Israel Palestine War

গাজায় হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব ইজরায়েলের

আন্তর্জাতিক

গাজার আল-শিফা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়ল ইজরায়েলের সেনারা। হাসপাতালের মধ্যে অন্তত তিনটি ট্যাঙ্ক নিয়ে ঢুকে বেশ কয়েকটি বিভাগ গুলি করে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। রোগীদের টেনে নামানো হয়েছে শয্যা থেকে। ভারতীয় সময় বুধবার রাত পর্যন্ত হাসপাতালের মধ্যেই রয়েছে ইজরায়েলী সেনারা। প্রায় ২০০জনকে তারা আটক করেছে। তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগের কর্মী এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আশ্রয় নেওয়া গৃহহীন মানুষ রয়েছে। ৩০জনকে চোখে কাপড় বেঁধে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তছনছ করা হয়েছে সার্জারি, শিশু বিভাগ। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের গুদাম শুরুতেই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 
হিটলার জমানায় পোল্যান্ডে এবং চিলিতে সামরিক অভ্যূত্থানের পরপরই হাসপাতালে আক্রমণের এমন ঘটনা ঘটেছিল। সাম্প্রতিক ইতিহাসে আর কোনও নজির নেই। রাষ্ট্রসঙ্ঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘হাসপাতাল যুদ্ধক্ষেত্র হতে পারে না।’ কিন্তু ইজরায়েল বেপরোয়া।  
অক্টোবরে সংঘাত শুরু হবার পর থেকেই গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আল-শিফা ইজরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বারংবার ওই হাসপাতাল ফাঁকা করে দেবার হুমকি আসে। হাসপাতালের দরজায় যুদ্ধবিমান বোমা ফেলে। গত তিন-চারদিন ধরে হাসপাতালকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বাইরে থেকে হাসপাতাল লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে। চিকিৎসা কার্যত বন্ধ। মঙ্গলবারই ভেঙে দেওয়া হয়েছিল কার্ডিয়াক বিভাগ। 
বুধবার ভোরে ইজরায়েলী সেনারা তিনটি ট্যাঙ্ক নিয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢোকে। তারা গুলি চালাতে চালাতেই এগয়। প্রবেশপথে এবং জরুরি বিভাগের সামনে ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে দেওয়া হয়। মেগাফোন নিয়ে ইজরায়েলী সেনারা যুবকদের ‘আত্মসমর্পণ’ করার নির্দেশ দিতে থাকে। বাইরে থেকে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ততক্ষণে হাসপাতালের পিছনে বা বাইরে চলে গেছেন। ‘যুবক’ বলতে তরুণ আহতদেরই বোঝায় সেনারা। সার্জারি বিভাগে ঢুকে পার্টিশন ছিঁড়ে ফেলতে থাকে। অস্ত্রোপচারের টেবিল ভেঙে দেয়। শিশু রোগীদেরও গুলি করার ভয় দেখিয়ে শজ্যা থেকে নামিয়ে দেয়। প্রবঈন রোগীদের বেধড়ক মারা হয়। হাসপাতালের বেসমেন্টে ঢুকে তারা একের পর এক লোক ও রোগীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে। গুরুতর জখমদেরও একতলায় নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হাসপাতালের মধ্যে থাকা সাংবাদিক জিহাদ আবু শানাদ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বর্বর পদ্ধতিতে ডিজ্ঞাসাবাদের নামে অত্যাচার চলছে। সমগ্র হাসপাতাল ইজরায়েলী সেনাদের দখলে। কেউ কোথাও নড়তেও পারছেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েই সেনারা ঢুকেছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। 
ইজরায়েল এই অভিযানের অজুহাত হিসাবে সামনে এনেছে হাসপাতালে হামাসের কম্যান্ড থাকার তত্ত্ব। ইজরায়েলের তরফে বারংবার বলা হচ্ছে, ওই হাসপাতালের মধ্যে হামাস রয়েছে। সেনারা এদিন প্রত্যক ঘর, বারান্দা, করিডর, আইসিইউ-তে তথাকথিত ‘তল্লাশি’ অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু ইজরায়েলী রেডিও জানিয়েছে, সেনারা হামাসের কোনো অস্তি্ব বা প্রমাণ খুঁজে পায়নি। মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেডিটেরিনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ইজরায়েলী সেনারা এরপর কোনও দৃশ্য তৈরি করবে। হাসপাতালে তারা ছাড়া কোনও তৃতীয় পক্ষ নেই। হামাসের ‘অস্তিত্ব’ প্রমাণে যে কোনও ঘটনা ঘটানো হতে পারে। হামাস এই আক্রমণের জন্য সরাসরি দায়ী করেছে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেনকে। বাইডেন মন্তব্য করেছিলেন, মার্কিন গোয়েন্দারাও নাকি হাসপাতালের ভেতরে হামাসের পরিকাঠামোর সন্ধান পেয়েছে। তার পরেই ইজরায়েল এই আক্রমণ চালায়। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মঙ্গলবারই কথা বলেছেন বাইডেনের সঙ্গে। হামাস জোরের সঙ্গেই জানিয়েছে, হাসপাতালে তাদের কোনও উপস্থিতি নেই এবং কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না। 
এই বর্বরতার মধ্যেও শেষ যোগাযোগ পর্যন্ত হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁরা রোগীদের ছেড়ে কোথাও যাবেন না। ‘শেষ পর্যন্ত থাকব’, হাসপাতালের চিকিৎসার অধিকর্তা বলেছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment