CPI-M district conference Pashchim Medinipur

বামপন্থাকে রুখতে সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার বিজেপি-তৃণমূল: পশ্চিম মেদিনীপুর সম্মেলনে ভট্টাচার্য

রাজ্য জেলা

সিপিআই(এম) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। ছবি: চিন্ময় কর

চন্দন দাস: খড়গপুর

১৯৩৮-এ যেখানে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম জেলা সম্মেলন হয়েছিল, সিপিআই(এম)’র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৫তম জেলা সম্মেলন হচ্ছে, সেই খড়গপুরেই। 
তখন জেলা আরও বিস্তৃত ছিল। তখন, সেই ১৯৩৮-এ দেশ পরাধীন ছিল। তখন, তার আগের বেশ কিছু বছরের মতো দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে মেদিনীপুরের গ্রাম, শহর দেশপ্রেমের মশাল হয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামী, কিংবদন্তি সুকুমার সেনগুপ্ত তখন জেলে ছিলেন। জেল থেকে বেরিয়েই মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের নির্দেশে চলে এসেছিলেন এখানে, যেখানে ক্ষুদিরাম বসুর মতো অনেক কিশোর, যুবক দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে আত্মবলিদানের জন্য তৈরি ছিলেন মশালের মতো। 
সেই সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে এদিন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য জেলার গৌরবময় অতীতের উল্লেখ করেছেন। আর বলেছেন ভবিষ্যতের কথা। নতুন প্রজন্মকে কীভাবে আরএসএস মননের জগতে ধ্বংস করে দিতে চাইছে, সেই আলোচনার পথেই ভট্টাচার্য বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদের বড় বাজার আমাদের দেশ। সে তা কিছুতেই হারাতে চায় না। তার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা বামপন্থা। ভারতে সাম্রাজ্যবাদের বাজার বিঘ্নিত হতে পারে যদি বামপন্থা আরও শক্তিশালী হয়। তাই ভারতে যাতে বামপন্থা এগতে না পারে তার জন্য সাম্রাজ্যবাদ সবসময় তৎপর। ওরা জানে ভারতে বামপন্থার অন্যতম উৎস পশ্চিমবঙ্গ। তাই পশ্চিমবঙ্গে যাতে বামপন্থা, বিশেষত সিপিআই(এম)’র পুনর্জাগরণ না হতে পারে তার জন্য সাম্রাজ্যবাদ সবসময় তৎপর। এই কাজে সাম্রাজ্যবাদের সবচেয়ে বড় দুই শক্তি বিজেপি-আরএসএস এবং তৃণমূল। এই দুই শক্তি হাতে হাত মিলিয়ে চলছে। সুতরাং এই দুই শক্তি, তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। জাতীয় ক্ষেত্রে আরএসএস, বিজেপি’কে রোখা আমাদের প্রধানতম কাজ। আর বাংলার মাটিতে সেই কাজ সুনিশ্চিত করতে গেলে তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই শক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। 
এদিন সম্মেলনের শুরু হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। খড়গপুরের অন্ধ্র হাইস্কুলে হচ্ছে সম্মেলন। সম্মেলন উপলক্ষে এলাকার নাম হয়েছে কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি-কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগর। সম্মেলনের মঞ্চ নামাঙ্কিত হয়েছে জেলার দুই প্রয়াত নেতা কমরেড হরেকৃষ্ণ সামন্ত ও কমরেড নির্মল ঘোষের নামে। অন্ধ্র হাইস্কুলের মাঠে এদিন লাল পতাকা উত্তোলনের আগে হয় গণসঙ্গীতের সঙ্গে ব্যালে উপস্থাপনা। হয় মার্চপাস্ট। ড্রোনের মাধ্যমে পুষ্পবৃষ্টি হয়। পতাকা উত্তোলন করেন পার্টির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক, প্রবীণ নেতা দীপক সরকার। শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানান বিমান বসু, দীপক সরকার, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সম্পাদক প্রদীপ সরকার, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, পার্টিনেতা পুলিনবিহারী বাস্কে, গীতা হাঁসদা, সুশান্ত ঘোষ, তাপস সিনহা, পার্টির ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক বিজয় পাল প্রমুখ। যাঁদের নামে মঞ্চ হয়েছে, তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন। সম্মেলনে আছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং রাজ্য কমিটির সদস্য ময়ূখ বিশ্বাস। 
আগামী ২০ এপ্রিল রাজ্যের শ্রমজীবীরা ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, শ্রেণিসংগ্রামের ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এই লড়াইগুলি। 
এদিন সম্পাদকীয় প্রতি বেদন পেশ করেছেন পার্টির জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বিজয় পাল। প্রতিবেদনের উপর আলোচনা শুরু হয়েছে। 
গীতা হাঁসদা, অশোক সাঁতরা, কমল পলমল এবং মুস্তাফা বক্সকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী সম্মেলন পরিচালনা করছে। এদিন শোক প্রস্তাব পাঠ করেন অশোক সাঁতরা।

Comments :0

Login to leave a comment