Sabooj Sathi Scheme

বাংলার ‘সবুজ সাথী’র প্রকল্পের সাইকেল দেদার বিক্রি বিহারে

জাতীয় রাজ্য

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি প্রকল্প সবুজ সাথী সাইকেলের বড় বাজার বিহারের সীমাঞ্চল এলাকা। বিহারের সীমাঞ্চল বলে পরিচিত কাটিহার, পূর্ণিয়া ও কিশনগঞ্জ জেলা। ওই তিন জেলার গ্রাম ও মফস্‌সলের হাটে পুরনো জিনিসপত্র বেচাকেনার রেওয়াজ দীর্ঘ দিনের। কোনও জায়গায় সপ্তাহে এক দিন, কোনও জায়গায় সপ্তাহে দু’দিন বসে এই হাটগুলি। সেখানেই বিক্রি হচ্ছে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য তৃণমূল সরকারের দেওয়া ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল। উত্তর দিনাজপুর জেলার বিহার বাংলা সীমান্তের পূর্ণিয়া মোড়কে করিডোর করে ওই সাইকেল কেনাবেচার দোকান রয়েছে, সেখানেই মিলছে সাইকেলগুলো। সম্প্রতি ডালখোলার পূর্ণিয়া মোড় এলাকা থেকে কয়েকশ সবুজ সাথীর সাইকেল উদ্ধার হয় পুরনো লোহা লক্কর কেনার দোকান থেকে।
সেখানে মিলেছে গাঢ় নীল রঙের সাইকেলগুলির সামনে বই রাখার জন্য কালো রঙের ‘বাস্কেট’ লাগানো। সাইকেলের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আঁকা লোগো এবং পিছনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘বিশ্ব বাংলা’র স্টিকার সাঁটা। সূত্রের দাবি, ওই সাইকেল বিহারে পাচারের জন্য মজুত করা হচ্ছিল। বিষয়টি এবার পুলিশের নজরে এলেও অতীতে একাধিকবার এই ঘটেছে বলে দাবি ওয়াকিব হাল মহলের।
জানা গেছে, বিহারের বাইসি, ওমর, রৌটা, বইসা, অন্দর, লোহাগাড়া, গোলাপবাগ, খুকসিবাগ, বনমনখী, মঞ্চক, দিঘলব্যাংক, টেরাগছ, ফতেপুর হাটগুলিতে দেদার বিক্রি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেল। বর্তমানে বাজারে একটি সাইকেলের দাম ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। ‘সবুজ সাথী’র সাইকেল সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। বিহারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাইকেল বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাইকেলগুলো ওখানে যাচ্ছে কী ভাবে? লোহাগাড়া হাটের সাইকেল ব্যবসায়ী মেহেবুব আনসারীর কথায়, ‘‘অনেকেই বলেন এগুলো নাকি পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে দেওয়া সাইকেল। আমরা অত কিছু জানি না। পাইকারদের কাছ থেকে নিয়ে আসি। ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মুনাফা রেখে বিক্রি করে দিই।’’
পুরনো সাইকেল কেনাবেচার পাইকারি এক মজুতদারের সূত্রে জানা গেল, এ জেলা থেকে মূলত দু’রকম পদ্ধতিতে সাইকেল যাচ্ছে বিহারের বাজারে। প্রথমটি হল, চোর কিংবা কোন ব্যক্তি একটি সাইকেল চালিয়ে বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিয়ে আসছেন সাইকেলগুলো। কারণ, এখানে বিনামূল্যে পাওয়া সাইকেল বিহারে নিয়ে গেলে ভাল দাম দিচ্ছেন বিক্রেতারা। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি আরও চোরাগোপ্তা। সাইকেল গুলি ভাংগাচোরা সরঞ্জাম বিক্রি করতে গিয়ে লরির ভিতর সাইকেল ঢুকিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিহারে। বিহারের এক সাইকেল ব্যবসায়ীর কথায়, ‘ ২হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে সাইকেলগুলি কিনতে হয়।’’
যদিও ইসলামপুরের এক সচ্ছল পরিবারের এক ব্যক্তির কথায় ‘‘এখনকার ছেলেমেয়েরা সাইকেলের স্পোর্টস মডেল পছন্দ করছে। অনেকের বাড়িতেও দাদা-দিদিদের সাইকেল রয়েছে। সবুজ সাথীর বাড়তি সাইকেল আমাদের এলাকায় বিক্রি হয় না। বিহারে ভালো দামি বিক্রি হয়। তাই অনেক সময় বিক্রি করে দেয়।’’
ডালখোলার সিপিআই(এম) নেতা সুরজিৎ কর্মকার বলেন, “রাজ্যের শাসক দলের আশীর্বাদ না থাকলে ভাঙ্গা জিনিসপত্র কেনার দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ সাইকেল রাখার সাহস পেত না  দোকানদাররা। যেখানে দুর্নীতি সেখানেই তৃণমূল। বিহারের ওই সাইকেলের বাজারের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। আমরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
পূর্ণিয়ার পুলিশ সুপার কার্তিক এ শর্মা জানান, ‘‘এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই আমাদের কাছে। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment