ব্রাজিলে সংসদ ভবন, সুপ্রিম কোর্ট, রাষ্ট্রপতি ভবনে আক্রমণের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। গণতন্ত্র রক্ষা ও নির্বাচিত সরকারের পাশে দাঁড়াতে স্থানীয় সময় সোমবার থেকেই লাগাতার মিছিল, জনজমায়েত হচ্ছে শহরগুলিতে।
রবিবার রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় থ্রি পাওয়ার্স প্লাজায় ওই তিন ভবনে পরাজিত রাষ্ট্রপতি বোলসোনারোর সমর্থকরা হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় ওই তিন ভবনের ভেতরেই। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা রক্ষীরা হামলাকারীদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হলেও এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাসিলিয়ায় ফিরে এসে রাষ্ট্রপতি লুলা রাষ্ট্রপতি ভবনে যান, সুপ্রিম কোর্টেও যান।
সেখানেই মঙ্গলবার মন্ত্রীসভার বৈঠক হয়েছে, দেশের প্রাদেশিক গভর্নরদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। গভর্নররা সকলেই এই হামলার কড়া নিন্দা করেছেন। বৈঠকে লুলা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, ফ্যাসিস্তদের এই হামলা সহ্য করা হবে না। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্রাসিলিয়ার পুলিশ গাফিলতি করেছে। আমরা দেখেছি কারা এই গাফিলতি করেছেন। আমরা স্বৈরাচারী মনোভাব নেব না কিন্তু শিথিলতাও দেখাব না। ইতিমধ্যে ১৫০০-র বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
{Ad}
অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের চূড়ান্ত দফায় লুলা জয়ী হবার পরেই দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বোলসোনারো সমর্থকরা। ১ জানুয়ারি লুলা শপথ নেন। ব্রাসিলিয়ায় রীতিমতো শিবির তৈরি করে ছিলেন বোলসোনারো সমর্থকদের একাংশ। সোমবার রাতের মধ্যেই সব শিবির ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। কারা এই হামলাকারীদের মদত যুগিয়েছে, কারা অর্থ যোগান দিয়েছে তার তদন্ত শুরু হয়েছে। লুলা জানিয়েছেন, এদের শাস্তি পেতে হবে।
{Ad}
একই সঙ্গে রাস্তায় নেমে গেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সাধারণ মানুষ। সাও পাওলোতে বিশাল মিছিল ও সভা হয়েছে। পাউলিস্তা অ্যাভিনিউতে হাজার হাজার মানুষের স্রোত বয়ে গেছে। স্লোগানের সঙ্গে গান-নাচেও গণতন্ত্র রক্ষার শপথ নিয়েছেন মানুষ। বহু মানুষেরই পরনে ছিল লাল রঙের পোশাক। ব্যানারে লেখা ছিল: অভ্যুত্থানকারীদের কোনো ক্ষমা নয়, বোলসোনারোকে জেলে ভরো।
সেই মিছিল অংশগ্রহণকারী যুবক গ্যাব্রিয়েল সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ব্রাসিলিয়ায় যা ঘটেছে তা দুঃস্বপ্ন। গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্র ধ্বংস করা চলে না। ব্রাজিলের মানুষ নির্বাচিত সরকারের পাশে রয়েছে। গণতন্ত্রের পাশে রয়েছে। পোর্তো আলেগ্রেতে শ্রমজীবী মানুষ পথে নেমে এসেছেন। লুলার ছবি, পোস্টার নিয়ে সেই জনস্রোতে দেখা গেছে পরিবারের সদস্যরা সকলেই সামিল হয়েছেন। মানাউস, আলাগোয়াস, ব্রাসিলিয়াতে দিনভর প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।
ব্রাজিলের কমিউনিস্ট পার্টি বলেছে, গণতান্ত্রিক সংস্থার ওপরে আক্রমণ হচ্ছে। প্রশাসনের মধ্যে থেকেই কিছু ব্যক্তি এই হামলায় মদত যুগিয়েছে। এখনই তদন্ত করে তাদের শাস্তি দিতে হবে। এখনই জনগণের আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঐক্যবদ্ধ জবাব দেওয়া জরুরী। ফ্যাসিস্তদের জিততে দেওয়া যাবে না।
একের পর এক সামাজিক সংগঠন এই আক্রমণকে সন্ত্রাসবাদী হামলা বলে চিহ্নিত করে বলেছে, গণতন্ত্রের ওপরে আর কোনো আক্রমণ হতে দেওয়া যাবে না।
এদিকে, যাঁর মদতে এই আক্রমণ সেই বোলসোনারো এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। লুলা শপথ নেওয়ার আগেই তিনি সেখানে পালিয়ে গিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি সেখানেই একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তলপেটে ব্যথা হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ও গ্লোবো টেলিভিশনে দেখা গেছে তিনি হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে হাসছেন।
বোলসোনারো রবিবারের আক্রমণের সঙ্গে নিজের সংশ্রব অস্বীকার করলেও ঘটনার নিন্দাও করেননি। ‘ট্রাম্পের শিষ্য’ বলে পরিচিত বোলসোনারো যখন পালিয়ে ফ্লোরিডায় যান তখনও তিনি আইনত দেশের রাষ্ট্রপতি। তাঁকে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। সেই সুরক্ষা এখনও বজায় আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। তবে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের দক্ষিণপন্থীদের ঘাঁটি ফ্লোরিডা। সেখান থেকে কিউবা, ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া, চিলির বামপন্থীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত তৎপরতা চালানো হয়। ফ্লোরিডার মার্কিন দক্ষিণপন্থীরা বোলসোনারোকে সহায়তা ও মদত যোগাচ্ছেন।
Comments :0