Sushanto Ghosh Panchayat

পঞ্চায়েতে পুলিশ রাজ, বেনজির প্রতিরোধও: সরাসরি সুশান্ত ঘোষ

রাজ্য জেলা

Sushanto Ghosh Panchayat রবিবার মেদিনীপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে সুশান্ত ঘোষ।

চিন্ময় কর

চাপ দিয়েও মনোনয়ন তোলানো যায়নি বেশিরভাগ জায়গায়। সিপিআই(এম)’র একের পর এক নেতার বিরুদ্ধে চাপানো হচ্ছে মামলা। যার অনেকই জামিন অযোগ্য ধারায়। আক্রান্তদেরই অভিযুক্ত করছে পুলিশ। তার মধ্যেই লড়াই জোরালো করেছে বামপন্থীরা। 

পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চায়েতের লড়াইয়ের এমনই ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। রবিবার তিনি জানিয়েছেন, হামলা ষড়যন্ত্রের মধ্যেও এবার জেলায় জেলা পরিষদে সব আসনে, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৮৩ শতাংশ আসনে এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৮.২ শতাংশ আসনে প্রার্থী দেওয়া গিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘গ্রাম পঞ্চায়েতে ৭০ শতাংশ প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর ৬৮.২ শতাংশ আসনে প্রার্থী রয়েছে আমাদের।’’ 

তিনি জানিয়েছেন, ২০১৮’র পঞ্চায়েত ভোটে তিনটি স্তর মিলিয়ে ১৫ ভাগ প্রার্থী দেওয়া গিয়েছিল। কারণ পরিস্থিতি ছিল না। শাসকদল, তাদের আশ্রিত সমাজবিরোধী এবং পুলিশ মিলিতভাবে আক্রমণ নামিয়েছিল। কারণ তৃণমূল পঞ্চায়েতকে বিরোধী শূন্য করার ঘোষণা করে মাঠে নেমেছিল।

পুলিশ এবং তৃণমূলের কড়া নিন্দায় ঘোষ বলেছেন, ‘‘পুলিশের ভূমিকা ন্যক্কারজনক বললেও কম বলা হয়। মনোনয়নের আগে থেকেই চলছিল, মনোনয়নের পর মাত্রা আরও বেড়েছে। পুলিশি সন্ত্রাসের ব্যবস্থা করে শাসকদল একতরফাভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার খেলা খেলতে চাইছে।’’ 

ঘোষ জানিয়েছেন, তিনশোর বেশি সাজানো মামলা পুলিশ দায়ের করেছে সিপিআইএম)’র প্রার্থী, কর্মী এবং নেতাদের বিরুদ্ধে। অনেক মামলাই রয়েছে জামিন অযোগ্য ধারায়। কোনও তদন্ত না করে মামলা দেওয়া হয়েছে। ঘোষ বলেছেন,‘‘নির্বাচনে তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতে  জেলে ভরার চক্রান্ত হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনে জানিয়েও মিলেনি উত্তর। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবে জেলা পার্টি।’’

তৃণমূলের উদ্দেশ্যে ঘোষ বলেন, ‘‘এতই যদি উন্নয়ন করে থাকেন মানুষকে প্রার্থী হতে দিন, ভোট দিতে দিন। আসলে ওঁরা জানেন কী করেছেন, মানুষের ক্ষোভ কোন স্তরে পৌঁছেছে। তাই পুলিশকে দিয়ে মনোনয়ন তোলাতে হচ্ছে। তারপর মামলা সাজাতে হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ রাজ চলছে।’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের কিছু আগে জেলায় পুলিশ প্রধান পদে রদবদল হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কা ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচন হিসেবে রেখে এই বদলি। আমাদের আশঙ্কা একশোভাগ ঠিক।’’

এই জেলারই দাসপুরের মহিলা প্রার্থী সুষমা সাউকে মনোনয়ন তোলাতে ব্লক দপ্তরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, সেই দৃশ্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। হাইকোর্টে গিয়েছেন সাউ। তাঁর পক্ষে আদালতে বলা হয়েছে যে পুলিশ সাদা কাগজে সই করিয়ে মিথ্যা বয়ান সাজিয়েছে। সিপিআই(এম) নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে সেই সাজানো বয়ানের ভিত্তিতে। হাইকোর্টে সিপিআই(এম) নেতাদের সঙ্গে ছবিও তোলেন সাউ। 

ঘোষ বলেছেন, ‘‘মনোনয়ন তোলানো বাধা দেওয়ায় দাসপুরে পার্টি কর্মী, নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’’ চন্দ্রকোণার কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উদাহরণও দেন তিনি। যেখানে মহিলা প্রার্থীর নাম তোলাতে গড়বেতা থেকে তাঁর আত্মীয়দের পাঠানো হয়। সেই আত্মীয়দের বয়ান দেখিয়ে পুলিশ কৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতে সিপিআই(এম)’র সব প্রার্থী এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারাণ মামলা দায়ের করেছে। ঘোষ বলেছেন, ‘‘পুলিশ সরাসরি বলছে যতজনকে পাব, যেখানে পাব ধরব।’’

বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক। যেমন গড়বেতার মতো সন্ত্রাসে আক্রান্ত ব্লকে দু’টি পঞ্চায়েতে প্রার্থী দেয়নি সিপিআই(এম)। ঘোষের ব্যাখ্যা, ‘‘বাঁকুড়া ও হুগলি লাগোয়া ওই ২টি পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিলে পরিস্থিতি যা দাঁড়াতো তাতে ওখানেই ব্যস্ত থাকতে হতো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েই দেইনি। কিন্তু ব্লকের বাকি ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সব আসনে প্রার্থী দিয়েছি।’’

Comments :0

Login to leave a comment