রাত পোহালেই ঝাড়খণ্ড বিধানসভার প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। দ্বিতীয় ও শেষ দফার এবং মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচন ২০ নভেম্বর। এই দুই রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য আরএসএস-বিজেপি শুধু মরিয়াই নয় একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্বাচনী প্রচারে খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের কথায় বিজেপি’র নানা স্তরের নেতাদের নিয়ে শকুনের ঝাঁকের মতো আকাশে উড়ছে হেলিকপ্টার। এমন ঢালাও খরচ ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে বিরল। কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চাননি মোদী-শাহরা। তাই দুই রাজ্যে দলকে জেতানোর মূল দায়িত্ব দু’জনেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কিন্তু জেতার বা জেতানোর দায়িত্ব নিলেই তো জেতানো যায় না। ভোট দেবেন জনগণ। তাঁরাই ঠিক করবেন কে জিতবে আর কে হারবে। দুই রাজ্যের যে রাজনৈতিক বাস্তবতা তাতে বিজেপি’র জেতার আশা নেই বললেই চলে। কিন্তু বাস্তব যাই হোক হিন্দুতববাদী স্বৈরাচারীরা সব সময় যে কোনও উপায়েই হোক ক্ষমতার দখল চায়। তাই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে, ধর্মীয় আবেগতাড়িত করে এবং জাতপাত বিভাজনের গোলোক ধাঁধায় মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভোট কুড়াতে চায়। কখনো মুসলিম ভীতি, কখনো বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের ভীতি দেখিয়ে দলিত, আদিবাসী ও ওবিসি’দের ত্রাতা সাজার চেষ্টা করছে। কখনো দলিত আদিবাসী ওবিসি’দের সংরক্ষণ কেড়ে নেবার ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কল্পিত মিথ্যার নির্মাণ। একাজে মোদী ও শাহ রীতি মতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কে কত নির্জলা মিথ্যা আওড়াতে পারে।
একটা আরএসএস’র প্রচারক, এখন বিজেপি’র সর্বাধিনায়ক মোদী যে মতাদর্শে বিশ্বাস করেন সেখানে নারীর সম্মান, মর্যাদা, সমানাধিকারের সুযোগ নেই। বিজেপি যে হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে সেখানে সামাজিক ও পারিবারিক ব্যবস্থা হবে মনুবাদ অনুসারী। অর্থাৎ নারীর স্থান পরিবারের অন্দরে। স্বামী ও পুরুষের সেবাযত্ন করা, সন্তানের জন্মদান ও লালন-পালন করাই নারীর একমাত্র কাজ। মোদী-শাহরা এই মতাদর্শেই বিশ্বাসী। অথচ ভোটের জন্য এই মতাদর্শকে গোপন অ্যাজেন্ডায় আড়াল করে নারী দরদি হবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। তাঁদের বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও স্লোগান ইতিমধ্যেই নিকৃষ্ট ভাঁওতায় পরিণত হয়েছে।
আরএসএস-বিজেপি’র অভীষ্ট মনুবাদী সমাজে উচ্চবর্ণেরই আধিপত্য। সেখানে দলিত-আদিবাসী-ওবিসি’দের কোনও জায়গা নেই। অথচ ক্ষমতার লোভে শুধু ভোটে জেতার জন্য তাদের দলিত-আদিবাসী-ওবিসি প্রেম উথলে উঠছে। আসলে ওবিসি ভোটই বিজেপি’র পথের কাঁটা। গত লোকসভা নির্বাচনে ওবিসি ভোটই বিজেপি’র পরাজয়ের রাস্তা সহজ করে দিয়েছিল। আর এটা সম্ভব হয় বিরোধীদের জাতভিত্তিক জনগণনার দাবিকে সামনে রেখে জোরালো প্রচারের ফলে। বিহারে জাত গণনার ফলাফল থেকে দেখা গেছে ওবিসি জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। তাই সারা দেশে এই গণনার দাবি ন্যায্যতা পেয়েছে। কংগ্রেস চায় সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা ৫০ শতাংশের বেশি করে সমাজের সব পশ্চাদপদ অংশের জন্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে। এই দাবির বিরোধিতা করতে ব্যর্থ হয়ে মোদীরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। প্রচারে পাল্লা দিয়ে আবোল তাবোল প্রলাপ বকছেন মোদী-শাহরা। বলছেন কংগ্রেস নাকি সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেবে। কখনো বলছেন ওবিসি’দের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়ে দেবে। অথচ কে না জানে সঙ্ঘ পরিবার সংরক্ষণের বিরোধী। ব্রাহ্মণ্যবাদকে সুরক্ষিত রাখতে পশ্চাদপদদের জন্য কোনোরকম সংরক্ষণ তারা চায় না। মণ্ডল কমিশনের সময়ও বিরোধিতা করেছিল বিজেপি। আজও তারা চায় না জাতভিত্তিক জনগণনা। কারণ তাতে উচ্চবর্ণের স্বার্থ হানি হতে পারে। অথচ ভোটে ভরাডুবির ভয়ে সেটা প্রকাশ্যে বলতে পারছে না। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রচার করে ওবিসি ভোট পাবার চেষ্টা করছে। যদি ওবিসি ভোটে থাবা বসিয়ে দুই রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরতে পারে তাহলে জাতগণনা বন্ধ করে দেবে। সমাজের পশ্চাদপদ খেটে খওয়া মানুষের পায়ে কুড়োল মেরে উচ্চবিত্তদের আরও বেশি বেশি সেবা করবে।
Jharkhand Maharashtra Election
সঙ্ঘ পরিবার সংরক্ষণ বিরোধী
×
Comments :0