১৯৯১’র পর থেকে উদার অর্থনীতির কারণে শ্রমজীবীর সমস্যা তীব্রতর হচ্ছে। মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। মজুরি সমানে কমছে। আরেকদিকে কর্পোরেটের দাপট বাড়ছে। শ্রমজীবীর ঐক্য ভাঙতে জাতপাত বা ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে। জীবনজীবিকার স্বার্থে জরুরি একজোটে লড়াই। সিআইটিইউ-কে সেই কাজই চালিয়ে যেতে হবে।
মঙ্গলবার মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামের সানাউল্লাহ মঞ্চে আলোচনা সভায় এই আহ্বান জানান সিআইটিইউ-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আভাস রায় চৌধুরী। ৯-১১ আগস্ট সিআইটিইউ-র সর্বভারতীয় জেনারেল কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে কলকাতার প্রমোদ দাশগুপ্ত অডিটরিয়ামে। তার প্রচারেই সিআইটিইউ-র মালদহ জেলা কমিটি 'দুনিয়া ও দেশের আলোকে শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম' শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রণব দাস। মঙ্গলবারই মালদহে রাজ্য ভাগের চক্রান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল করেছে সিআইটিইউ।
সভায় রায়চৌধুরী বলেন,‘‘শ্রমজীবী জনতা অনেকক্ষেত্রেই বুঝতেই পারছেন না মালিক কে। যেমন মালদহের বিড়ি শ্রমিকরা। মালদহে বিরাট সংখ্যক শ্রমিক বিড়ি শিল্পের সাথে যুক্ত, যার মূল অংশই মহিলা। তাঁরা বিড়ি বাঁধেন, মজূরিও পান। কিন্তু তাঁদের মালিক সরাসরি মজুরি দেয় না। মাঝে নিয়ন্ত্রণ করে ‘মিডলম্যান’, সাদা বাংলায় দালাল। মালিকের চরিত্র চেনানো শ্রমজীবীর আন্দোলনের কাজ। আর শ্রমজীবীর মধ্যে
বিরোধ সৃষ্টির জন্য জাতপাত ও ধর্মকে ব্যবহার করছে নালিকপক্ষই। তাই শ্রমজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুটো বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। একদিকে উদার অর্থনীতির বিরুদ্ধে, অন্যদিকে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে।’’
আভাস রায় চৌধুরী তার ভাষণে ব্যাঙ্ক বিমার মতো সরকারী উদ্যোগে গড়ে ওঠা শিল্পের প্রসঙ্গেও বলেন। তিনি বলেন, ‘‘শ্রমজীবী মানুষদের কথা ভেবে নয়। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে ছিল এই উদ্যোগ। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর বিশ্ব অর্থনীতির পথ অনুসরণ করে দেশেও কর্পোরেট স্বার্থরক্ষায় উদার অর্থনীতি চালু করা হয়। এরফলে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ও সংস্থার উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়। ফলে শ্রমজীবী মানুষদের উপর আক্রমণ নেমে আসে। কাজ হারাতে শুরু করে। সমস্ত সরকারী সংস্থাকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কয়লা ইস্পাত সহ রেল ব্যাঙ্ক বিমাও এই আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এই আক্রমণের শিকার। মানুষ কাজ হারাতে শুরু করেন। বেকারদের সামনেও কাজের সুযোগ নেই। উল্টো দিকে কর্পোরেট হাউসের সম্পদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূল উদারবাদের পথেই হাঁটছে। বিজেপি যতক্ষণ থাকবে তৃণমূলও ততক্ষণ থাকবে। তাই কর্পোরেট হাউসের পাশাপাশি এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।’’
এছাড়াও এদিন সভায় ভাষণ দেন সিআইটিইউ-র জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা, কার্যকরী সভাপতি মানওয়ারুল আলম ও সভাপতি প্রণব দাসও।
MALDAHA CITU
উদারবাদ-বিভাজন, দুয়ের বিরুদ্ধেই লড়াইয়ের আহ্বান
×
Comments :0