রাশিয়ার কাজান শহরে ১৬তম ‘ব্রিকস’ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিত থাকার ঠিক আগে অনেকটা আচমকাই বিদেশ সচিব জানিয়ে দিলেন পূর্ব লাদাখে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যা নিয়ে যে অচলাবস্থা চলছিল চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সমাধানে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হয়ে গেছে। গালওয়ান উপত্যকা, প্যাঙগঙ লেক, হট স্প্রিং, গোগরা, ডেপসঙ ও ডেমচক এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দু’দেশের সেনারা আগের মতো টহল দিতে পারবে এই চুক্তির ফলে। তবে কবে কোথায় এই চুক্তি হয়েছে, চুক্তিতে ঠিক কি কি আছে তা খোলসা করেননি বিদেশ সচিব। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এতবড় একটা ইতিবাচক ঘটনা নিয়ে বিদেশমন্ত্রী কোনও উচ্চবাচ্য করেননি।
ভারতের পক্ষ থেকে এমন একটি স্বস্তির ও খুশির খবর জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীনের বিদেশ মন্ত্রকও চুক্তির কথাটি জানিয়েছে। পূর্ব লাদাখের এই অংশে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যা বহুকালের। কখনো দু’দেশের মধ্যে টক্কর বাড়ে আবার কখনো কিছুটা শিথিল হয়। কিছুকাল আপাত শান্ত থাকার পর ২০২০ সালে গালওয়ানে দু’দেশের সেনারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষও হয়। তাতে দু’পক্ষের বহু সেনা নিহত হন। তারপর থেকে সম্পর্কের তিক্ততা চরমে ওঠে। দফায় দফায় সামরিক স্তরে ও কূটনৈতিক স্তরের আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছিল। কিন্তু রাতারাতি তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে এমন ইঙ্গিত ছিল না। এখন মোদীর রুশ সফর এবং সেখানে ব্রিকস সম্মেলনের পাশে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিঙের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তুতির মুখে আচমকা জানা গেল সমস্যা মিটে গেছে।
যদি সত্যি সত্যি সমস্যা মিটে গিয়ে থাকে তাহলে তার থেকে আনন্দের কিছু হতে পারে না। উন্নয়নশীল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি দেশ তথা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং হতে যাওয়া তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে যদি চরম অবিশ্বাস, অসহযোগিতা এমনকি শত্রুতার সম্পর্ক তৈরি হয় সেটা দু’দেশের পক্ষেই ক্ষতিকারক। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা যত সহজ হবে, কূটনৈতিক সম্পর্ক যত মধুর হবে ততই দু’দেশের অগ্রগতি মসৃণ হবে। বিশ্বে নিজের যোগ্য জায়গা করে নেবার যে প্রত্যাশা ভারত বহন করে চলেছে তাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে আর যাই হোক চীনের সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক রাখা যাবে না। দুর্ভাগ্যের হলেও সত্য মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। কট্টর দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদের ঘেরাটোপে মোদী যে সরকার চালাচ্ছেন সেটা মতাদশর্তগতভাবে ভয়ঙ্কর কমিউনিস্ট বিরোধী। সেই অবস্থান থেকে ক্ষমতায় এসেই চীনের সম্পর্ককে জটিল করা হয়েছে। মোদীরা ভেবেছিলেন চীনের সঙ্গে আমেরিকা সহ পশ্চিমী দুনিয়ার বিরোধের সুযোগ নিয়ে ভারতের অর্থনীতিকে তরতর করে উন্নত করে নেবেন। কিন্তু এখন বুঝছেন সেটা আদৌ সম্ভব নয়। ভারতকে যদি সত্যিই উন্নত হতে হয় তবে চীনকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্কই ভারতের কাম্য। তাই ব্রিকস সম্মেলনের সময় শি জিনপিঙের সঙ্গে বৈঠকে বসে সম্পর্কের জটিলতা কিছুটা শিথিল করতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত। তারই আগামী বার্তা হিসাবে পূর্ব লাদাখে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর চুক্তি।
BRICS KAZAN
বোধোদয় হোক
×
Comments :0