বাংলাদেশে ‘হিন্দু হত্যার’ প্রতিবাদে দিল্লিতে দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরঙ দল।
কলকাতাতেও ‘হিন্দু যদি বাঁচতে চাও বিভেদ ভুলে এক হও’ স্লোগানে বিক্ষোভ হয়েছে পার্ক সার্কাসে বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের সামনে।
বাংলাদেশে নতুন করে ফের শুরু হয়েছে হিংসা। বস্ত্র কারখানার শ্রমিক দীপু দাসকে দলবেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ময়মনসিংহে। এই ঘটনায় ইউনুস সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ঘিরেও তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।
বাংলাদেশেই বাম গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল বিভিন্ন অংশ সংখ্যালঘু হত্যার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধীদের দলবেঁধে হত্যার প্রতিবাদে পথে নেমেছে। বস্তুত মৌলবাদী শক্তির হাতে বাংলাদেশে আক্রান্ত মুক্তমনা বহু মানুষই, যাঁদের অনেকেই ধর্মীয় বিচারে মুসলমান।
সীমান্তের এপারে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরায় বামপন্থীরা লাগাতার প্রতিবাদে শামিল সংখ্যালঘুদের আক্রমণ, সংবাদপত্রের দপ্তরে হামলার প্রতিবাদে।
এদিন আরএসএস’র দুই শাখা সংগঠনের তৎপরতায় ধর্মীয় পরিচয়কে একমাত্র ঢাল করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার, এমনকি দলবেঁধে পিটিয়ে হত্যা বা সংবাদপত্রের দপ্তরের ওপর হামলার বিরুদ্ধে স্বর ওঠাতে শোনা যায়নি।
কলকাতাতেই ডিসেম্বরের গোড়াতে ব্রিগেডে ‘গীতাপাঠের’ আসরে দলবেঁধে হামলা চালানো হয়েছিল প্যাটিস বিক্রেতা হকার শেখ রিয়াজুলের ওপর। আমিশ বিক্রির অভিযোগ তুলে চড়াও হয়েছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদী বাহিনী। বিজেপি-কে সেই আক্রমণের নিন্দা করতে শোনা যায়নি। বরং পশ্চিমবঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর দল বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘হিন্দুভোট’ জড়ো করতে বেশি মনোযোগী রয়েছে।
মঙ্গলবারই কলকাতায় এন্টালি থেকে পার্ক সার্কাস মিছিল করবে বামপন্থী দলগুলি। সেখানে সংখ্যালঘু নিপীড়ন, দলবেঁধে পিটিয়ে হত্যা, রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর আক্রমণের পাশাপাশি সংবাদপত্রের দপ্তরে হামলার প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়েছে। বামপন্থীরা বলছেন, শ্রমজীবী আক্রান্ত হলেই প্রতিবাদ হওয়া জরুরি। আক্রান্ত দুই ধর্মের মানুষই। আক্রান্তের ধর্মীয় পরিচয় তুলে আসলে শ্রমজীবীকেই ভাগ করতে নেমেছে দু’পারের সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তি।
কলকাতায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিক্ষোভে লাঠি চালায় পুলিশ। দিল্লিতেও দূতাবাসের সামনে ব্যারিকেডে ধাক্কা দেয় ভিড়। সেখানেও পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অভিযোগ, কলকাতায় পুলিশে আহত হয়েছেন বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন।
পার্ক সার্কাসে মূল কর্মসূচির পাশাপাশি বেকবাগানের দিকে চলে আসে মিছিল। দুপুরের দিকে বেশ খানিকক্ষণ স্তব্ধ ছিল এজেসি বোস রোড। শহীদ ভগৎ সিং উদ্যানের সামনে যানজটও তৈরি হয়।
বামপন্থীরা বলছেন, ময়মনসিংহে নিহত দীপু দাস ছিলেন বস্ত্র শিল্পের শ্রমিক। কলকাতায় শেখ রিয়াজুলও শ্রমজীবী, হকার বিক্রেতা। দু’পারেই ধর্মীয় মৌলবাদী উন্মত্ত শক্তি হামলায় জড়িত। দুপারেই চলছে ভিড়তন্ত্র।
রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এবং কলকাতা পুলিশ ব্রিগেডের ঘটনায় কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। পরে ময়দান থানায় এফআইআর দায়ের হওয়ায় গ্রেপ্তারি হয়। কিন্তু দিনের দিন অভিযুক্তদের জামিনও মিলে গিয়েছে! এই পরিস্থিতি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারবারীদের বাড়তি পুঁজি দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, উত্তর প্রদেশে বিজেপি সরকার সম্প্রতি পিটিয়ে হত্যায় দোষীদের শাস্তি লাঘব করতে রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানিয়েছে। ২০১৫-তে দাদরিতে মহম্মদ আখলাকের বাড়ি ঘিরে পিটিয়ে হত্যা করেছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদী বাহিনী। রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করেছিল বিজেপি। আখলাকের কন্যা নিজে সাহস করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেন। যোগী আদিত্যনাথ সরকার এখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন ও পিটিয়ে হত্যার দায় তুলে নিতে তৎপর।
VHP Bangladesh High Commission
সংখ্যালঘুর অধিকারের দাবি এড়িয়ে ‘হিন্দুহত্যায়’ প্রতিবাদ দিল্লি-কলকাতায়
দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনের ছবি।
×
Comments :0