যাগ-যজ্ঞ-হোম-প্রার্থনা নয়, জয় শ্রীরাম বা মোদী মোদী ধ্বনিও নয়, এমনকি নির্বাচনী প্রচারের চরম ব্যস্ততার মধ্যে লোক দেখানো খোঁজ নেওয়াও নয়, সুড়ঙ্গের গভীরে গাঢ় অন্ধকারে ১৭দিন আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে মুক্ত আকাশের নিচে স্বাভাবিক আলোবাতাসে ফিরিয়ে এনে কার্যত নতুন জীবন দান করেছেন শ্রমিকরাই। যখন বিশ্বগুরুর আধুনিক উন্নত ভারতের যাবতীয় কেরামতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত, ডিজিটাল ইন্ডিয়া বা স্কিল ইন্ডিয়া মুখ থুবড়ে পড়েছে, মেক-ইন-ইন্ডিয়া হাবুডুবু খাচ্ছে অথৈ জলে তখন আপন সাধনায় অর্জিত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অদম্য সাহস ও জেদে মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে জীবন সংগ্রামের সহযোদ্ধা শ্রমিকদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে শ্রমিকরাই। হাসি ফুটিয়েছে ৪১ জন বিপন্ন শ্রমিক, তাদের পরিবারপরিজন এবং সর্বোপরি সমস্ত ভারতবাসীর মুখে।
১৭দিন ধরে কেন্দ্র ও উত্তরাখণ্ডের ডাবল ইঞ্জিনের সরকার কার্যত অন্ধকারে হাতড়ে বেড়িয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে বিস্তর যন্ত্র ও বিশেষজ্ঞ আনিয়েছে। কাজে আসেনি কোনও চেষ্টাই। শেষে ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে লোহার পাইপের ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকে পাথর কেটে কেটে কোনোরকমে রাস্তা বের করে আটক শ্রমিকদের কাছে পৌঁছেছেন বিশেষভাবে দক্ষ ও পারদর্শী শ্রমিকরা। বাইরে বের করে এনেছেন সকল আটক শ্রমিকদের। অথচ ১৬দিন ধরে এই শ্রমিকদের কথা কারও মাথাতেই আসেনি। কেউ ভাবতেই পারেনি সাফল্যের আসল চাবি আছে এদের হাতেই। অত্যন্ত বেদনার ও দুঃখের হলেও এটা সত্য যে মোদী জমানায় এই শ্রমিকদের কোনও কদর নেই। সমস্ত ধরনের আইনি সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে থেকে সামান্য মজুরির বিনিময়ে এরা জীবন বিপন্ন করে ঝুঁকি বহুল কাজ করে যায় পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে। এদের পদে পদে শোষণ-বঞ্চনার খবর সরকার, এমনকি সমাজও রাখে না। রাখলেও উপেক্ষা করে। অভিজাত কর্তৃপক্ষের নজর তথাকথিত উন্নত ও নজরকাড়া ব্যবস্থার দিকে। সেসব ব্যবস্থা যখন পদে পদে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে তখন ছাই ফেলতে ভাঙা কুলোর মতো ডাক পড়েছে আপন কৃতিত্বে দক্ষ শ্রমিকদের। তারা এসেছেন তাদের মতো শোষিত-বঞ্চিত, সমস্ত রকমের সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত বিপন্ন শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে। তারা সেটা পেরেছেন। দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছেন শ্রমিকদের আসল বন্ধু শ্রমিকরাই। এটাই দেখিয়ে দিয়েছেন তাদের অসাধ্য, অজেয় কিছু নেই। শৃঙ্খল ছাড়া হারাবারও কিছু নেই। কিন্তু জয় করার জন্য আছে গোটা বিশ্ব।
EDITORIAL RESCUE WORKERS
শ্রমিকরাই পারে
×
Comments :0