সেখ সাইদুল হক
কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সংসদের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করিয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর এখন আইনে পরিণত হয়েছে। এই নিয়ে গোটা দেশজুড়ে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ এবং ছাত্র-যুব সহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক গণসংগঠনগুলি পথে নেমে সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের বিরোধী এই বিভাজনমূলক আইন প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। এই আইন নিয়ে প্রচুর লেখালেখিও হয়েছে। বর্তমানে গত ১১ মার্চ ২০২৪ কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঐ আইন কার্যকরী করার জন্য প্রয়োজনী বিধি (Rules) প্রণয়ন করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার সাম্প্রদায়িক বিভাজনের লক্ষ্যেই এবং আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ফয়দা তুলতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কেরালা সরকার এই আইন ঐ রাজ্যে লাগু করবে না বলে জানিয়েছে। বহু সংগঠন ও বিশিষ্টজনেরা ঐ আইন এবং বিধি সমূহ বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এই রাজ্যের তৃণমূল সরকার ধরি মাছ না ছুঁই পানি এই অবস্থান নিয়েছে এবং বাইনারি তৈরি করতে বিজেপি বিরোধী মেকি অবস্থান নিয়েছে। আমি কেবল সেই সূত্রেই কিছু কথা ব্যক্ত করছি।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন ও তার সংশোধন-
স্বাধীন ভারতে ১৯৫৫ সালে নাগরিকত্ব আইন রচিত হয়। সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ৫ থেকে ১১ এই সাতটি ধারাতে নাগরিকত্ব নির্ধারণ প্রাপ্তি, গ্রহণ ও বর্জন বর্ণিত হয়েছে। ১১নং ধারায় নাগরিকত্ব বিষয়ে আইন প্রণয়নের অধিকার সংসদের এক্তিয়ারভুক্ত করা হয়েছে। ভারতের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে বসবাসকারী সমগ্র জনসাধারণকে স্বাধীনতার সময় হতেই ভারতে বসবাসকারী সমগ্র জনসাধারণ (প্রাথমিক ভিত্তি তারিখ ছিল ১৯৪৮ সালের ১৯ জুলাই) ভারতের নাগরিক হিসাবে গণ্য করা হয়। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার তিনটি পদ্ধতি (১) জন্মসূত্রে, (২) উত্তরাধিকার সূত্রে, (৩) স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। জন্মসূত্রে ১৯৫০ জানুয়ারি হতে জুন ১৯৮৭ পর্যন্ত যে শিশুই জন্মেছেন তারা ভারতীয় নাগরিক। এরপর ১৯৮৬ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী অনুযায়ী জুলাই ১৯৮৭ হতে নভেম্বর ২০০৪ পর্যন্ত যারা জন্মেছেন তাদের পিতা কিংবা মাতাকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে তবে জন্মেসূত্রেই নাগরিক হবেন। এরপর ২০০৩ সালের সংশোধনী অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০০৪-এর পরে যারা জন্মেছেন তাদের পিতা মাতা উভয়কেই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। উত্তরাধিকার সূত্রে নাগরিক মানে হলো যারা দেশের বাইরে জন্মেছেন (জানুয়ারি ১৯৫০ থেকে নভেম্বর ১৯৯২) তাদের বাবাকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং যারা ডিসেম্বর ১৯৯২-এর পরে জন্মেছেন তাদের বাবা-মার মধ্যে একজনকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। এছাড়া ষিনি ১১ বছর এবং একটানা শেষ ১২ মাস ভারতে বসবাস করছেন তিনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারেন। নাগরিকত্ব আইন পাঁচ বার সংশোধিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৩ সালের সংশোধনী গুরুত্বপূর্ণ। এই সংশোধনী এনেছিল বাজপেয়ী সরকার যেখানে মমতা ব্যানার্জি শামিল ছিলেন। ২০০৩ সংশোধনীতে বলা হয় অবৈধ্য অভিবাসী (Illegal Migrant) কথাটি যুক্ত হয় এবং বলা হয় ঐ সন্তানরা ভারতের মাটিতে জন্মালেও ভারতের নাগরিকত্ব লাভ থেকে চিরতরে বঞ্চিত হবে। ২০০৩ সালের সংশোধনীতে আরও বলা হয় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক পঞ্জিকরণ করা।
বর্তমান সংশোধনীতে কি বলা হয়েছে -
এখন দেখে নেওয়া যাক বর্তমান সংশোধনীতে কি বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই বিলের তিনটি অংশ
(১) আইনে প্রস্তাব করা হয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান হতে যে সব হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি, শিখ এবং খ্রিস্টান ভারতে এসেছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার অধিকারী হবে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (এ বিষয়ে পূর্বেই একটি প্রশানিক নির্দেশ নামা জারি করা হয়েছে)। তাদের এই সুবিধা দিতে ফরেনার্স অ্যাক্ট (১৯৪৬) এবং পাসপোর্ট অ্যাক্টের (১৯২০)ধারা হতে তাদের বাদ দেওয়া হবে অর্থাৎ তারা অবৈধ নাগরিক হবে না।
(২) স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেতে গেলে (Citizenship by Naturalization) আবেদকারীকে আবেদনের সময় ভারতে টানা ১২ মাস এবং শেষ মোট ১১ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর এখানে বসবাস করতে হবে
এই আইন সারা দেশে লাগু হবে। কেবল উত্তরপূর্ব ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে চাপা দিতে বলা হয়েছে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যাণ্ড, মিজোরামের ইনারলাইন পারমিট এলাকা এই আইনে বাইরে থাকবে এবং আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরায় ষষ্ট তফসিলে গঠিত জেলা পরিষদ ও স্বশাসিত এলাকায় এই আইন কার্যকর হবে না।
কেন এই সংশোধিত আইন সংবিধান বিরোধী ?
পূর্বেই বলেছি ৫ হতে ১১ নং ধারায় নাগরিকত্ব বিষয়ে সংবিধানে আলোচিত হয়েছে। এখন দেখা যাক ১৪, ১৫, ২১, ২৫, ২৯ ধারা । সংবিধানের ১৪ নং ধারাটি হলো সকলের সমতার অধিকার পাওয়া এবং ১৫ নং ধারাটি হলো ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ ইত্যাদির কারণে কোনও নাগরিকের প্রতি বৈষম্য না করা। ২১ নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্র কোনও নাগরিকের জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতাকে কেড়ে নিতে পারবে না। সংবিধানের ২৫ নং ধারা হলো ব্যক্তির ধর্মপালনের স্বাধীনতা। ২৯ নং ধারা হলো সংখ্যালঘু অধিকার ও স্বার্থ এবং তাদের নিরাপত্তাকে রাষ্ট্র কর্তৃক রক্ষা করা। সেই অর্থে বর্তমান সংশোধনীগুলি ভারতের সংবিধানের মূল মর্মবস্তু যে ধর্মনিরপেক্ষতা তার বিরোধী। সেই অর্থে এই বিল সংবিধান বিরোধী।
সংশোধনীয় আইনটিকে কি ধরনের বৈষম্য করা হয়েছে?
বিলটিতে চার ধরনের বৈষম্য করা হয়েছে। এক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ও বাংলাদেশের অমুসলিম অনুপ্রেবেশকারী ও মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে। দুই, এই তিন দেশের অনুপ্রবেশকারী এবং অন্য দেশগুলির অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে। তিন, ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে আসা অনুপ্রবেশকারী এবং জাতি বিদ্বেষ বা অন্য ধরনের নির্যাতনের কারণে আসা অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে। চার, আফগানিস্তানের সাথে ভারতের সীমান্ত নেই। অথচ সেখান থেকে আগত অমুসলিমদের অবৈধ্য নাগরিক বলা হবে না অথচ শ্রীলঙ্কা, চীনের ও মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত আছে কিন্তু সেখানকার নাগরিকরা নির্যাতনের কারণে এদেশে এলে তারা বাদ যাবে। কেন বাদ যাবে? রোহিঙ্গা বলে? পাকিস্তান থেকে আহমদিয়ারা কিংবা বাংলাদেশ হতে সিয়ারা যদি ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে এদেশে আসতে বাধ্য হন তারা এই সুযোগ পাবেন না। কেন? কেননা তারা মুসলিম বলে। শুধু মুসলিম নন এমনকি জাতিগত বিদ্বেষের কারণে যদি শ্রীলঙ্কা থেকে তামিলরা আসে তাহলে তারাও নাগরিকত্বের সুযোগ পাবে না।
সংসদ কি এইভাবে আইন করতে পারে?
সংবিধানের ১১ নং ধারাতে নাগরিকত্ব প্রশ্নে আইন করার অধিকার সংসদের আছে। কিন্তু সেই আইন কখনই সংবিধানের মর্মবস্তুকে লঙ্ঘন করতে পারবে না। ১৯৭৩ সালের কেশবানন্দ ভারতী মামলায় এবং ১৯৯৪ সালে এসআর বোম্বাই বনাম ভারত সরকারের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল সংবিধানের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সংসদের সংখ্যাধিক্যের মাধ্যমে পরিবর্তন বা নষ্ট করা যায় না। এগুলি হলো দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক চেহারা এবং ধর্ম নিরপেক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য। বর্তমান সংশোধনীতে সেই ধর্মনিরপেক্ষতাই আক্রান্ত।
যে সমস্যা দেখা দেবে
এই আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব পেতে দুটি জিনিস প্রমাণ করতে হবে। ১) সেই ব্যক্তি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান হতে ২০১৪-র ডিসেম্বরের মধ্যে এসেছেন। ২) তিনি হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, পার্সি ধর্মের লোক। কবে এসেছেন তার প্রমাণ হবে কিভাবে? বিদেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের প্রমাণ অনেকের কাছে নাও থাকতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলছেন সেই ব্যক্তি জানালেই হবে। এখন সেই ব্যক্তিতো ২০১৪-র ডিসেম্বরের পরেও আসতে পারেন। আর তাই কেন্দ্রীয় সরকারের পদস্থ এক আমলা বলেছেন এত সহজে নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে না।
তাছাড়া নতুন সংশোধনী আইনে ধর্মীয় নিপীড়নের কথা সরাসরি উল্লেখ নেই। কিন্তু তা উল্লেখিত আছে রুলে। মূলত ফরেনার্স অ্যাক্ট (১৯৪৬)-এ। এটি সংশোধন হয়েছে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে। এখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা আছে ধর্মীয় নিপীড়নের কথা। তাহলে তারা সেই সার্টিফিকেট কোথায় পাবে? কি দেখাবে?
তাছাড়া তাদের সরাসরি নাগরিকত্ব দেওয়া হবে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে একথা কোথাও বলা নেই। বলা হয়েছে তাদের ওপর থেকে অবৈধ্য অনুপ্রবেশকারীর তকমা তুলে নেওয়া হবে। এরপর তারা যদি নাগরিকত্ব পেতে চায় তাহলে ৫ বছর টানা ভারতবর্ষে বাস করতে হবে। এই সময়কালে তাদেরকে কি রাষ্ট্রহীন হয়ে থাকতে হবে? অথবা এরা সন্দেহভাজন নাগরিকে (ডি ভোটার) পরিণত হবেন? উদ্বাস্তুদের অনেকেই ৪৭ সালের পরে এবং ১৯৭১ সালের আগে এখানে এসেছেন বসবাস করছেন, ভোটার কার্ড হয়েছে, আধার কার্ড হয়েছে, রেশন কার্ড হয়েছে, অনেকে এখানে পড়াশুনা করেছেন, সরকারি চাকরি করেছেন। তারা এখন কি করবেন? কি করে প্রমাণ করবেন ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে এসেছেন? কোথায় পাবেন বাপ ঠাকুরদার জন্ম নথি কিংবা পুরানো জমি বাড়ির দলিল। ফলে শুধু সংখ্যালঘু নন বিশাল সংখ্যায় বাঙালি উদ্বাস্তুদের নাগরিক অধিকার বিপন্ন হবে। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গরিব এবং দলিত সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা। যাদের অধিকাংশের কাছেই কোনও নথিপত্র থাকার সম্ভবনা কম।
নাগরিকত্ব সংশোধী বিল ও নাগরিক পঞ্জি-
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন নাগরিক পঞ্জীর সঙ্গে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা সর্বৈবই অসত্য। আসামের চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি থেকে যে ১৯ লক্ষের নাম বাদ পড়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষই হিন্দু। এর পরে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে এনআরসি চালু করার কথা বলায় নাগরিকেরা আতঙ্কিত।
বিজেপি সরকার এনআরসি করতে চাইছেন সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকেই। কিন্তু নাগরিক পঞ্জির দাবি মানেই হলো এটা ধরে নেওয়া যে সব নাগরিকই বিদেশি। এবার তাদের নথি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে তারা ভারতীয়। কেন তা হবে?
বামপন্থীরা কি নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে ?
না, ২০১২ সালে সিপিআই(এম)’র কোজিকোড় কংগ্রেসে উদ্বাস্তু বাঙালিদের নাগরিত্ব দেওয়ার দাবিতে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। বামপন্থীদের বক্তব্য প্রস্তাবিত আইনের ২ ও ৬ নং ধারায় কোনও দেশের ও সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ না করে কেবল লেখা হোক “প্রতিবেশী দেশগুলি হতে আগত”। এই মর্মে সংশোধনী দেওয়া হয়েছিল।
আইন কেন বিপজ্জনক ?
১৯৩৩ সালে জার্মানিতে হিটলার নাগরিকত্ব আইন তৈরি করেন এবং ১৯৩৫-এ নুরেমবার্গ ল তৈরি করেন। তিনি বলেছিলেন জার্মানিতে বসবাসকারী ইহুদিদের কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু দেখা গেল জার্মানির ইহুদিদের অনেককে অবৈধ নাগরিক করে দেশ ছাড়া করা হলো, অনেকজনকে কনস্ট্রাশন ক্যাম্পে মেরে ফেলা হলো। এখন হিটলারের ভক্তরা এদেশে বলছেন ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের ক্ষতি হবে না। আবার ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। আর এটাই হলো বিপদের কারণ। তাঁরা বর্তমান ইজরাইলী জাতি বৈষম্যমূলক মডেল গড়ে তুলতে চাইছেন। তবে আক্রমণের লক্ষ্য কেবল সংখ্যালঘু মুসলিমরাই হবে না। আসামের উদাহরণে দেখা গেছে ডি ভোটার হওয়া কিংবা ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়া কিংবা নাগরিক পঞ্জিতে নাম না থাকা মুসলিমদের পাশাপাশি অনেক হিন্দুও আছেন। এবং তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই বিপদটা ভারতীয় জনগণের ও সংবিধানের।
মন্দা থেকে দৃষ্টি ঘোরানা
সারা দেশ মন্দায় ধুঁকছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে। বস্ত্র শিল্প, বিস্কুট শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, গাড়ি নির্মাণ শিল্প ধুঁকছে। বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। কৃষকের অবস্থা সঙ্গিন। মোদী জমানায় গত প্রায় দশ বছরে বেকারির হার সর্বোচ্চ। দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই কখনও কাশ্মীর, কখনও হিন্দি ভাষা আরোপ, কখনও এনআরসি, কখনও নগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রভৃতি বিষয়কে আমদানি করছে বিজেপি। সারা দেশের বিভেদের বিষ বাষ্প ছড়াচ্ছে বিজেপি সরকার।
তৃণমূল দলের ভূমিকা-
বাজপেয়ীর আমলে ২০০৩ সালে সংসদে বিজেপি ও অসম গণপরিষদ সদস্যরা বাংলাদেশ হতে অবৈধ অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ তুললে সেই সময় এরাজ্যের তৃণমূল সাংসদ বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাদের সাথে গলা মিলিয়ে বলেছিলেন বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে চলে আসছে এবং ভোটার লিস্টে নাম তুলে ভোট দিচ্ছে। তাই তাদের নাগরিকত্ব বাদ দিতে হবে। ২০০৩ সালে বাজপেয়ী সরকার যখন নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে তখন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ঐ সরকারে শামিল ছিলেন এবং ঐ সংশোধনীকে সমর্থন করেছেন। মমতা সরকার ডিটেনশন ক্যাম্প বানানোর জন্য রাজারহাট ও বনগাঁয়ে জমি দিয়েছিল। বামেদের আন্দোলনের চাপে পিছু হটেছে। তাহলে এটা কি এক ধরনের দ্বিচারিতা নয়?
তাই এই আইনের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে যেমন সর্বোচ্চ আদালতে মামলা হয়েছে তাই তাকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। আমাদের একটাই দাবি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং তারজন্য বিধিসমূহ কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রত্যাহার করতে হবে।
Comments :0