আবার সংবাদের শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশের শীর্ষ কর্পোরেটপতি গৌতম আদানি এবং আদানি গোষ্ঠী। এবার শুধু দেশের সংবাদমাধ্যমে নয় একেবারে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। না কোনও গর্ব করার বিষয়ে বা দেশের নাম উজ্জ্বল করার মতও কোনও বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বন্ধু সংবাদ শিরোনাম দখল করেননি। করেছেন দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতি, কারচুপি তথা বেআইনি কাজ করার গুরুতর অভিযোগের মুকুট মাথায় পড়ে। আবার শুধু দেশের আইন লঙ্ঘন করে দুর্নীতি করেননি, এবার লঙ্ঘন করেছেন আমেরিকার আইনও। এতদিন একটার পর একটা দেশের আইন লঙ্ঘন করে দুর্নীতির পর দুর্নীতি করে গেলেও বন্ধু মোদীর সৌজন্যে দিব্যি সুরক্ষিত ছিলেন। কিন্তু আইনি পথে ব্যবসা বৃদ্ধি ও অতি মুনাফা কামানোর লোভ যখন তাদের আমেরিকায়ও একই কাজে প্রলুব্ধ করে তখন সুরক্ষা দেবার কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিউইয়র্কের আদালতে সরাসরি মামলা করে মার্কিন সরকারের বিচার বিভাগ এবং মার্কিন শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি। আদালত শুধু মামলা গ্রহণ করেনি, অভিযোগের গুরুত্ব ও গভীরতা বুঝে গৌতম আদানি, তাঁর ভাইপো সাগর আদানি এবং আদানি সংস্থার বেশ কয়েকজন পদাধিকারীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়নাও জারি করেছে। ফলে আদানিবদের এখন বিদেশ সফর করা বিশেষ করে আমেরিকা ও আমেরিকার সহযোগী দেশে সফর ঝুঁকিবহুল। তিনি বা তাঁরা গ্রেপ্তার হয়ে যাবেন। সত্যিই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সৌজন্যে রাতারাতি দেশে শীর্ষ শিল্পপতি হয়ে ওঠা আদানি দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন!
দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিলে এবং নানা ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় ঘোষণা করলে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে আদানি। অল্প সময়ের মধ্যে উল্কা গতিতে বেড়ে দেশের অতিকায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থায় পরিণত হয় আদানি গ্রিন। এই আদানি গ্রিন সংস্থার উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে বিক্রির জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। সৌরবিদ্যুৎ সংস্থার তৈরি বিদ্যুৎ রাজ্যগুলিকে বিক্রির বন্দোবস্ত করে দেবার কথা কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এসইসিআই’র। কিন্তু তাদের উপর ভরসা না করে আদানিরা সরাসরি রাজ্য সরকারের পদাধিকারীদের সঙ্গে বসে বোঝাপড়া করে বাজার মূল্য থেকে অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে নিয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশ, ওডিশা, তামিলনাডু সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে মোট ২২০০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ১২ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে ২০ বছরের জন্য। তার মধ্য দিয়ে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা মুনাফা নিশ্চিত করেছে। ঘুষ দিয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করে অতি মুনাফা কামানোর এই দুর্নীতি গোপন রেখে আদানি গোষ্ঠী দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ, ঋণপত্র এবং লগ্নি সংগ্রহ করেছে। টাকা তোলা হয়েছে আমেরিকা থেকেও। মার্কিন আইনে এটা অপরাধ লগ্নিকারীদের কাছে তথ্য গোপন করে তাদের প্রতারণা করা হয়েছে। সেই অপরাধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
আদানিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, প্রতারণা, কারচুপি, জালিয়াতির ভূরি ভূরি অভিযোগ আছে। ভারতে আর কোনও শিল্প গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কোনোদিন ওঠেনি। সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর অতি ঘনিষ্ঠ হবার সুবাধে আদানিরা ধরাকে সরা জ্ঞান করে যথেচ্ছ দুর্নীতি করে যাচ্ছে। সরকার তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার বদলে মদত দিচ্ছে এবং সুরক্ষা দিচ্ছে। ভারতের বুকে রাজনীতিক, আমলা-কর্পোরেট অশুভ আঁতাতে ধান্ধার ধনতন্ত্র দ্রুত বিকশিত হচ্ছে মোদী জমানায় অনুকূল পরিবেশে। সম্ভবত মোদী সরকারের ভরসাতে আদানিরা দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও তাদের কালো হাত প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু মোদী সুরক্ষা দিলেও আমেরিকা এ যাত্রায় দেয়নি। দেখা যাক ট্রাম্প কি করে।
Adani Modi
কার জোরে এত বেপরোয়া আদানিরা
×
Comments :0