Ecosystem of corruption

দুর্নীতির ইকোসিস্টেম*

সম্পাদকীয় বিভাগ

একদা গোখেল বলেছিলেন আজ বাংলা যা ভাবে ভারত কাল তা ভাববে। গোখেলের কথাকে যদি আজকের বাস্তবতায় মান্যতা দিতে হয় তাহলে অচিরেই সারা বিশ্বে সবচেয়ে চোর-জোচ্চরের দেশের শিরোপা অর্জন করতে ভারত। বঙ্গবাসীর দুর্ভাগ্য তৃণমূলের সৌজন্যে বাংলা রসাতলে গেছে ঠিকই তাই বলে কোনও সচেতন বাঙালি চাইবেন না দেশটাও এভাবে বরবাদ হয়ে যাক। অবশ্য তেমন আশঙ্কা নেই সেটা বলা যাবে না। বিশেষ করে দিল্লিতে ক্ষমতার ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তাঁর যথেষ্ট যোগ্যতা আছে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং ঐতিহ্য পরম্পরাকে ভেঙে চৌপাট করে দেবার।
যাই হোক বাংলা যে এখন সর্বব্যাপী দুর্নীতি এবং সংগঠিত ভ্রষ্টাচারের স্বর্গরাজ্য তাতে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল জমানা শুরু পর থেকে চুরি-দুর্নীতি একাত্ম হয়ে গেছে এই সরকারের সঙ্গে। সারদা চিট ফান্ড থেকে শুরু করে কয়লা পাচার, গোরু পাচার, বালি পাচার, সিন্ডিকেটতন্ত্র, তোলাবাজি, কাটমানি, ত্রিপল সহ ত্রাণের টাকা চুরি, আবাস কেলেঙ্কারি, রেশন কেলেঙ্কারি, শিক্ষায় দুর্নীতি, টাকার বিনিময়ে অযোগ্য-অপদার্থদের সরকারি কাজে নিয়োগ, সর্বত্র টাকার বিনিময়ে বেআইনি নির্মাণ, জমি দখল, হুমকি-ভীতির তাণ্ডবে মাফিয়া-দুষ্কৃতী‍দের নৈরাজ্য ইত্যাদি অন্তহীন ধারায় বয়ে চলেছে সভ্য সমাজে ঘৃণিত এক অসভ্য রাজত্ব। ইদানীং তোলপাড় শুরু হয়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্নীতির ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়ে। সর্বশেষ ছাত্র-ছাত্রীদের ট্যাবের টাকা লোপাটের নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি এরাজ্যে এখন নীতির কোনও অস্তিত্ব নেই। সবটাই দুর্নীতিতে মোড়া। সরকার যে কাজে হাত দেবে সেখানে আগে থেকেই দুর্নীতি, তছরূপ, অর্থ লোপাটের নিখুঁত পরিকল্পনা তৈরি হয়ে থাকে। দুর্নীতির সরকারি প্রকল্পের শুরু এবং শেষ। চোর-জোচ্চর, দুষ্কৃতী, অপরাধীদের সঙ্গে সরকারের সর্বস্তরে নিবিড় ঘনিষ্ঠতা। শাসকদল, প্রশাসন এবং দুষ্কৃতীরা মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। বাংলাকে এই জায়গায় নামিয়ে আনার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির।
ট্যাব দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নিঃসৃত বাণী, তাঁর সরকার নাকি অত্যন্ত শক্তিশালী। ইতিমধ্যে ছ’জনকে ধরে ফেলেছে। বাকি যা করার করবে। এই ‘ধরা’ আর ‘যা করার করা’র মধ্যে লুকিয়ে আছে আসল রহস্য। সেই প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর এমন বাণীর ভাঙা রেকর্ড মানুষ শুনছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত দুর্নীতি-অনিয়মের উৎস খুঁজে বার করা হয়নি। দুর্নীতি ধরা পড়ার আগে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কোনও নজরদারি থাকে না। দুর্নীতি বোধের কোনও সচেতন প্রয়াস থাকে না। দুর্নীতির সব সুযোগ রেখে দিয়েই সরকার কাজ করে। ধরা পড়ার পর দু’দিন অতি অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখিয়ে দু’চারজন চুনোপুঁটিকে ধরে এমন ভাব দেখায়, সরকার এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যাতে দ্বিতীয়বার এমন অপরাধ করার সাহস কেউ না পায়। বাস্তবে ঐ পর্যন্তই তারপর চাপা পড়ে যায়। শুধু হয়ে যায় পরের দুর্নীতির প্রস্তুতি। 
সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের ট্যাব কেনার জন্য দশ হাজার করে টাকা তাদের নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে দিচ্ছে। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তারা ছাড়া ঢালাওভাবে এই টাকা লোপাট করা সম্ভব নয়। মমতা জমানায় আজ পর্যন্ত যত দুর্নীতি হয়েছে সব কটাই হয়েছে ভেতর থেকে। শাসকদলের নেতা, আধিকারিক, কর্মীদের যোগসাজশেই হয়েছে। দুর্নীতির এক নিখুঁত ইকোসিস্টেম তৈরি হয়ে গেছে এই জমানায়। তাকে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

Comments :0

Login to leave a comment