MGNREGA

দলীয় ফরম পূরণ চলছে, ভোটের আগে টাকার গন্ধে মশগুল তৃণমূল

রাজ্য জেলা

একশো দিনের বকেয়া টাকা ফেরতের ফরম পূরণ শুরু করে দিয়েছে দলের কর্মীরা। জি প্লটের উপ প্রধান, তৃণমূল নেতা আশিস বর্মণের এখন আশা,‘‘আমরা যা হিসাব করেছি, তাতে মজুরি বাবদ আমাদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। আর পাওয়ার কথা অন্তত ২৫০০ জনের। এবার আপনিই হিসাব করুন একেক জনের অ্যাকাউন্টে কত টাকা ঢুকবে।’’
পাটিগণিতের হিসাব বলছে, লোকসভা নির্বাচনের আগে জি প্লটের আড়াই হাজার ‘নাম’-এর অ্যাকাউন্টে ঢুকবে প্রায় প্রায় ১৪ হাজার টাকা করে। অর্থাৎ তৃণমূল যাঁদের তালিকা বানাচ্ছে, তাঁদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে অন্তত ১৪ হাজার করে টাকা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। 
এ’ শুধু সুন্দরবনের একটি দ্বীপের ছবি নয়। বঙ্গোপসাগর লাগোয়া পাথরপ্রতিমার ওই একটি পঞ্চায়েতের মতোই রাজ্যের প্রায় প্রতিটি পঞ্চায়েতে লোকসভা ভোটের আগে ভোটদাতাদের ‘খুশ’ করে দেওয়ার আনন্দে মশগুল তৃণমূল নেতারা। এই টাকার একটি অংশ যাবে তৃণমূল নেতাদের পকেটে। একটি অংশ খরচ হবে লোকসভা ভোটের প্রচারে। আর গ্রামবাসীদের বলা শুরু হয়ে গেছে,‘টাকা পাইয়ে দিচ্ছি, ভোটটা দিও কিন্তু!’
তৃণমূল এই কথা বলছে, তার প্রমাণ জয়নগর থেকে জলপাইগুড়ি— নানা জায়গায় আছে। কোন দুটি আর্থিক বছরের বকেয়া মজুরি মেটাবে রাজ্য? এই প্রসঙ্গে জানতে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। তিনি ফোন তোলেননি। তবে দপ্তরের অন্যতম রাষ্ট্রমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেছেন,‘‘২১-২২ এবং ২২-২৩ আর্থিক বছরের মজুরি দেওয়া হবে।’’ বিভ্রান্তির জায়গা হলো, ২০২১-২২-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রের টাকা পেয়েছে রাজ্য। দপ্তরের এক অফিসারের কথায়,‘‘আমাদের বলা হয়েছে অল পেন্ডিং পেমেন্ট। সেখানে ২০-২১-ও কিছু থাকতে পারে।’’
সর্বশেষ রাজ্য বাজেটে মমতা ব্যানার্জি ৩৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন একশো দিনের বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। যে টাকা রাজ্যের দেওয়ার কথা নয়। দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। তাছাড়া, গত দু’বছর রাজ্যে রেগার টাকা বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তৃণমূল দেদার চুরি করেছে, এই অভিযোগেই রেগার টাকা বন্ধ করেছে তারা। কিন্তু রেগায় রাজ্যে চুরি হচ্ছে, বামফ্রন্ট এই অভিযোগ বারবার করেছে। বিজেপি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। চুরি করতে দিয়েছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে, তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্যদের বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সামান্য— কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। অথচ কাদের টাকা বকেয়া, সেই তালিকা যখন করা হচ্ছে, তখন তা করছে তৃণমূল।
কেন?
নন্দীগ্রামের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ বিধান মণ্ডল বুধবার বলেছেন,‘‘আমার এলাকায় কে কাজ করেছে, কতদিন করেছে, জানবে কে? আমরাই তো? সরকারের অফিসার, কর্মী জানবে? তাই আমাদের তালিকাই হবে সঠিক তালিকা।’’ সেই অনুসারে নন্দীগ্রামেও তিন জায়গায় শিবির করে ফরম পূরণ করছে মমতা ব্যানার্জির দল। অথচ এই কাজ করার কথা সরকারের।
রেগার মজুরি বকেয়া যাঁদের, সেই গ্রামবাসীদের নামের তালিকা তৈরির সরকারি কাজ তৃণমূল কর্মীরা করছে দলেরই একটি ফরমের মাধ্যমে। সেই ফরমের উপরে এবং নিচে তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতীক। বাঁদিকে মমতা ব্যানার্জি এবং অভিষেক ব্যানার্জির ছবি। মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী, কিন্তু অভিষেক ব্যানার্জির ছবিও রাখা হয়েছে। ফরমে গ্রামবাসীর নাম, বয়স, জবকার্ড নম্বর, ঠিকানা, লিঙ্গ পরিচয়ের পাশাপাশি লিখে নেওয়া হচ্ছে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য। 
এই ফরম, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সহায়তা পত্র’, তা পূরণ করে জমা দেওয়া হচ্ছে আধিকারিকদের কাছে। 
কত টাকা পাবে একেকটি পঞ্চায়েত এই ক্ষেত্রে? তৃণমূল হিসাব করে ফেলেছে। জি প্লট পঞ্চায়েতের হিসাব, মেটিরিয়াল কস্ট (রেগার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর খরচ), প্রশাসনিক খরচ এবং শ্রমের মজুরি বাবদ তারা পাবে প্রায় ৮কোটি টাকা। তার মধ্যে শুধু মজুরির খরচ হবে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো। এই হিসাব তারা করল কী করে? উপপ্রধান নিখাদ পাটিগণিত বুঝিয়ে এদিন বলেন,‘‘আরে, আমরা ছাড়া কে জানবে? কাজ তো আমরাই করিয়েছি। মাস্টার রোল তো আমরাই বানিয়েছি। আমার পঞ্চায়েতে ওই দু’বছরে মোট যা মাস্টার রোল হয়েছে, তাতে প্রায় ৭০০০ জনের নাম আছে। একেক জনের তিনটি কিংবা চারটি মাস্টার রোলে থাকতেই পারে। একেকজন তো তিন, চার বার কাজ করেছে বলেই তাদের নাম তিন, চারটি মাস্টার রোলে থাকবে। তাই আপনি ৭০০০-কে ৩ দিয়ে ভাগ করুন। দাঁড়াবে ২৩০০-র কিছু বেশি। সব মিলিয়ে ওই আড়াই হাজারই হবে। এবার আপনি ভাগ করে নিন।’’
অর্থাৎ গড়ে একেকজন ১৪ হাজার টাকা করে পাবেন। 
আনন্দে আটখানা তৃণমূল!
ছবি-ফরমের ছবি।

 

Comments :0

Login to leave a comment