রবিবার রাশিয়ার বেলগোরাড প্রদেশে অনুপ্রবেশ করে ইউক্রেনের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বাহিনী। ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও অনুপ্রবেশকারীদের পুরোপুরি খতম করতে পারেনি রাশিয়া। রাশিয়ার অভিযোগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমী জোট চাইছে সংঘর্ষ জারি রাখতে। তাই নতুন করে উষ্কানি দেওয়া হচ্ছে সংঘাতে।
সোমবার পাওয়া খবর অনুযায়ী, বেলগোরাড প্রদেশ বা বেলগোরাড ওব্লাস্টের গ্রেভরন শহর সংলগ্ন এলাকায় সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রবিবার কোজিনকা শহর অবধি ঢুকে পড়ে ইউক্রেন সেনা। সোমবার কোজিনকা থেকেও সংঘর্ষের খবর মিলেছে। যদিও কোজিনকার অধিকাংশ এলাকা রুশ সেনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
একই ভাবে রবিবার গ্লোটোভো গ্রামেও প্রবেশ করে ইউক্রেন। সোমবার গ্লটোভো যাওয়ার রাস্তার দখল নিতে সক্ষম হয়েছে রুশ সেনা ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি। যদিও গ্লোটোভো কাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
অপরদিকে সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ বেলগোরাড ওব্লাস্টের গ্রেভোরন এবং বেলগোরাড শহর লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রুশ সেনা সূত্রে দাবি, সীমান্ত লাগোয়া ইউক্রেনের বোলশায়া পিসারেভকা এলাকায় সেনা মজুদ করেছে ইউক্রেন। সেখান থেকেই পুরোদমে রাশিয়ায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলছে। মজুদ হয়েছে ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়িও। রাশিয়ার দাবি এই এলাকায় ৫০০’র বেশি সেনা জড়ো করেছে ইউক্রেন। যদিও এখনও অবধি এই এলাকা দিয়ে রাশিয়ায় ঢুকতে পারেনি ইউক্রেন সেনা।
রুশ গোয়েন্দা বিভাগের দাবি, বেলগোরাড সীমান্ত বরাবর কয়েক হাজার সেনা বা একাধিক ব্রিগেড মোতায়েন করেছে ইউক্রেন। একটি ব্রিগেডে সাধারণত ৪ হাজার জওয়ান থাকে। এই ব্রিগেডের সদস্যরা মূলত অ্যাজভ কিংবা ক্র্যাকেনের মতো নব্য নাৎসি আধা সামরিক সংগঠনের সদস্য। এই বাহিনীর একটি দল গোর্কি হয়ে বেলগোরাডে ঢোকার চেষ্টা চালায় সোমবার সকালে। যদিও রুশ সেনা সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করেছে।
গোর্কিতে আটকে গেলেও , শ্চেটিনোভকা এলাকা দিয়ে বেলগোরাডে ঢুকে পড়ে অ্যাজভ কর্মীদের একটি ছোট দল। তাঁদের সঙ্গে রুশ সেনার যুদ্ধ চলছে পুরোদমে।
অপরদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, বেলগোরাডে ইউক্রেনের অগ্রগতি আটকে দেওয়া গিয়েছে। প্রতিটি লোকালয় রুশ সেনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলা সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানে শতাধিক উগ্রপন্থী নিহত হয়েছে। কোজিনকা থেকে পালানোর সময় একটি মার্কিন সাঁজোয়া গাড়ি ফেলে রেখে গিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনা।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, সম্প্রতি পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাসে বাখমুট শহরের দখল নিয়েছে রাশিয়া। বাখমুটের যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ইউক্রেনীয় এবং পশ্চিমী দেশগুলির ভাড়াটে সৈনিক। সেই বিপর্যয় থেকে নজর ঘোরাতেই বেলগোরাডে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। হামলায় কোনও জনপদের দখল নিতে না পারলেও, রাশিয়ায় ঢুকে পড়াকে ন্যাটো সহ পশ্চিমী জোটের কাছে সাফল্য হিসেবে জাহির করবে ইউক্রেন, যাতে অস্ত্র সাহায্য বজায় থাকে।
রাশিয়ার অভিযোগ, এই আগ্রাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেন। বেলগোরাড হামলার কয়েকদিন আগে এই অঞ্চলের উপর নজরদারি চালায় ম্যাক্সার বলে একটি মার্কিন কমিউনিকেশন সংস্থার উপগ্রহ জিও-আই-১ । সেই তথ্য ম্যাক্সারের ওয়েবসাইটেও রয়েছে। রুশ গোয়েন্দা বিভাগের অভিযোগ, ম্যাক্সার মূলত মার্কিন সেনার সহযোগী সংস্থা। এবং ম্যাক্সারের দেওয়া তথ্যকে হাতিয়ার করেই হামলার ছক কষেছে ইউক্রেন। একইসঙ্গে রবিবারের হামলায় মার্কিন হামভি এবং ম্যাক্স প্রো সাঁজোয়া গাড়ি ব্যবহৃত হয়েছে। এর থেকেই গোটা ঘটনার সঙ্গে মার্কিন সেনার যোগ স্পষ্ট।
Comments :0