এপ্রিল মাসেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট করার প্রস্তুতি নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে তেমনই খবর পাওয়া যাচ্ছে।
নবান্নের শীর্ষ মহল থেকে জানা গেছে, মার্চ মাসেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হতে পারে। মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পার করে ভোট বিজ্ঞপ্তি জারি করা হতে পারে বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে। পঞ্চায়েত আইনে ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির করার ন্যূনতম ২৪ দিন সময় হাতে নিয়ে ভোট করার আইন। সেই হিসাব ধরলে রাজ্যে আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে পঞ্চায়েত ভোট হতে চলেছে।
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চ মাসের পুরোটাই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলবে। ফলে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট করার কোনও অসুবিধা নেই। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোট নিয়ে সরকারের তরফে কোনও বার্তা এখনও যায়নি। তবে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে ভোট প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন করে রাখা হচ্ছে। এদিনই রাজ্য নির্বাচন কমিশন আগামী পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে ভোটার তালিকা সহ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের আসনের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। খসড়া প্রস্তাব আগামী ১০ মার্চ চূড়ান্ত করা হবে। ফলে ১০ মার্চের পরবর্তী যে কোনও সময়ে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা নিয়ে কার্যত কোনও অসুবিধা নেই।
এর আগে শীতকালের মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট পর্ব সম্পন্ন করার ভাবনাচিন্তা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। আসলে নবান্ন ভেবেছিল, ১০০দিনের কাজের টাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কেন্দ্রের তরফ থেকে বরাদ্দ টাকা রাজ্যে চলে আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে এখন রাজ্যের পরিকল্পনায় আছে দুয়ারে সরকার শিবিরে বিভিন্ন পরিষেবা প্রাপকদের হাতে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। সেইজন্য গত এক মাসে উত্তরবঙ্গ সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলাতে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থেকে দুয়ারে সরকার শিবিরে নাম লেখানো উপভোক্তাদের হাতে পরিষেবা তুলে দিয়েছেন। একইসঙ্গে সরকারি কর্মসূচি থেকে জেলাস্তরে শয়ে শয়ে প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী গত সোমবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে শেষ সরকারি পরিষেবা বণ্টন কর্মসূচি করেছিলেন। ওই অনুষ্ঠান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি ফের জেলা সফরের কর্মসূচি রাখবেন। রাজ্যে আগামী ২৭মার্চ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হচ্ছে। তারপর আরও দু’দিন বাড়তি সময় হাতে নিয়েছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলই বাইরে প্রচার কর্মসূচি নিতে পারবে না। পরীক্ষার পর এপ্রিল মাসের শুরু থেকে এই সুযোগ পাওয়া যাবে। মুখ্যমন্ত্রীও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি ফের জেলা সফরে যাবেন। ফলে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে।
এমনিতেই নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ তৈরি করে নিয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। গত দু’মাস আগে থেকে ক্যামাক স্ট্রিটে সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির দপ্তরে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট প্রস্তুতি নিয়ে সব জেলার নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়ে গেছে। এরপর ‘দিদির দূত’ কর্মসূচি করে গ্রামীণ এলাকায় দলের প্রভাব থেকে মানুষের ক্ষোভের কারণগুলি চিহ্নিত করে নিয়েছে শাসক দল। প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলগুলিকে নির্বাচনে নামার প্রস্তুতি না দিয়েই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বাজিয়ে দিতে চায় রাজ্য সরকার।
Comments :0