Knock out match india england match

নকআউটের বাধা টপকাতে ঐক্যবদ্ধ রোহিতরা

খেলা

ন’বছর হয়ে গিয়েছে, ভারতের ক্যাবিনেটে কোনও আইসিসি ট্রফি নেই। শেষবার মেন ইন ব্লু ২০১৩ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে। এরপর তাঁরা যে ক’টি আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলেছে, খালি হাতে ফিরেছে। হয় সেমিফাইনাল, নয় ফাইনাল গিয়ে হারের মুখ দেখতে হয়েছে। সঙ্গী হয়েছিল একরাশ হতাশা। নকআউট ম্যাচগুলিই বড় কাঁটা। সেই গেরো থেকেই বেরোতে পারছে না দল। 
নকআউটে উঠে ক্রমাগত হারার ফলে, ভারতের ঘাড়ে কার্যত লেগে গিয়েছে ‘চোকার্স’ তকমা। সেই তকমাই ঘোচানোর পালা এবার রোহিতের দলের সামনে। চলতি আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তাঁদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। এই দলকে হারিয়েই শেষবার ভারত কোনও আইসিসি ট্রফি জিতেছিল। এবার ভারত আত্মবিশ্বাসী। একইসঙ্গে সতর্ক। অতীতের ভুল না করার ব্যাপারে। ২০১৪’র পর ফের টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার হাতছানি তাঁদের দলের সামনে। এই ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরিসংখ্যান ভারতের পক্ষেই। ২২ বারের সাক্ষাতে ১২ বার জয়ী। টি-২০ বিশ্বকাপে দু’বার। 
এবার অস্ট্রেলিয়ায় কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের অষ্টম সংস্করণে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স এখনও অবধি বেশ ভালো। গ্রুপ পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ বাদ দিলে প্রতিটি ম্যাচ তাঁরা জিতেছে। টি-২০ ক্রিকেটে ধারাবাহিক থাকা সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার, কিন্তু ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছে, অধিনায়ক রোহিত শর্মা বাদে। তিনি কিন্তু একপ্রকার ব্যর্থ। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে অর্ধশতরান ছাড়া বলার মতো রান পাননি। তবে আন্তর্জাতিক টি-২০’তে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোহিতের রেকর্ড ভালো। বেশ কয়েকটি ম্যাচের রং বদলানো ইনিংস রয়েছে তাঁর। সেই পারফরম্যান্সগুলিই হয়তো সেমিফাইনালে রোহিতের রানে ফেরার বাড়তি প্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। স্যাম কারান, মার্ক উডদের ছন্দ ভাঙতে ভারতীয় অধিনায়কের জ্বলে ওঠাটা ভীষণ জরুরি। অন্যদিকে, রাহুল টানা দু’টি ম্যাচে রান করে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা কমিয়েছেন। যদিও এবার তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ বড় ম্যাচে রান না পাওয়ার তকমা ঘোচানোর। 
চলতি বিশ্বকাপে ভারতের দুই ব্যাটিং স্তম্ভ, যারা প্রায় প্রতিটি ম্যাচে রান করে দলকে টেনে নিয়ে এসেছেন শেষ চার অবধি। বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদব। দু’জনে এমন ব্যাটিং করছেন, তাঁদের মধ্যে ধারাবাহিকতা রাখার পরীক্ষা চলছে যেন! অ্যাডিলেড আবার বিরাট কোহলির ‘ফেভারিট’ মাঠ। পরিসংখ্যান তো তাই বলে। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে একাধিক মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছেন তিনি। এছাড়াও এই চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ম্যাচে অর্ধশতরান ছিল তাঁর। সেমিফাইনালে ডনের মাঠেই সামনে পাচ্ছেন ইংল্যান্ডকে। বিরাটের কাছে দল চাইছে, গ্রুপ লিগে পাকিস্তান ম্যাচের মতো একটা ইনিংস। এর আগে, দু’বার টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছিলেন। দু’বারই তাঁর ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটেছে। প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে একাই জিতিয়েছিল। ২০১৬ সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন, শেষ অবধি ভারতের জেতা আর হয়নি। বুধবার, অনুশীলনের সময় হালকা চোট পেয়েছিলেন। তবে, সমস্যা কিছু নেই। খেলছেন বিরাট। 
আর সূর্যকুমার! তিনি রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। দলের তাঁর উপর প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছে। প্রতিটি প্রতিপক্ষ তাঁকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতে বসছে। সূর্যকে আটকানোর ছক কষছে ইংল্যান্ড। জানিয়েছিলেন বেন স্টোকস।  ইংল্যান্ডের স্যাম কারান এই বিশ্বকাপে স্লগ ওভারে তাঁর অধিনায়কের ‘গো-টু’ ম্যান। আঁটোসাঁটো বোলিং করে সমীহ আদায় করেছেন তিনি। সেমিফাইনালে তাঁর সঙ্গে সূর্যের জোর টক্কর হতেই পারে। কারানকে সমস্যায় ফেলে দেবেন সূর্য, বলছেন অনিল কুম্বলে। এদিকে, হার্দিক ব্যাট হাতে সেরকম কিছু করে উঠতে না পারলেও বল হাতে নিয়ম করে উইকেট তুলেছেন। আদর্শ অলরাউন্ডারের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। জিম্বাবোয়ে ম্যাচ খেলেছিলেন ঋষভ। ব্যাট হাতে দলকে ভরসা দিতে পারেননি। বুধবার অ্যাডিলেডের নেটে বহুক্ষণ ব্যাটিং করতে দেখা গেল তাঁকে। তারপর কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা চালিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর দু’টি শতরান রয়েছে। বিপক্ষে রয়েছে আবার আদিল রশিদ। তাই, দীনেশ কার্তিকের জায়গায় ঋষভের খেলার সম্ভাবনা প্রবল। 
পাঁচ বোলারেই নামছে ভারত, এমনটাই খবর। অক্ষরকেই খেলানো হবে। পাওয়ার প্লে’তে ভুবনেশ্বর কুমার ও অর্শদীপ সিং নিয়মিত উইকেট নিয়েছেন। বিশ্বকাপের আগে ভুবির পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বুমরার অনুপস্থিতিতে সেরাটা বেরিয়ে এসেছে ভুবির মধ্যে থেকে। চলতি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ডট বল করেছেন তিনি। সেমিফাইনালে পাওয়ার প্লে’তে তাঁর বোলিং দু’দলের মধ্যে ফারাক গড়ে দিতে পারে। বাটলারের বিরুদ্ধে ভুবির রেকর্ড ঈর্ষণীয়। পাঁচবার আউট করেছেন তাঁকে। এখানেও পাওয়ার প্লে’তে নিজের ধারা বজায় রাখতে চাইবেন অভিজ্ঞ ভুবি। তাঁর দোসর মহম্মদ সামি ও তরুণ অর্শদীপ। তবে অ্যাডিলেডের ছোট মাঠে পরে বোলিং করতে হলে ইংল্যান্ডের পাওয়ার হিটারদের আটকে রাখা মুশকিল হতে পারে ভারতীয় বোলারদের পক্ষে। সেক্ষেত্রে, দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টস বড় ভূমিকা নিতে পারে। 
অন্যদিকে, ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হতে দেব না, সেমিফাইনালে নামার আগে এমনই হুঙ্কার দিয়েছেন অধিনায়ক জস বাটলার। আরও বলেছেন, ‘এটা যাতে না হয় তার জন্য মরিয়া চেষ্টা করব আমরা।’ সুতরাং বাটলারের কথাতেই পরিষ্কার  তাঁরা ভীষণ ফোকাসড। এমনিতেই ইংল্যান্ড সাদা বলে ক্রিকেটে দুর্ধর্ষ দল। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। ম্যাচ উইনারের সংখ্যাও অনেক। বাটলার, হেলস, স্টোকস, কারান, উড সবারই ম্যাচ একক দক্ষতায় জেতানোর ক্ষমতা রয়েছে। যদিও ব্যাটিংয়ে গ্রুপ পর্যায়ে কেউই সেভাবে ধারাবাহিকভাবে রান পায়নি। ভালো বোলিং করেছেন কারান ও উড দু’জনেই। ব্যবহৃত পিচ অতীতে ভুগিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। বাটলার এদিন বললেন, ‘পিচ নিয়ে কোনওরকম দুশ্চিন্তা আমরা করছি না। বাইশ গজ ভালো। টসও কোনও ফ্যাক্টর হবে না।’ মালান খেলবেন না একপ্রকার নিশ্চিত। তাঁর জায়গা ভরাট করতে তৈরি ফিল সল্ট। ২০১০’র চ্যাম্পিয়নরা গত দু’টি টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল, এবারে নিশ্চয়ই বাটলাররা চাইবেন না সেমিফাইনালে হেরে অ্যাডিলেড থেকে লন্ডনের বিমান ধরতে। 
(ভারত:ইংল্যান্ড)
(ম্যাচ শুরু দুপুর ১.৩০)
 

Comments :0

Login to leave a comment