Family Indebtness

উন্নয়নের মোদী ধারাপাত

সম্পাদকীয় বিভাগ

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বুলেটিনে প্রকাশিত তথ্য উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন গত পাঁচ বছরে ভারতের জনগণের পরিবার পিছু ঋণের বোঝা দ্বিগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি অনেকটা কমে গেছে পরিবারের সঞ্চয়। মন্ত্রীর দেওয়া হিসাব অনুযায়ী মোদী সরকারের দ্বিতীয় দফায় পরিবার পিছু ঋণের পরিমাণ ৭.৭ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে ১৫.৭ লক্ষ টাকা হয়েছে। বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
এই দ্বিতীয় দফায় মোদী সরকারের বহু প্রচারিত এবং ঘোষিত প্রতিশ্রুতি ছিল ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন (৫ লঃ কোটি) ডলারের অর্থনীতিতে উন্নীত করবেন। বিশ্বের চতুর্থ ও পরে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার এটাই নাকি প্রথম সোপান। এভাবেই ভারত নাকি তরতর করে এগিয়ে যাবে উন্নত অর্থনীতি তথা বিকশিত ভারতের দিকে। অর্থাৎ আমেরিকা-পশ্চিম ইউরোপের মতো বিশ্বের প্রথম সারিতে পা রাখবে। ইতিমধ্যে গত কয়েক বছরে অনর্গল শোনা যাচ্ছে ভারত নাকি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হারে বেড়ে চলা অর্থনীতি। অর্থাৎ ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি তথা জিডিপি বৃদ্ধির হার যেকোন দেশের থেকে বেশি।
এত উচ্চাশা, এত প্রতিশ্রুতি, এত ঘোষণা, এত ‘সম্ভাবনা’, এত ‘সাফল্য’ সত্ত্বেও আজও মোদীর বিকশিত ভারত ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দৌড় শেষ করতে পারেনি। তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বা উন্নত অর্থনীতি তো বহু যোজন দূরে। তাই অতি উচ্চ হারে বেড়ে চলা জিডিপি নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আরও বেশি সন্দেহ ও কৌতূহল হয় শেয়ার বাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী গতিতে। মূল অর্থনীতি বাডছে না প্রসারিত হচ্ছে না, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। রপ্তানি নিতান্তই ঢিলেঢালা। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে। কর্মসংস্থান এবং রুজিরোজগারের হালও খারাপ। এই অবস্থায় কোন যাদুকাঠির ছোঁয়ায় ত্বরিত গতিতে জিডিপি বৃদ্ধির হার বাড়ছে! সেজন্যই কি আই এস এফ ভারতের অর্থনীতির হার সংক্রান্ত তথ্য পরিসংখ্যান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করছে? জিডিপি গণনার জন্য যে সব তথ্য-পরিসংখ্যান তৈরি করা হয় সেগুলিকে সম্ভবত আইএমএফ নির্ভরযোগ্য মনে করছে না। সেইজন্য প্রচারে, বিজ্ঞাপনে, তথ্য-পরিসংখ্যানে, খাতায় কলমে বিরাট সাফল্য দেখানো হলেও বাস্তবের মাটিতে  সাধারণ মানুষের অবস্থার কিন্তু কোনও উন্নতি হচ্ছে না। বরং অবনতির প্রবণতাই প্রকট। অর্থনীতির যদি সত্যি সত্যি অগ্রগতি হতো তাহলে প্রতিফলন অবশ্যই দেখা যেত সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার মানে। বরং উলটোটাই ঘটছে। মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মান ধরে রাখতে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়া অতিরিক্ত ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর সেই অতিরিক্ত ব্যয়ের জোগান আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে না হওয়ায় তাদের সঞ্চয় থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে পারিবারিক সঞ্চয়। তেমনি খরচ শামাল দিতে নিতে হচ্ছে ঋণ। তাই বাড়ছে পারিবারিক ঋণ। সরকারের দেওয়া তথ্যই জানাচ্ছে মোদী দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের মানুষের ঋণের বোঝা দ্বিগুণ করে দিয়েছেন। বিকশিত ভারতের কি মহিমা।
 

Comments :0

Login to leave a comment