনও ১২৫টি পদ শূন্য। ১১ বছরে মাত্র ৩৮ জন অধ্যাপক নিয়োগ করেছে তৃণমূল সরকার। শিক্ষা দপ্তর নতুন কোনও বিভাগও খোলেনি।


ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোন বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান খতিয়ে দেখার জন্য তিন বছর অন্তর ‘ন্যাক ভিসিট’ হয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে। কিন্তু চার বছর হয়ে গেলেও আলিয়াতে ন্যাকের প্রতিনিধি দল আসেনি। ২০১৮ সালে ইউজিসি’র একটি প্রতিনিধি দল ১২ বি অনুমোদন দেয় আলিয়াকে। তার তিন বছরের মধ্যে ন্যাক ভিজিটের কথা থাকলেও হয়নি। আর ন্যাকের প্রতিনিধি দল না এলে বাতিল হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি অনুমোদন। 
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মোট পড়ুয়া প্রায় সাত হাজার, সেখানে হোস্টেলের সুযোগ পায় প্রায় ১৩০০-র মতো শিক্ষার্থী। কলকাতার বাইরের জেলা থেকে যেই সব ছাত্র ছাত্রীরা ভর্তি হচ্ছেন তাদের থাকার ক্ষেত্রে রয়েছে সমস্যা। হোস্টেলে পর্যাপ্ত সিট না থাকার কারণে ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। 


বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি খালি পড়ে থাকলেও পার্ক স্ট্রিট ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় এখনও কোন হোস্টেল তৈরি হয়নি। পড়ুয়াদের জন্য নেই কোন খেলার মাঠও। সূত্রের খবর ইতিমধ্যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জমি চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের পাশে রয়েছে যা খেলার মাঠ এবং হোস্টেল করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই জমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার জন্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে বারবার চাপ সৃষ্টি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর।   
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দাবি ২০১৬ সাল থেকে ওই জমিতে প্রস্তাবিত পরিকাঠমো গড়ে তোলার জন্য দফায় দফায় কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ তাঁরা হয়েছেন। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা এখন দাবি করছেন প্রয়োজনে নিউ টাউনে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও ১০ বিঘা জমি বরাদ্দ করতে হবে রাজ্য সরকারকে হোস্টেল এবং খেলার মাঠের জন্য। 
২০ কোটি টাকা দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শাসকের কাছ থেকে বানতলা এবং ঘটকপুকুর এর মাঝামাঝি জমি নিয়ে গড়ে ওঠে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। রাজারহাটে ১৫ একর জমিতে তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নার্সিং কলেজ। 


পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল সামাজিক ও আর্থিক বিচারে বঞ্চিত অংশের পড়ুয়ারা যাতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়। সেই লক্ষ্যেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগ তৈরির পেছনে মূল লক্ষ্য ছিল পড়ুয়ারা যাতে পড়া শেষ করে ক্যাম্পাসিং এর মাধ্যমে চাকরি পান। পড়ার খরচের ৯০% বহন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

Comments :0

Login to leave a comment