আর মাত্র দুদিন বাকি ডিসেম্বর মাস পড়তে। তবুও কমার লক্ষণ নেই, রাজ্যজুড়ে অব্যাহত ডেঙ্গুর দাপট। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের নাম কাশীনাথ মণ্ডল(৪২) এবং গায়েত্রী পাল(৫৪)। দুইজনের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গু উল্যেখ রয়েছে। একই দাবি মৃত দুই পরিবারের সদস্যদের। জানা গেছে মৃত কাশীনাথ মন্ডলের উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনির বাসিন্দা। গায়েত্রী পালের বাড়ি ভোজেরহাট দক্ষিণ গাজীপুরে। দু’জনের ডেঙ্গু এনএস -১ পজেটিভ ছিল। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বৃহস্পতিবার।
শারদোৎসবের পরেই ডেঙ্গুর দাপট দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। কলকাতা সহ রাজ্যের সাতটি জেলায় ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপের খবর আসছে। একই রোগীর শরীরে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া দু’ধরনের উপসর্গই দেখা যাচ্ছে। গত ৪ নভেম্বর গড়িয়ার ঢালুয়ার বাসিন্দা স্বাস্থ্য কর্মী পূর্ণিমা পৈলান জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেশনে। ১১ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গুর উল্লেখ রয়েছে। তার দুদিন আগে জ্বর নিয়ে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি হন জোড়াবাগান এলাকার যুবক। হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। জোড়াবাগান এলাকার যুবক বিট্টু সিং(৩৬) জ্বর নিয়ে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ২৮ হাজার বলে বেসরকারি সূত্রের খবর। শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই এখনো পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যথেষ্টই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের এক বড় অংশের বক্তব্য, আমাদের অভিজ্ঞতায় ডেঙ্গু ক্রমশ ছড়িয়ে পড়লেও তেমন কোনো হেলদোল নেই সরকারের। প্রকাশিত হচ্ছে না সঠিক তথ্যও। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে গত ১৪ দিনে নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছুঁইছুঁই। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হাজারের বেশি। শীতের মরশুমে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। ২৩টি জেলার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে সর্বাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত মুর্শিদাবাদেই। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। মালদায় আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজারের কাছাকাছি। পরিসংখ্যান বলছে, বেসরকারি হাসপাতাল এবং ল্যাব থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ৫ হাজার ৯৩৩ জনের রিপোর্ট পজেটিভ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে, গত জুলাই মাসে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৮৮ জন। আগষ্ট মাসে সেই সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫১৬ ঘরে। সেপ্টেম্বরে ৭ হাজার ১৯৯ জন। অক্টোবরে আক্রান্ত হন ৪ হাজার ২২৩ জন। গত নভেম্বরের ৪ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ২২৭ জন। গত ১৪ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২২৩ জন। সরকারি মতে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হাজার ১৪২জন। সরকারের তরফে ডেঙ্গু আক্রান্তের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া গেলেও বিভিন্ন বেসরকারি সূত্রের হিসেব ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। তবুও ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষ হেলদোল নেই স্বাস্থ্য দপ্তরের। তাদের দাবি গত বছরের থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম আছে।
মরশুমের প্রথম থেকেই ডেঙ্গু মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার একবার সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব, আবাসনগুলিতে জল জমার কথা বলছে, আরেকবার বর্ষার দেরিতে আগমনকে দায়ী করে সাফাই দিয়ে চলেছে। শুধু তা নয়, এর আগের বছরের মতো সেই একইভাবে ঘন ঘন প্রশাসনিক বৈঠক করে, ড্রোন উড়িয়ে, হোর্ডিং লাগিয়ে প্রচার করে দায় সারছে প্রশাসন। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিতে চরম আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। যদিও প্রশাসন দাবি করছে সচেতনতার প্রচার চলছে চারদিকে। শীতের মরশুমে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কোনও এলাকায় ডেঙ্গু ধরা পড়লেই বিপদ গুনছেন সেই এলাকা ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে রাজ্যে ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, উত্তর ২৪ পরগণা, মুর্শিদাবাদ এবং মালদায় বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে সেই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন ‘‘ডেথ অডিট ছাড়া মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।’’ তিনিও দাবি করেছেন গত বছরের তুলনায় রাজ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো।
DENGU DEATH
তিন সপ্তাহে রাজ্যে ডেঙ্গুতে মৃত ৪
×
Comments :0