আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে চার বছরের স্নাতকের পাঠ্যক্রম শুরু করা অনুমোদন দিল শিক্ষা দপ্তর। কেন্দ্রের নয়া শিক্ষা নীতি অনুযায়ী এই পাঠ্যক্রম চালু হতে চলেছে রাজ্য। বুধবার টুইট করে একথা জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষা মন্ত্রী টুইটারে লিখেছেন যে, স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে চলে রাজ্যের প্রায় ৭ লক্ষ পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই তার কথায় তিন বছর স্নাতকের পাঠ্যক্রম রেখে দেওয়া ছাত্র বিরোধী সিদ্ধান্ত।
শিক্ষা দপ্তরের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার পর গণশক্তি ডিজিটালের পক্ষ থেকে এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কা চার বছরের ডিগ্রি কোর্সের ফলে উচ্চ-শিক্ষায় ড্রপ আউট আরও বেশি বাড়বে। আমরা সরকারের কাছে দাবি রেখে ছিলাম তিন বছরের পাঠ্যক্রম রেখে একবছর অপশানাল করার জন্য। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর তা মানেনি। গত কয়েক বছরে উচ্চ-শিক্ষায় যে হারে ড্রপ আউট বেড়েছে তা এই রাজ্য সরকার সামলাতে পারেনি।’’
২০২০ সালে কেন্দ্রের নয়া শিক্ষা নীতি সংসদে কোন আলোচনা ছাড়াই পাশ করার পর তার বিরোধীতা করে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে চার বছরের পাঠ্যক্রম এবং নয়া শিক্ষা নীতির বিভিন্ন দিক কি ভাবে প্রয়োগ করা যায় তার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় রাজ্যের পক্ষ থেকে। শিক্ষা দপ্তরের সাফাই এই কমিটির সুপারিশ মেনেই তারা চার বছরের পাঠ্যক্রম চালু করতে চলেছে। তবে শিক্ষা দপ্তরের এই সিদ্ধান্তের অনেক আগেই সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে তারা জাতীয় শিক্ষা নীতি মেনে চার বছরের স্নাতকের পাঠ্যক্রম চালু করতে চলেছে। নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে তারা লিখেছেন যে, তিন বছর স্নাতক স্তরে পড়ার পরে দু’বছরের জন্য স্নাতকোত্তরের জণ যেমন পড়া যাবে তেমন ভাবে চার বছরে স্নাতক হয়ে এক বছরে স্নাতকোত্তর কেউ চাইলে পড়তে পারবে। আবার নয়া শিক্ষা নীতি অনুযায়ী চার বছরে অনার্স সহ স্নাতক পাশ করার পর যে কেউ পিএইচডির জন্য আবেদন করতে পারবেন। জাতীয় শিক্ষা নীতিতে মাল্টিপেল এন্ট্রি এক্সিটের কথা বলা থাকলেও সেন্ট জেভিয়ার্স তা উল্লেখ করেনি নির্দেশিকায়।
উল্লেখ্য কেন্দ্রের শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার জানিয়ে ছিল যে তারা রাজ্যের জন্য বিকল্প শিক্ষা নীতি চালু করবে। সেই জন্য একটি কমিটিও তারা তৈরি করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই কমিটির কোন রিপোর্টে সরকার সামনে আনতে পারেনি।
চার বছরের স্নাতক কোর্স চালুতে ক্ষোভ জানিয়েছে রাইট টু এডুকেশন ফোরামও। শিক্ষাবিদদের এই মঞ্চ বলেছে, শিক্ষাবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করল রাজ্য সরকার।
ফোরাম বলেছে, কেবল একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে চালু করে দেওয়া হয়েছে স্নাতক স্তরের চার বছরের কোর্স। সেই বিবৃতিতে কোনও সই বা স্ট্যাম্পও নেই। নতুন ব্যবস্থা কার্যকরী করবার পরিকাঠামো আছে কিনা, ল্যাবরেটরি, শ্রেণিকক্ষ, অতিরিক্ত শিক্ষকের যোগান থাকবে কিনা - এসব গুরুতর প্রশ্নের কোন উত্তর দেওয়ার দায় নেই সরকারের।
ফোরামের পক্ষে ঈশিতা মুখার্জি, শুভোদয় দাশগুপ্ত, কেশব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে নয়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক স্বার্থে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকার একসাথে শিক্ষা সংকোচন এবং শিক্ষায় নৈরাজ্য নিয়ে এলো।’’
Comments :0