3 child laborers died

শিলিগুড়িতে বালি পাথর তুলতে গিয়ে ধসে মৃত্যু তিন শিশু শ্রমিকের

রাজ্য

3 child laborers died



নদীপাড়ে ধসে মাটি চাপা পড়ে প্রাণ হারালো তিন শিশু শ্রমিক। মাটিগাড়ার নিমাই জোতে বালাসন নদী ঘাটে বালি পাথর তুলতে গিয়ে নদীর পাড় ধসে গিয়ে তিনজন শিশু শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মৃত তিন শিশু শ্রমিকের নাম শ্যামল সাহানি, রোহিত সাহানি ও মনুয়া চৌহান। প্রত্যেকের বয়স ১৪ থেকে থেকে ১৬’র মধ্যে। মৃত তিন শিশু শ্রমিক মাটিগাড়ার বানিয়াখাড়ির ত্রিপালিজোত এলাকার বাসিন্দা। ঘটনায় আহত হয়েছে আরো একজন কিশোর। সোমবার ভোর রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে মাটিগাড়ার পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বালাসন নদীঘাটে। ঘটনায় গোটা এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার পরে স্থানীয় মানুষদের ক্ষোভের আঁচ বুঝতে পেরে বিরাট পুলিস বাহিনী পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। পৌঁছে যায় প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরাও। 


জানা গেছে, পাহাড়ের ন্যায় উঁচু বালি পাথরের ঢিবির নেচের চাঙর থেকে ভোর রাতে শিশু শ্রমিকেরা ট্রাক্টরে বালি পাথর লোডি করার কাজ করছিলো। সেই সময় আচমকাই উপর থেকে বালি পাথরের ধসের স্রোত তাদের ওপরে এসে পড়ে। নদী পাড়ে নেমে আসা ধসে চাপা পড়ে যায় তিনজন শ্রমিক। অন্ধকার থাকায় ধস সরিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি শিশু শ্রমিকেরা। বালি পাথর চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাদের। সেই সময় ঘটনাস্থলে থাকা অন্যান্যদের চিৎকারে লোকজন ছুটে আসে। দ্রুত জেসিবি মেশিন দিয়ে মাটি চাপা পড়া তিন শ্রমিকের দেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলতে থাকে। দীর্ঘ সময় পরে তিন শ্রমিকের দেহ উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকরা তিন শিশু শ্রমিককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় ধস থেকে উদ্ধার করা জখম আরো একজন কিশোর উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। 


পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাটিগাড়ার বালাসন নদী থেকে অবৈধভাবে রাতের অন্ধকারে বালি ও পাথর তোলার সময় দুর্ঘটনায় তিন শ্রমিকের প্রাণ হারানোয় ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ঘটনায় রাজ্য সরকার ও প্রশাসনকেই সরাসরিভাবে দায়ি করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে পুলিশ প্রশাসনের একাংশের মদতে নদী থেকে অবৈধভাবে বালি পাথর উত্তোলনের অবৈধ কাজ চলছে। নদী থেকে বালি পাথর তুলে নিয়ে ডাম্পার ও ট্রাক্টরগুলি বেপরোয়াভাবে রাস্তায় চলছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিলো। এই সময়কালে ডাম্পার ও মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছিলো। তৃণমূলের নেতা ও প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে দিনের পর দিন এই অবৈধ কার্যকলাপ চলছে। কিন্তু কোন ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের। যে সমস্ত ডাম্পার বা ট্রাক্টরে করে বালি পাথর পাচার করার কাজ করা হতো তাদের কাছ থেকেও প্রত্যেক ট্রিপে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছিলো বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও সরব হয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ বলেন, আমাদের এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নদীতে দালালদের রুখতে সরকারের কোন নজরদারি নেই। প্রশাসন তো ঘুষ খোর। মমতা বারবার নদী বন্ধ করে দেয়। দিনের বেলাতে কাজ করতে দেয় না ওরা। রাতের অন্ধকারে বেআইনীভাবে ডাম্পার লোডিং করা হয়। ছোট ছেলেদের ডেকে নিয়ে যায়। পেটের দায়েই ভোর রাতে অল্প বয়সী ছেলেরা নদী থেকে বালি পাথর লোড করার কাজ করতে গিয়ে আরো ফিরে আসলো না।  

এদিন ফাঁসিদেওয়ায় বালি খাদানে তিন নাবালকের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন মহম্মদ সেলিম। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তাঁর দাবি, দোষীদের কখন ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে জানাক প্রশাসন। তিনি বলেন, ‘‘বীরভূমে বালি চুরি শুরু করেছিল তৃণমূলের বালি মাফিয়া। পরে সারা রাজ্যে সেটা ছড়িয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে মাঝে মধ্যেই বালি খাদান বন্ধের নির্দেশ দেন। আসলে এসব লোক দেখানো। উনি চান ওর দলের লোকেরাই যাতে শুধু বালি লুঠ করতে পারে।’’


সিপিআই(এম) নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ি দালালদের চিহ্নিত করতে হবে। এটা একটা নিছক দুর্ঘটনা বললেই চলবে না। এর দায় সরকারকে নিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরেই নদী লুট চলছে। পাথরঘাটা এলাকায় জমি, নদী, জঙ্গল লুটের রাজত্ব চলছে। দাদাগিরি চলছে। ছোট খাটো ব্যবসায়ীরা নদী থেকে বালি পাথর তুলে পাহাড়ের ঢিপি করে রাখে না। দিনে রাতে নদীতে জেসিবি লাগিয়ে একশ্রেনীর মাফিয়াচক্র সক্রিয় থাকছে অবৈধভাবে নদী থেকে বালি পাথর তোলার কাজে। মাঝেমধ্যেই নদী ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু যারা গরীব মানুষ নদী থেকে বালি পাথর তুলে জীবিকা চালাচ্ছে সেটাতে মানুষের ক্ষতি হচ্ছে না। মাফিয়ারা নদীতে জেসিবি মেশিন লাগিয়ে কুঁয়ো, পুকুর বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাফিয়ারা চড়া দামে বিক্রি করছে। শাসকদলের নেতারা ও প্রশাসনের মদত ছাড়া কোনভাবেই এই বেআইনী কাজ দিনের পর দিন চলতে পারে না। তৃণমূলী নেতা ও পুলিসেরও শেয়ার রয়েছে। সিপিআই(এম)’র প্রতিনিধি দলে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন তাপস সরকার, জয় চক্রবর্তী, ভবেন্দু আচার্য্য, হীরালাল ছেত্রী প্রমুখ।  
 

Comments :0

Login to leave a comment