Amartya Sen Hindu Rashtra

পুরোপুরি নয়, হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা খানিকটা ঠেকানো গিয়েছে

রাজ্য

‘নির্বাচনের ফলাফলে এটা প্রতিফলিত হয়েছে যে ভারতবর্ষে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা খানিকটা ঠেকানো গেছে’, লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে এমনই মত প্রকাশ করেছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ। তবে স্পষ্ট ভাষায় তিনি এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘নির্বাচনের ফলাফল এমন হয়েছে বলে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা খানিকটা আটকানো গেছে এমনটা কখনোই নয়। আদতে হয়েছে তার ঠিক উলটোটা। এমনটা হয়েছে বলেই নির্বাচনের ফলাফল ভিন্ন হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে অর্থনীতিবিদের গলায় ঝরে পড়েছে ন্যায় সংহিতা কার্যকরী নিয়ে একরাশ সমালোচনা। তাতে তিনি বলেছেন, ‘‘একটা সংবিধান বদলাতে গেলে যে আলোচনা দরকার তার প্রমাণ চোখে পড়েনি।’’ পাশাপাশি দেশের নতুন শিক্ষানীতিকে কটাক্ষ করে নোবেলজয়ীর মন্তব্য, ‘‘নতুন শিক্ষানীতিতে নতুনত্ব কিছু নেই।’’ 

শনিবার প্রতীচী ট্রাস্ট (ইন্ডিয়া)’র বার্ষিক সাধারণসভায় যোগ দিয়েছিলেন অমর্ত্য সেন। বোলপুরের এক বেসরকারি হোটেলের সভাকক্ষে আয়োজিত এই সাধারণসভায় ‘কেন স্কুলে যাই: সহযোগিতার সহজপাঠ' শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই আলোচনায় প্রতীচী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অমর্ত্য সেন ছাড়াও অর্থনীতিবিদ জাঁ দ্রেজে সহ প্রতীচী ট্রাস্টের তরফে মানবী মজুমদার, সৌভিক মুখোপাধ্যায় প্রমুখরা অংশ নিয়েছিলেন। হাজির ছিলেন বিভিন্ন প্রান্তের পড়ুয়া, শিক্ষক, অধ্যাপক সহ বিশিষ্টজনেরা। সেই আলোচনায় অমর্ত্য সেনের গলায় শোনা গিয়েছে ধর্মীয় মেরুকরণ, হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তাই। তিনি বলেছেন, ‘‘কেন স্কুলে কচিকাঁচারা পড়তে যাবে? স্কুলের প্রধান ভূমিকা সেটাই। শুধু পড়াশোনা নয়, নানান আনুষঙ্গিক বিষয় জড়িয়ে আছে। সেইগুলিকে একত্রিত করলেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব। প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার মান সামান্য হলেও নজর দেওয়া উচিত। এখন সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্তু ভারতকে কি করে হিন্দু রাষ্ট্র করা যায়। জানা দরকার, স্কুলের কচিকাঁচাদের কাছে হিন্দু-মুসলিমের পার্থক্য কিছু নেই। বিদেশেও পার্থক্য নেই পড়ুয়াদের মধ্যে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারতবর্ষকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা দেখানো হয়েছে। কিন্তু ভারতবর্ষ যে হিন্দু রাষ্ট্র নয়, এবারে তার প্রতিফলন ঘটেছে। মানতে পারেননি অনেকেই। ভোটের রায় দিয়েছেন বিরুদ্ধেই। শুধুমাত্র পার্থক্য বোঝানো হচ্ছে। তবে এখনও হিন্দু-মুসলিম-শিখ-জৈনদের একস্থানে যোগ হওয়া সম্ভব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা মোকাবিলায় মানবাধিকার শিক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ছোট থেকে শিশুদের সঙ্গে এই শিক্ষার পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। ধর্মের নামে ভারতে এখন বিভাজন বাড়ছে। জোর করে বুলি আওড়ানোর চেষ্টা, মারধরের রাজনীতি চলছে। এমন পরিস্থিতিতে এখন দেশে প্রয়োজন মানবাধিকার শিক্ষার।’’

আলোচনাসভার শেষে সাংবাদিক সন্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন অমর্ত্য সেন। প্রশ্নের উত্তরে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা পুরোপুরি আটকানো যায়নি। খানিকটা গিয়েছে। নির্বাচনের ফল এমন হয়েছে বলে এটা হয়েছে তা একেবারেই নয়। বরং উলটোটা। এমন হয়েছে বলেই লোকসভার ফলাফল ভিন্ন হয়েছে।’’ দেশের নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে অমর্ত্য সেন কটাক্ষের সুরেই বলেছেন, ‘‘উন্নতি হয়নি শিক্ষা ব্যবস্থার। নতুন শিক্ষানীতিতে নতুনত্ব কিছু নেই। যে জিনিসগুলি রাখার প্রয়োজন ছিল সেগুলি আছে এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই।’’ প্রশ্ন করা হয় ন্যায় সংহিতা লাগু নিয়েও। অর্থনীতিবিদের জবাব, ‘‘সংবিধান বদলাতে গেলে যে আলোচনার প্রয়োজন হয় তার প্রমাণ নেই। মণিপুরে যে সমস্যা, সেই সমস্যা মধ্য প্রদেশের নয়। তাই এ নিয়ে অনেক অনেক আলোচনা প্রয়োজন। আলোচনা না করে চট করে সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে পাশ করিয়ে নেওয়াটা খুব একটা শুভ নয়।’’


 

Comments :0

Login to leave a comment