তিন তিনবার কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করে এবং অধিকংশ রাজ্যে সরাসরি অথবা অন্যের ঘাড়ে চেপে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার গড়ে নরেন্দ্র মোদীরা ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন ভারতের জনগণ এখন তাদের অন্ধভক্ত হয়ে গেছেন। ধর্মান্ধতা এবং ধর্মের নামে রাজনীতির পিটুলি গোলা খাইয়ে তার একটা বড় অংশের মানুষকে এতটাই বেহুঁশ করে ফেলেছেন যে এরা হিন্দুত্বের ঘোরে তালজ্ঞান এমনকি চৈতন্যও হারিয়ে ফেলেছেন। টেরই পাচ্ছেন না, ধর্ম, কুসংস্কারের গাড্ডায় ফেলে বিকেন্দ্রীকৃত, যুক্তরাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় অতিকেন্দ্রীকৃত একাধিপত্যের ব্যবস্থা কায়েম হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে ধর্মীয় নানা বিতর্কের মধ্যে ঠেলে দিয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং রুজি রোজগারের জায়গাগুলি দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। বিহারে সাম্প্রতিক জয়কে মোদীরা মনে করছে সংসদ সহ যাবতীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তথা সংবিধানকে উপেক্ষা করে নিজেদের মরজি মতো দেশ চালানোর সবুজ সংকেত। তাই একের পর এক আইন ও সরকারি বিধি পরিবর্তন করে মানুষের অধিকার সঙ্কুচিত করার ও স্বার্থহানির অভিযান শুরু হয়েছে। এই তথাকথিত পরিবর্তনের মধ্যে রেগা প্রকল্পের ভোল বদলে তার ধার ও ভার ছেঁটে ফেলার আয়োজন অন্যতম একটি।
ভারতের বুকে বিপুল দরিদ্র জনগণের ন্যূনতম রোজগারের বন্দোবস্ত করে কোনোরকমে বাঁচিয়ে রাখার প্রকল্প রেগা। প্রথম ইউপিএ সরকারের সময় প্রধানত বামপন্থীদের চাপে ও উদ্যোগে সংসদে আইন পাশ করে চালু হয় এই প্রকল্প। গত দুই দশক ধরে ভারতে দারিদ্র হ্রাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এই প্রকল্প। গ্রামীণ ভারতে মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল বর্ষার জল নির্ভর চাষের ব্যবস্থায় বছরের অনেকটা সময় গ্রামের মানুষের কোনও কাজ থাকে না। এই সময়ে তাদের জন্য কিছু কাজের ব্যবস্থা করে ন্যূনতম আয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছিল রেগা। রেগা চাহিদা নির্ভর নিশ্চয়তাযুক্ত রোজগার প্রকল্প। যে কোনও গ্রামীণ মানুষ চাইলে বছরে ১০০ দিনের কাজ দিতে বাধ্য থাকবে সরকার। কাজ দিতে না পারলে ভাতা দিতে হবে। গ্রামের মানুষের যখন কোনও কাজ থাকে না তখন রেগা প্রকল্পই তাদের কাজ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় রেগা নিয়ে নানা বিদ্রূপ করতেন নরেন্দ্র মোদী। একে গর্ত খোরাক প্রকল্প বলেও ব্যঙ্গ করেছিলেন। গ্রামের গরিব মানুষ অসময়ে কাজ পাক সেটা পছন্দ ছিল না মোদীর। প্রধানমন্ত্রী হবার পর প্রকল্প বন্ধ করার সাহস তাঁর হয়নি। তবে নানা প্রশাসনিক বাধা প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা তৈরি করে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। তাঁর আমলে অনেক কম মানুষকে অনেক কম কাজ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য করোনার সময় দেশময় দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচিয়েছে এই রেগা। যখন এক দেড় বছরে দেশের অর্থনীতি কার্যত কোমায় চলে গিয়েছিল তখন রেগাই কোটি কোটি মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।
সেই রেগাকেই নাম বদল ও সংশোধনের নামে গুটিয়ে আনার ছক তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্প থেকে গান্ধীর নাম বাদ দিয়ে বিতর্ক তৈরি করে তার আড়ালে কাজের অধিকার ক্ষীণ করা হচ্ছে। কাজের দিন ১০০ থেকে ১২৫ দিন করে তা শর্ত চাপিয়ে আদপে দিন কমিয়ে ফেলার ব্যবস্থা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফাভাবে রাজ্যের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। রাজ্যের উপর আর্থিক বোঝা চাপিয়ে প্রকল্পের পরিধিকে ছোট করার ব্যবস্থা হচ্ছে। তেমনি বছরে দু’মাস প্রকল্প বন্ধ রাখা হচ্ছে। এমনভাবে আইনের সংস্কার হচ্ছে যাতে কেন্দ্রের দায় কমে রাজ্যের ঘাড়ে বোঝা চাপে। রাজ্য সেই বোঝা বইতে না পারলে প্রকল্প সীমিত হয়ে যাবে। তেমনি আনুষাঙ্গিক খরচও রাজ্যকে করতে হবে। ফলে অনিবার্যভাবেই কাজের সুযোগ কমে যাবে।
MGNREGA
রেগা গোটানোর ছক
×
Comments :0