MIGRANT WORKER DEATH

মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাড়ে ভিনরাজ্যে কাজে, সিতাইয়ের গ্রামে দেহ ফিরল তরুণের

রাজ্য জেলা

migrant worker death news odisha cooch behar cpim surjya kanta mishra bengali news সইদুলের বাড়িতে প্রতিবেশিদের ভিড়

ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত সইদুল মিয়ার দেহ সিতাইয়ে ফিরল। মৃত এই যুবকের দেহ কোচবিহারে পাঠাতে ওডিশা সরকার দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র এবং পার্টির ওডিশা রাজ্য সম্পাদক অলিকিশোর পট্টনায়েকের চেষ্টায় মৃতদেহ সিতাইয়ের গ্রামে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। 

ওডিশার খুরদায় কাজে গিয়েছিলেন সিতাইয়ের বড় আদাবাড়ি গ্রামের যুবক সইদুল মিয়া (২১)। মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে সাড়ে চার মাস আগে আরজি ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজে যোগ দিয়েছিলেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইলেক্ট্রিক পোলের ওপর থেকে পড়ে তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় খুরদা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে। সইদুলের সঙ্গী বন্ধুরা সিতাইয়ে ওর বাবা সায়েদ আলি মিয়াকে ফোন করে এই মর্মান্তিক খবর জানায়। তিনি যোগাযোগ করেন এলাকার সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। 

পরিবারের পাশে দাঁড়ান সূর্য মিশ্র। তিনি ওডিশায় পার্টি রাজ্য সম্পাদক অলিকিশোর পট্টানায়েকের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরেই পার্টির ওডিশা রাজ্য সম্পাদক ও পার্টি নেতা সুরেশ পাণিগ্রাহি খুরদায় গিয়ে হাসপাতালে যোগাযোগ করেন এবং দেহ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেন। মৃতের আপৎকালীন ক্ষতিপূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সাথে আলোচনায় বসেন তাঁরা। প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে কোম্পানি মৃতদেহ সিতাইতে পাঠানোর ব্যবস্থা এবং দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। ওডিশার পার্টি নেতৃত্ব মৃতদেহ সিতাইয়ের গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হন।

শুক্রবার দুপুরে সইদুলের মৃতদেহ গ্রামে পৌঁছুতেই শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে গোটা গ্রাম। মৃতের বাবা সায়েদ আলি মিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, ওর মায়ের পা ভেঙে যাওয়ায় টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। এমনিতে গ্রামে এখন কাজ নেই। জবকার্ড থাকলেও সেটি নাকি বাতিল হয়ে গেছে (ডি-অ্যাক্টিভ)। মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতেই ছেলেটা বাড়ি ছেড়ে অত দূরে কাজে গিয়েছিল। মৃতের মা মহিলা বিবি চলাফেরা করতে পারেন না। কাঁদতে কাঁদতে তিনি জানালেন, দুর্ঘটনার আগের দিন রাতেও ছেলে ফোন করে বলেছিল,‘‘মা আর কদিন কষ্ট করো, টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরব। তোমার পা ভালো হবে। আজ ছেলেটাই লাশ হয়ে গেল।’’ 


এদিনই শেষকৃত্য হয় সইদুলের। কবরে মাটি দিতে জড়ো হয়েছিল গোটা পাড়া। ছিলেন সিপিআই(এম) জেলা সদস্য আকিক হাসান। তিনি বলেন, ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে এর আগেও সিতাইয়ের একই গ্রামের ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গ্রামে কাজ নেই। ভিনরাজ্যে গিয়ে ন্যূনতম সামাজিক সুরক্ষা পান না শ্রমিকরা। এর দায় রাজ্যের সরকার এড়াতে পারে না। রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ থাকলে, জবকার্ড ডি-অ্যাক্টিভ না হলে এই অকালমৃত্যু হত না।


 

Comments :0

Login to leave a comment