আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। এদিকে প্রায় প্রতিদিনই সেখানে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করছেন কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম ফেলে দুই সর্ব ভারতীয় নেতার ধ্যান জ্ঞান এখন শুধু ত্রিপুরা। বিজেপি রাজ্যে স্তরের কোনও নেতা নেই, তাই বারবার ছুটে আসছেন দেশের দুই শীর্ষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পাঁচ বছরের কোনও কাজের খতিয়ান নেই যা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেন ত্রিপুরা রাজ্যের বিজেপি নেতৃবৃন্দ। সেই কারণে দিল্লিই ভরসা, বলছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর পরিবর্তে গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ ও আসাম থেকে পুলিশকে আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনির দাবিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে ডেপুটেশনও দিয়েছে বামফ্রন্ট। যদিও কমিশন অবশ্য সে কথায় কর্ণপাত করেনি। বরং বিজেপির হয়েই কাজ করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
সেই একই প্রতিশ্রুতি সেই একই কথা। পাঁচ বছর আগেও যা বলেছিলেন বিজেপি নেতারা, ডবল-ইঞ্জিনের সরকার বিশাল পরিবর্তন আনবে ত্রিপুরাতে। কিন্তু বাস্তবে তা কিছুই হয়নি। কর্মসংস্থান হয়নি, বেড়েছে সন্ত্রাস, কমেছে সরকারি স্কুলের সংখ্যা, অধিকাংশই চলে গেছে বেসরকারি হাতে। এছাড়া সারা দেশে যা করেছে বিজেপি, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব তো রয়েছেই। ত্রিপুরা গত পাঁচ বছরে পায়নি একটি বাড়তি কোনও কিছুই। সঙ্গে ছিল নিত্যদিন মানুষের ওপর আক্রমণ, তাঁদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। কিন্তু সেই সমস্ত চোখ রাঙানি ও প্রতিকুলতাকে অতিক্রম করে বিজেপির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছে সাধারণ মানুষ।
কিন্তু সাধারণ সেই ভোটারদের ভোট না দিতে বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলি থেকে পুলিশ আনছে বিজেপি। সহায়তা করছে নির্বাচন কমিশন। ভিন রাজ্যের মানুষকে নিয়ে আসছে যাতে তারা ভোটের দিন বুথ দখল করে ভোট লুঠ করতে পারে। সেই চক্রান্ত বুঝতে পারছেন ত্রিপুরাবাসী। তাদের ভোট দিতে আটকাবে বিজেপি, তাই এখন থেকেই প্রতিবাদের পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছে ত্রিপুরা।
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাত বলেন ‘মানুষ তো ঠিক করে নিয়েছে বিজেপি বিরুদ্ধে ভোট দেবে। কিন্তু ওরা (বিজেপি) গুজরাট থেকে আসাম থেকে বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসছে। যেটা আগে কোনওদিন দেখা যায়নি। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে বিজেপি ঘাবরে গেছে। তবে মানুষ শাহসের সঙ্গে ভোট দেবে।’
সিপিআই(এম)’র ওই লাল পতাকাই ছিল শান্তির জায়গা বলছেন প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ। বিজেপির বঞ্চনার শিকার তারা আর হতে চায় না। এবার চায় সাধারণ মানুষের সরকার। যারা তাদের কথা বলবে, তাদের হয়ে লড়বে। চোখ রাঙিয়ে বা হুমকি দিয়ে নয় বরং পাশে এসে দাড়াবে। মঞ্চ থেকে নয় নেতা নেত্রীরা তাদের কাছে গিয়ে তাদের কাছে যাবেন। ত্রিপুরার প্রায় সর্বত্রই মানুষকে দেখা যাচ্ছে বিজেপির বিরোধী পথে নামতে।
রবিবার গোমতি জেলার কিল্লায় বামফ্রন্ট-কংগ্রেস মনোনিত প্রার্থী নরেশ জমাতিয়ার সমর্থনে পদযাত্রায় হাটেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্যা বৃন্দা কারাত। তাঁর সঙ্গে লাল-সাদা বেলুনে সুসজ্জিত তোরণ নিয়ে মিছিল হাঁটলেন গ্রামের সাধারণ মানুষ, মহিলা থেকে স্কুল কলেজ পড়ুয়া কচিকাচার দল। জনজাতি প্রধান এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই মিশে গেলেন সর্বভারতীয় এই নেত্রী। গানে স্লোগানে লম্বা মিছিল চলে এক হাতে টিলা আরেক দিকে ছোটো ছড়াকে (ছোট নদী) রেখে। তবে শুধু কিল্লা নয় ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপিকে হারিয়ে বাম-কংগ্রেস প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন সিপিআই(এম) নেতা, নেত্রী থেকে কর্মী সমর্থকরা।
Comments :0