দেবদাস ভট্টাচার্য- কাঁকসা
কথা ছিল বেলা ১১টায় অধিকার যাত্রা প্রবেশ করবে কাঁকসায়। কাঁকসার জঙ্গল মহলের গভীরে ছড়িয়ে থাকা আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম থেকে ওঁরা এসেছিলেন অনেক আগে থেকে। আদিবাসী পুরুষ রমণীর দল সঙ্গে এনেছিলেন ধামসা মাদল। মাথায় ফুল বোঝাই ঘটি বসিয়ে নাচবে বলে একদল রমণী তৈরি হয়েছিলেন। সঙ্গে এনেছিলেন ফুল ও ফুলের পাপড়ি। অধিকার যাত্রার মূল যাত্রীদের সংবর্ধনা জানাবেন বলে।
এদিকে বর্ধমান থেকে যাত্রা শুরু করে অধিকার যাত্রাকে থামতে হয়েছে গলসীতে এবং বুদবুদে। প্রচুর মানুষ সেখানে। প্রায় আড়াই ঘন্টা পার করে বেলা দেড়টা নাগাদ অধিকার যাত্রা পৌঁছায় কাঁকসায়। কাঁকসা ডাক বাংলো এলাকায় তখনও মানুষ ছিলেন প্রতীক্ষায়। ডাক বাংলো থেকে বর্ণাঢ্য মিছিল শুরু হয়। অনেকের সঙ্গে প্রবীন রাজ্য সরকারি পেনসনাররা এসেছিলেন ৪৫ জন, তারমধ্যে মহিলা পেনসনার ছিলেন ২১ জন।
লাল পতাকা কাঁধে সোচ্চার মিছিল কাঁকসা বিডিও দপ্তরে আছড়ে পড়ে। টাকা লুট, ভোট লুট, আবাস যোজনার টাকা লুট নিয়ে সোচ্চার ছিলেন মানুষ। মুখ লুকিয়ে পালিয়ে গেলেন বিডিও। পঞ্চায়েত ভোটে ব্লকে ব্লকে বিডিওদের দলদাসের ভূমিকায় মুখ পুড়েছে বহু জায়গায়। বলছিলেন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী, পালাতে হবে জনগণের শত্রুদের। ১০০দিনের টাকা লুট করেছে, কয়লা, বালি লুট করেছে। মা বোনেদের সম্ভ্রম লুট করেছে। মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। সম্মিলিত প্রতিবাদ প্রতিরোধ পথ দেখাচ্ছে। সেটিংয়ের বিরুদ্ধে লুটে খাওয়াদের বিরুদ্ধে খেটে খাওয়া মানুষের লড়াই থামবেনা। আগামী নির্বাচনে নির্ণায়ক লড়াই দিন। গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার লড়াই, ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই জিততে হবে। পেনসনার সংগঠনের আশিস ভট্টাচার্য বক্তব্য রাখেন। দামোদর নদ রক্ষার দাবি ছিল। পানাগড় শিল্পতালুকে দূষণ রোধ করো। শিল্পতালুকে স্থানীয় বেকার যুবকদের নিয়োগ দিতে হবে। শিল্প নেই। শিল্প চাই। কর্মসংস্থান চাই। ৬ লক্ষ শূন্য পদে নিয়োগ চাই। কেন্দ্রীয় সরকারের দপ্তরগুলি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। নিয়োগের দাবিতে বেকাররা রাস্তায় অবস্থান করছেন। ঠিকা ও চুক্তি প্রথায় নিযুক্ত শ্রমিকদের শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন মানুষ।
নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হবার অনেক পরে অধিকার যাত্রা পৌঁছায় দুর্গাপুরে। সিটি সেন্টার এডিডিএ চত্বরে মানুষ ছিলেন প্রতীক্ষায়। ১২ই জুলাই কমিটি, ব্যঙ্ক, বিমা, এবিটিএ, এবিপিটিএ, পৌর কর্মচারি, এলআইসি,বিএসএনএল, পেনসনার সহ বিভিন্ন গণসংগঠন সংবর্ধনা জানায় যাত্রীদের। মিছিল করে মানুষ আসেন মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে। এখানে বিক্ষোভ সভায় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বিভাজনের অপশক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকাতে হবে। মানুষের ঐক্যকে আরো মজবুত করে তোলো।
আসানসোল চেলিডাঙায়ভলভোবাসস্ট্যান্ডে জড় হয়ে মানুষ অধিকার যাত্রার মূল যাত্রীদের সংবর্ধনা জানান। মিছিল হয় কোর্ট এলকায়। বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়। মিছিল বিজয় পাল সরণীতে রবীন্দ্র ভবনের বিপরীতে ফিরে আসে। এখানে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। সংবর্ধনা শেষে সভায় মানস বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন। প্রচুর মানুষ শামিল হয়েছিলেন।
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের কর্মসূচী সাধারণ মানুষের কর্মসূচীতে পর্যবসিত হয়েছিল। এগারোটা দিন ধরে অধিকার যাত্রা পথ পরিক্রমা করছে। ১০ মার্চ যাদবপুর ৮-বি বাসস্ট্যান্ডে বিশাল সমাবেশের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হবে যাত্রার। নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানিয়েছেন ১৪ মার্চ নবান্ন অভিযান সফল করুন।
Comments :0