Israel Palestine War

মাটির যুদ্ধের জন্য তৈরি বিধ্বস্ত গাজা

আন্তর্জাতিক

অবিরাম ইজরায়েলী বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত গাজা বিপর্যয়ের প্রায় শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। তৈরি হচ্ছে ইজরায়েলের বাহিনীর আগ্রাসনের জন্য। এখনও পর্যন্ত ২৮০৮ জন প্যালেস্তিনীয়ের দেহ উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু উদ্ধারকারীদের হিসেব, আরও এক হাজার দেহ বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে। ১১ হাজার মানুষ জখম হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন ২৫৪জন। এযাবৎ নিহতদের ৬৪ শতাংশই মহিলা ও শিশু। রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে জানানো হয়েছে, গাজার হাসপাতালে প্রতি মিনিটে একজন করে আহত মানুষ আসছেন। অথচ হাসপাতালে বিদ্যুৎ প্রায় নেই, জল নেই, ওষুধ নেই। চিকিৎসা সামগ্রী গাজায় পৌঁছোনোর বারংবার আবেদনেও অনুমতি দেয়নি ইজরায়েল। রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থার তরফে এদিন বলা হয়েছে, গাজাকে ‘শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হচ্ছে’। 
ইজরায়েল গাজা সীমান্তে হাজার হাজার সেনা ও অস্ত্র মজুত করলেও সোমবার ভারতীয় সময় রাত পর্যন্ত আক্রমণ শুরু করেনি। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, গাজার প্রতিরোধের শক্তিকে তলানিতে পৌঁছে দিয়ে এই আক্রমণ চালানো হবে। সেই কারণেই গাজায় ন্যূনতম মানবিক সহায়তা দেবার নিয়মও লঙ্ঘন করছে ইজরায়েল। যদিও ইজরায়েলের সামরিক আক্রমণের চেহারা কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইজরায়েলের সেনারা গাজায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই এই সংঘাত ‘শহরের যুদ্ধে’ পরিণত হবে। সেখানে শক্ত প্যালেস্তিনীয় প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। মুখোমুখি যুদ্ধে বিশেষ করে হামাসের বাহিনীর সামনে দাঁড়ানো খুব সহজ কাজ নয়। ইতিমধ্যেই ইজরায়েলের গণহত্যার অভিযান আন্তর্জাতিক ভাবে ধিক্কৃত হচ্ছে। পরিস্থিতি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে আন্দাজ করে এখন সুর বদল করেছে মূল মদতদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বিদেশ সচিব ৬টি আরব দেশ সফর করে ফের ইজরায়েলে এসেছেন। আরব দুনিয়ার নেতারা তাঁকে স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, প্যালেস্তিনীয়দের ওপরে এই আক্রমণ মেনে নেওয়া হবে না। পরিস্থিতি বুঝেই স্বয়ং মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ইজরায়েলে আসছেন বলে খবর। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাইডেন মন্তব্য করেছেন ইজরায়েল যদি গাজা দখল করতে যায় তাহলে ‘বিরাট ভুল’ করবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, গাজা প্যালেস্তিনীয় কর্তৃপক্ষের শাসনেই থাকা উচিত। ইজরায়েলের উচিত ওষুধ, খাদ্য, জল সরবরাহ করতে দেওয়া। মার্কিন প্রশাসনের এই মনোভাবে ইঙ্গিত মিলছে, পরবর্তী আক্রমণের আগে ইজরায়েলকে ‘দু-বার ভাবতে’ বলছে ওয়াশিংটন। তবে ইজরায়েলের সংসদে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভাষণে মনোভাব বদলের কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। বরং যুদ্ধজিগির তুলে তিনি বলেছেন, গোটা দেশে আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স আমাদের পিছনে রয়েছে। 
মার্কিন বিদেশ দপ্তর জানিয়েছে, ইজরায়েলে এযাবৎ ৩০ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। ১৩জন এখনও নিখোঁজ। 
ইজরায়েল জানিয়েছে, হামাসের হাতে ১৯৯ জন বন্দি হয়ে আছেন। ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে তেহরানে জানানো হয়েছিল, ইজরায়েল বিমানহানা বন্ধ করলে হামাস এই বন্দিদের মুক্তি দেবে। কিন্তু হামাসের তরফে এই সংবাদের স্বীকৃতি মেলেনি। হামাস প্রথম থেকেই বলছে, ইজরায়েলের জেলে আটক কয়েক হাজার প্যালেস্তিনীয় বন্দিদের মুক্তির বিনিময়েই এই বন্দিরা ছাড়া পেতে পারেন। একটানা ইজরায়েলী আক্রমণের পরেও হামাস যে প্রত্যাঘাতে যথেষ্ট সক্ষম তা এদিন আবার প্রমাণ হয়েছে জেরুজালেম লক্ষ্য করে রকেট হানায়। ইজরায়েলের সংসদের অধিবেশন চলার সময়েই জেরুজালেমে রকেট হানার সাইরেন বেজে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সহ সাংসদরা অধিবেশন বন্ধ রেখে সুরক্ষা আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হন। তেল আভিভেও রকেট হানা হয়েছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment