দেবাশিস মিথিয়া
মোদী-৩ সরকার, নতুন করে বিনামূল্যে সুরক্ষিত চাল (ফোর্টিফাইড রাইস) বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মাধ্যমে এই চাল জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের আওতাভুক্ত গরিব মানুষ প্রতি মাসে অতিরিক্ত ৫ কেজি চাল পাবেন। আবার কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক, সস্তায় চাল ও আটা বিক্রি করবে এই মর্মে গত ৪ নভেম্বর একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে। উদ্দেশ্য সরকারি গুদাম থেকে খোলা বাজারে শস্য বিক্রি করে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। খরিফ মরশুমের ধান কাটা চলছে, কৃষি মন্ত্রকের আশা, ভালো বর্ষার কারণে ২০২৪-২৫ খরিফ মরশুমে প্রায় ১২ কোটি টন চাল উৎপাদন হতে পারে। বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে ফলে দামও কমবে। তবে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশবাসীর দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে সবজির মূল্যবৃদ্ধি। সরকার উত্তর ভারতের অনেক জায়গায় কিয়স্ক করে টম্যাটো, পেঁয়াজ সহ আনাজ বিক্রি করেছে কিন্তু মূল্যবৃদ্ধিকে বিশেষ বাগে আনতে পারেনি। ফলে ভরতুকিতে শুধু চাল এবং আটা বিক্রি করে সামগ্রিক ভাবে দামের ঝাঁজ কতটা নিয়ন্ত্রণে আসবে, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। প্রতিদিন দাম বাড়ছে আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, টম্যানটো, কাঁচা লঙ্কা ও অন্যান্য সবজির। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে ডাল, তেল, নুন, ওষুধ সহ বিভিন্ন জিনিসের। যার প্রভাব পড়ছে সংসার খরচে এবং উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে যাঁরা দিন আনেন দিন খান।
এই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা যা উপার্জন করছেন তার পুরোটাই জীবনধারণের জন্য খরচ হয়ে যাচ্ছে। ফলে চিকিৎসা, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে খরচ করার মতো অতিরিক্ত কিছু থাকছে না।
‘জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস’ বা এনএসও প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার এবছর সেপ্টেম্বরে ৫.৪৯ শতাংশে পৌঁছেছে যা গত নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সাধারণ মুদ্রাস্ফীতিতে, খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির অংশ ৪০ শতাংশের বেশি তাই খাদ্যদ্রব্যের (বিশেষ করে ফল ও সবজির) দাম বৃদ্ধির কারণেই মুদ্রাস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগতি। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরে ৯.২৪ শতাংশে পৌঁছায়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৬.৬৩ শতাংশ। ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন সার্ভিসেস অব ইন্ডিয়া লিমিটেড বা ক্রিসিল-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতির জন্য সবজি, ফল, চিনি এবং ডালের দামের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিকেই দায়ী করা হয়েছে। টম্যাজটো, আদা এবং বেগুনের দাম আগেই বেড়েছিল, পরবর্তীতে পেঁয়াজ, রসুনের দাম বৃদ্ধির ফলে খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়ে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা খাদ্যদ্রব্যের দাম আরও বাড়বে। বৃষ্টির খামখেয়ালিপনা, ফসল ওঠার আগে হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি, দেশের অনেক জায়গায় বন্যা— এই সব কারণে ফসলের উৎপাদন কমেছে। বিশেষ করে নষ্ট হয়েছে সবজি। ফলে জোগানের অভাবে স্বাভাবিক কারণেই দাম বাড়বে সবজি সহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি। এছাড়াও পশ্চিম এশিয়ার অশান্তি ইতিমধ্যেই বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দামকে বাড়িয়ে রেখেছে। যুদ্ধের কারণে পণ্যের জোগানও ধাক্কা খেয়েছে। এগুলিও মূল্যবৃদ্ধির জন্য অনেকটা দায়ী ।
খাদ্যদ্রব্যের দামবৃদ্ধি ও কৃষক
সবজির দাম বৃদ্ধিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে। কিন্তু ফসলের দাম বাড়লে চাষির অন্তত আয় বাড়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে কোথায়? বাস্তব উল্টো কথা বলছে। সাধারণ মানুষ যে দামে কৃষিপণ্য কেনেন তার প্রায় অর্ধেক দামও চাষি পান না। চাষি থেকে ক্রেতা পর্যন্ত ফসল পৌঁছাতে অনেকগুলি স্তর পেরোতে হয়। প্রতি স্তরেই দাম বাড়তে থাকে। তথ্য কি বলছে, দেখে নেওয়া যাক। ভারতে সবজি বাজারের মূল্য শৃঙ্খলে দেখা গেছে, ক্রেতা যে দামে বাজার থেকে সবজি কিনছেন চাষি তার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পান। চাষি ফসল বিক্রি করার পর কোথাও ফড়ের হাত ঘুরে আড়তদারের কাছে যায় আবার কোথাও সরাসরি আড়তদারের কাছে পৌঁছায়। সেখান থেকে খুচরো বিক্রেতা হয়ে ক্রেতার কাছে যেতে প্রায় ৫০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ দাম বেড়ে যায়। এর বাস্তবতা কতখানি দেখা যাক।
বাঁকুড়ার কোতলপুর ব্লকের লাউগ্রাম ও মদনমোহনপুর অঞ্চলে দারকেশ্বর নদের চর বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আদা চাষ হয়। লাউগ্রাম অঞ্চলের আদা চাষি অভিজিৎ মাজি, এবছর জমি থেকেই আদা বিক্রি করেছেন ৭০ টাকা প্রতি কেজি। সেই আদা যে কোনও শহরের বাজারে কিনতে গেলে দাম পড়বে কেজি পিছু ১২৫-১৫০ টাকা।
মদনমোহনপুর অঞ্চলের বেগুন চাষি বিদ্যুৎ মণ্ডল, বাড়ি থেকে আড়তদারকে ৩০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করেছেন। কোলকাতার খুচরো বাজারে সেই বেগুনের দাম কেজিতে ৮০-১০০ টাকা।
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গার লঙ্কা চাষি দিবাকর মাজি, লঙ্কা বিক্রি করে পেয়েছেন কেজিতে ৩০ টাকা। সেই লঙ্কাই যেকোনও বাজারে ৮০-১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ঘটনাগুলি থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার কৃষক ও ভোক্তার (চূড়ান্ত ক্রেতা) মাঝের স্তর যত কমবে ততই লাভ কৃষক এবং ভোক্তা উভয়ের।
কৃষক ও ভোক্তা সরাসরি কেনাবেচা
কৃষকদের সঙ্গে ভোক্তাকে সরাসরি যুক্ত করতে পারলে— কৃষক তার ফসলের বাড়তি দাম পাবেন, পাশাপাশি ক্রেতারাও কম দামে কৃষিপণ্য কিনতে পারবেন। ভারতে এই ধরনের বেশ কিছু মডেল চালু রয়েছে। তার মধ্যে ই-নাম বা ইলেকট্রনিক ন্যাশনাল এগ্রিকালচার মার্কেট উল্লেখযোগ্য। এর মাধ্যমে কৃষকরা অনলাইনে তাদের পণ্য সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারেন। আছে কিষান মান্ডি, সেখানেও কৃষক সরাসরি ভোক্তাদের কাছে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারেন। এই দুটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প। এছাড়া রয়েছে রাজ্যগুলির নিজস্ব প্রকল্প। যেমন পাঞ্জাবে ‘আপনি মান্ডি’। এটি পাঞ্জাব সরকারের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে কৃষক সরাসরি ভোক্তাদের কাছে, ধান, গম, ফল, সবজি সবই বিক্রি করতে পারেন। পাঞ্জাব জুড়ে পাঁচশোর বেশি ‘আপনি মান্ডি’র আউটলেট রয়েছে। সেখানে নাম নথিভুক্ত করেছেন ৫০,০০০ এর বেশি কৃষক। প্রতিদিন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১০,০০০ মেট্রিক টনের বেশি পণ্য বিক্রি হয়। এই প্ল্যাটফর্ম কৃষকের আয় বাড়িয়েছে ২০ শতাংশ-৩০ শতাংশ। ‘আপনি মান্ডি’ কৃষকদের আয় বাড়িয়ে তাঁদের যেমন ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছে তেমনই ক্রেতাদের সস্তায় সতেজ পণ্য কেনার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে ভোক্তার খাদ্যদ্রব্য বাবদ খরচ কমেছে। অন্ধ্র প্রদেশের ‘রাইথু বাজার’ এরকমই একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যার সাহায্যে কৃষক সরাসরি ভোক্তাদের কাছে তার পণ্য বেচতে পারেন। পেঁয়াজ এবং টম্যাাটোর দামের সাম্প্রতিক বৃদ্ধিতে, রাজ্য সরকার ‘রাইথু বাজার’র মাধ্যমে কম দামে পেঁয়াজ এবং টম্যামটো ক্রেতাদেরকে সরবরাহ করেছে। এধরণের সরাসরি পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা কম বেশি সব রাজ্যেই রয়েছে। যেমন তামিলনাড়ুতে ‘উঝাভার সান্থাই’, কর্নাটকের ‘রায়তা বাজার’, পশ্চিমবঙ্গে ‘সুফল বাংলা’ইত্যাদি।
‘ফার্ম-টু-টেবিল’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকের জমি থেকে সরাসরি ভোক্তাদের টেবিলে পণ্য সরবরাহ করছে একাধিক বেসরকারি এগ্রি স্টার্ট-আপ। তাদের মধ্যে বেঙ্গালুরুর নিনজাকার্ট, দিল্লির ক্রোফার্ম, পুনের ফার্মফ্রেশ অন্যতম। এরা প্রত্যেকেই বিগবাস্কেট, ফ্লিপকার্ট, সুইগি, জোমাটোর মাধ্যমে সবজি ও অন্যান্য কৃষিপণ্য সরবরাহ করে। কখনও চাষির কাছ থেকে ফসল কিনে শপিং মল মারফতও বিক্রি করে। কোফার্মার ব্যবসার আয়তন ১০ মিলিয়ন ডলার, নিনজাকার্ট সেখানে ব্যবসা করে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের। এই বেসরকারি উদ্যোগগুলিতে চাষির আয় বেড়েছে ২৫ শতাংশ, ভোক্তার ব্যয় কমেছে ১৫ শতাংশ। তবে এই মডেলের অসুবিধা হলো, এদের কর্মকাণ্ড সবটাই শহর কেন্দ্রিক। ফলে গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষের উপকারে ফার্ম-টু-টেবিল মডেল খুব একটা কাজে আসে না।
খাদ্যদ্রব্যের দামবৃদ্ধি ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার
ফসলের লাগাম ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কথা সরকারের কৃষি বিপণন দপ্তরের।
এই দপ্তর চাষিদের কাছ থেকে ফসল কিনে ক্রেতাদের কাছে ন্যায্য মুল্যে সরাসরি বিক্রি করতে ‘সুফল বাংলা’প্রকল্প চালু করেছে। খাতায় কলমে অনেকগুলি আউটলেটও আছে। তবে প্রকল্পটির সাফল্য অধরাই থেকে গেছে। সিঙ্গুরে রাজ্য সরকারের সুফল বাংলা হাব রয়েছে। চাষিরা প্রতিদিন বিকেলে তাদের সবজি সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করেন। সেখানে সবজির গ্রেডিং হয়। সবচেয়ে ভালো কোয়ালিটির সবজির বেশিরভাগ যায় শহরের দামি শপিং মলে। পরের গ্রেডের সবজি যায় ‘সুফল বাংলা’র স্টলগুলিতে। যেখান থেকে ক্রেতা বাজারের চেয়ে কম দামে সবজি কিনতে পারেন। সমস্যা দুটি, প্রথমত, শহরে চালু সুফল বাংলার স্টল হাতে গোনা। দ্বিতীয়ত, জেলায় স্টলগুলির অবস্থা খুব করুণ। উদাহরণস্বরূপ হুগলী জেলার কথা বলা যায়। জেলার চারটি স্টলের মধ্যে তিনটি (আরামবাগ, বাঁশবেড়িয়া, উত্তরপাড়া) বন্ধের মুখে। শুধু চুঁচুড়ায় সুফল বাংলার স্টলটি কোনোরকমে চলছে। ফলে ‘সুফল বাংলা’সাধারণ ক্রেতাদের সস্তায় সবজি ও অন্যান্য কৃষিপণ্য কেনার সুযোগ করে দিয়ে খরচ সাশ্রয় করছে, এমনটা নয়।
ই–নাম প্লাটফর্মে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২.৫ লাখ চাষি, দশ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। ভিতরের খবর, এখানে প্রকৃত কেনাবেচা হয় না। কিন্তু প্রকল্প বাঁচাতে কৃষি বিপণন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকরা কোনও না কোনও ব্যবসায়ীকে দিয়ে এক মান্ডি থেকে অন্য মান্ডিতে সবজি বিক্রি করায়। এভাবেই ই-নামের কেনা-বেচা দেখানো হয়। উদ্দেশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ই-নামের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ নেওয়া। ফলে ই-নামের মাধ্যমে চাষির থেকে ভোক্তার সরাসরি কেনা-বেচার সুযোগ পশ্চিমবঙ্গে নেই।
কৃষক ক্রেতাদের কাছে সরাসরি সবজি বিক্রি করতে পারেন সরকারি ‘সবজি মান্ডিতে’। রাজ্যের কৃষি মান্ডিগুলির হাল খুবই খারাপ। রাজনৈতিক নেতা ও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে চাষিরা মান্ডি পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেন না। বাধ্য হন উৎপাদিত পণ্য সস্তায় ফড়ে বা আড়তদারের কাছে বিক্রি করতে। সেখান থেকেই ফসলের দাম বাড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বাজারে সবজি থেকে দানাশস্য সব কিছুর দাম নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত দেখভালের দায়িত্ব ‘টাস্ক ফোর্স’এর। মুল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্ক ফোর্স রুটিনমাফিক কোনও কাজ করে না। দামবৃদ্ধি রুখতে ব্যর্থ হয়ে রাজ্য সরকার সমালোচনার মুখে পড়লে, বিভিন্ন জেলাশাসকদের কাছে নিদের্শ যায় টাস্ক ফোর্সকে তৎপর করতে। তৎক্ষণাৎ বিডিও, পুলিশ, এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিক, কৃষি ও কৃষি বিপণন দপ্তর সহ অন্যান্য এই সম্পর্কিত দপ্তরের জেলা আধিকারিকদের দিয়ে বড় বড় টিম তৈরি করে বিভিন্ন সবজি বাজার, কোল্ড-স্টোরেজগুলিতে টহলদারি চলে। তার ছবি ওঠে, সমাজ মাধ্যম এবং মেনস্ট্রিম মিডিয়ার মাধ্যমে তা প্রচার হয়। খুচরো ব্যবসায়ীদের ধমক দিয়ে ধরপাকড়ের ভয় দেখিয়ে টাস্ক ফোর্স একটু কাজ দেখায়। সেই অর্থে ফড়ে দালাল বা পাইকারি ব্যবসায়ীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকে। খুচরো ব্যবসায়ীদের উপর অত্যাচার করে যে দাম কমানো হয়, তা সাময়িক। কোনও স্থায়ী সমাধান নয়। সে অর্থে পশ্চিমবঙ্গে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে টাস্ক ফোর্সের কোনও ভূমিকা নেই বললেই চলে।
এবিষয়ে কৃষি বিপণন দপ্তরের এক আধিকারিক হতাশার সুরে বলছিলেন, খাদ্যদ্রব্যের দাম কমাতে যা হয় সবটাই লোক দেখানো। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
আবার দাম কমানোর প্রশ্নে পেঁয়াজকে উদাহরণ হিসাবে নিলে, অন্য সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধান পাওয়া কঠিন। রাজ্যে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন। পুরোটা রাজ্যে উৎপাদন হয় না। মহারাষ্ট্রের নাসিক, কর্নাটক ও অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আনাতে হয়। তার পরিমাণ ৫ লাখ মেট্রিক টন। এবছর মহারাষ্ট্রে প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য নতুন পেঁয়াজ বাজার আসতে দেরি হচ্ছে। তাই মহারাষ্ট্রেই পেঁয়াজের দাম হুহু করে বেড়েছে। সেখানেই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা কুইন্টাল। সেই পেঁয়াজ পশ্চিমবঙ্গে এনে বিক্রি করলে তার দাম ৭০-৮০ টাকা কেজি হতে বাধ্য। এক্ষেত্রে ভরতুকি দিয়ে দাম কমানো ছাড়া সরকারের করণীয় কি?
কেন্দ্র বা রাজ্য, যে স্তরেরই সরকার হোক, গরিব প্রান্তিক চাষি, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন যন্ত্রণার খবর রাখবে তাদের সমস্যার সমাধানের উপায় বের করবে, এটাই স্বাভাবিক। তা না করে তাঁদের রাজনৈতিক দাবার বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করছে। ভোট ব্যাঙ্ক নিশ্চিত করতে বিনামূল্যে চাল গম বিতরণ করছে। শুধু ভাত রুটিতে তো প্রয়োজনীয় আহার হয় না, দরকার পড়ে ডাল, তেল, আলু, শাক সবজির। দেশের অর্থনীতির হাল এত খারাপ যে মানুষের আয় বৃদ্ধির কোনও সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। তাই খাদ্যদ্রব্যের দাম কমাতে সম্ভাব্য ব্যবস্থাগুলির প্রয়োগে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। উপায় বের করতে হবে কিভাবে চাষি, ক্রেতা এবং সরকার সকলের স্বার্থ একই সংগে সুরক্ষিত রাখা যায়।
Comments :0