আর চার পাঁচ জনের মতো স্বাভাবিক জীবন নয়। সাধারণদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে সফল দক্ষিণ দিনাজপোরের পায়েল পা। এবছর উচ্ছ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থী পায়েল সফল হয়েছে। মানসিক শক্তির সামনে যে শারীরিক কোনও বাধা কিছুই না, তা প্রমান করে দেখালেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পায়েল পাল। সামাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৫৫৪। এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ৯২ শতাংশ নম্বার সে। শারিরীক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অদম্য ইচ্ছে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তার কাছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের অমৃত খন্ড পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বাদামাইল লক্ষ্মী প্রতাপ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী পায়েল পাল।
শরীরের কোমর থেকে নিচের অংশটাই মূল প্রতিবন্ধকতা। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করাই অসম্ভব। প্রতিদিন মা কামারপাড়া বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বাদামাইলে টোটো করে নিয়ে গিয়ে স্কুলের গেট থেকে পাঁজা কোলে নিয়ে ক্লাসের বেঞ্চে বসিয়ে দিত। স্কুলে ক্লাসের বাইরে বসে থাকতেন মা। পায়েল পেয়েছে ( ৪৬০) নম্বর।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসিত বরন লাহিড়ী বলেন, পায়েল ভীষণ শান্তশিষ্ট মেয়ে। স্কুলের এক্সকারশনে অন্যান্যদের সঙ্গে ও গিয়েছিল শান্তিনিকেতনে। ও ভীষণ সহযোগিতাপূর্ন মেয়ে। মাধ্যমিকেও ভালো নম্বর পেয়েছিল। তিনি বলেন পড়াশোনার প্রতি ভালো মনোযোগ আছে পায়েলের। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা যথেষ্ট নজর দিত। স্কুলে কখনও দ্বিতীয় হয়নি সে। পায়েল জন্ম থেকেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও এখনও তার উচ্চতা ছোট্ট শিশুর মতই। কোমরের নীচ থেকে কার্যত অসাড়। নিজে স্নান করতে পারে না, চলাফেরা বা খাবার খাওয়ার জন্যও মায়ের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। রুগ্ন হাত দিয়ে কোনও ভারী কাজ করতে পারেনা। তবে কলম চালাতে পারে সে। পায়েলের বাবা দীজেন পাল দর্জির কাজ করেন। কোন মতে দারিদ্রতার সঙ্গেই সংসার চলে। পায়েলের মা গৃহবধু। পায়েলের একটি ভাই আছে ওই স্কুলেই ক্লাস সেভেনে পড়ে। উচ্চ মাধ্যমিকের ভালো ফলে পায়েলের বাবা মা ভীষণ খুশি। খুশি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও। মেয়ের সাফল্যে আনন্দিত হলেও, উচ্চ শিক্ষার ব্যয়ভার কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার বাবা- মা। ফোনে পায়েলের সঙ্গে কথোপকথনে জানাগেলো আগামীতে কলেজের পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। তবে কোথায় ও কোন বিষয় নিয়ে কলেজে পড়বে তা পরিবার ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে।
Higher Secondary Exam 2024
মায়ের কোলে চড়েই যেত পরীক্ষা কেন্দ্রে, উচ্চ মাধ্যমিকে ৯২% নম্বার পায়েলের
×
Comments :0